বাংলাদেশের বরিশালে রয়েছে গুপ্ত যুগের পোড়ামাটির নিদর্শন
বরিশাল বিভাগীয় জাদুঘরের প্রদর্শনী পরিকল্পনার শুরুতে বরিশাল বিভাগের ভৌগোলিক ও প্রাকৃতিক পরিচিতি দেখানো হয়েছে। বরিশাল নামের নতুন জনপদটিকে জালের মতো ছড়িয়ে আছে অসংখ্য নদী। প্রাকৃতিক জীববৈচিত্রে কিংবা মানস গঠনে এসব নদ-নদীর রয়েছে তাৎপর্যপূর্ণ প্রভাব। সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রেও নদ-নদীগুলির প্রচ্ছন্ন প্রভাব প্রতিফলিত হয়েছে।
বরিশাল অসংখ্য কীর্তিমান ব্যক্তির উর্বর ভূমি হিসেবে পরিচিত। বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবিস্মরণীয় অবদান রেখেছেন এমন মানুষের সংখ্যা অসংখ্য। বরিশাল হয়ে উঠেছে গুণীজনের স্মৃতিধন্য। এখানে জন্মেছেন মীননাথ, কবি বিজয়গুপ্ত, চারণকবি মুকুন্দ দাস, মহাত্মা অশ্বিনী কুমার দত্ত, শের-ই-বাংলা এ কে ফজলুল হক, শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত,জীবনান্দ দাস, বিপ্লবী দেবেন্দ্র নাথ ঘোষ, মনোরম বসু মাসীমা, ইতিহাসবিদ তপন রায় চৌধুরী, কবি কামিনী রায়, বেগম সুফিয়া কামালসহ অগণিত বিশিষ্ট মানুষ। জাদুঘরের প্রদর্শনী পরিকল্পনায় উপস্থাপিত হয়েছে বরিশাল বিভাগের কীর্তিমান ব্যক্তিবর্গের তথ্য ও আলোকচিত্র।
সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও শিল্পকল্পনায় বরিশালের রয়েছে গৌরবময় সমৃদ্ধ ইতিহাস। সুপ্রাচীন কাল থেকেই বরিশালের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও লোকশিল্পকলার বিভিন্ন নিদর্শনের সন্ধান পাওয়া যায়। এই জনপদের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে রয়েছে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও লোকশিল্পের নানা উপকরণ। বরিশাল বিভাগীয় জাদুঘরের প্রদর্শনী পরিকল্পনায় এসকল প্রাচীন নিদর্শন অংগ্রহ করে জাদুঘরে উপস্থাপন করা হয়েছে। যা থেকে দর্শনার্থীরা বরিশালের গৌরবময় সাংকৃতিক ঐতিহ্য ও লোকশিল্পকলা সম্পর্কে ধারণা পেতে সক্ষম হবেন। উপকূলীয় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী রাখাইন ও মগদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতিনিধিত্বকারী বিভিন্ন প্রাচীন নিদর্শণ জাদুঘরের গ্যালারিতে উপস্থাপন করা হয়েছে।
উপকূলীয় পরিবেশে গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র-মেঘনা নদীর পলল সঞ্চিত হয়ে গঠিত হওয়া এই ভূভাগ তুলনামূলকভাবে নবীন হলেও এখানকার সাংস্কৃতিক ও প্রত্নতাত্ত্বিক ঐতিহ্যে বৈচিত্র প্রণিধানযোগ্য। মনসামঙ্গল ও সম্পর্কিত বিভিন্ন লোকগান ও নৃত্যের উপস্থিতি, বিভিন্ন নদীকেন্দ্রিক ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক ও বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ড, লোককাহিনীর বহুত্ববিশিষ্ট এই অঞ্চল হয়ে উঠতে পারে একটি সম্ভাবনায় পর্যটন এলাকা। সমুদ্র ও নদীর সঙ্গে মানুষের জীবনের অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ককে উপজীব্য করে এই এলাকায় বিকশিত হয়েছে সাংস্কৃতিক বিভিন্ন ধরন। রয়্যানি গান থেকে শুরু করে বস্তু পূজা, নদীর বাজার থেকে শুরু করে সুফী সাধকদের স্মৃতিবাহী স্থাপনা, মনসার ঘটে থেকে ঔপনিবেশিক আমলের স্টিমার। এমন বৈচিত্রময় পরিমণ্ডলে বরিশাল জাদুঘর মানুষের সামনে বরিশাল ও বাংলাদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি তুলে ধরতে সদাতৎপর। ভবিষ্যতে এই নবীন জাদুঘরটির সংগ্রহ আরও সমৃদ্ধ হবে সকলের সহযোগিতায় এবং প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের সার্বক্ষণিক উদ্যোগে।
বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক সম্পদ ও প্রত্নতাত্ত্বিক ঐতিহ্য সমৃদ্ধ একটি ভূখণ্ড। দেশের বিভিন্ন প্রত্ন অঞ্চল থেকে সংগৃহিত প্রত্নবস্তুসহ প্রত্নতাত্ত্বিক খননে প্রাপ্তপ্রত্ন নিদর্শনসমূহ,যেমন- বিভিন্ন ধরণের তৈজসপত্র প্রদর্শন করা হয়েছে।
ঔপনিবেশিক স্থাপত্য ঐতিহ্যের স্মারক নিদর্শন হিসেবে সংরক্ষিত এই ভবনটি বাংলাদেশে নির্মিত প্রথম প্রশাসনিক ভবন। এই জাদুঘরে বরিশাল কালেক্টরেট ভবনের ইতিহাস, স্থাপত্যিক বৈশিষ্টের সংক্ষিপ্ত বিবরণ, আলোকচিত্র ও নির্মাণ উপকরণসহ বিভিন্ন ধরণের নিদর্শন উপস্থাপন করা হয়েছে।
বরিশাল বিভাগীয় জাদুঘর
(বরিশাল পুরাতন কালেক্টরেট ভবন)
ঔপনিবেশিক প্রশাসনিক ব্যবস্থার রূপান্তরের মধ্যেই বরিশালের প্রশাসনিক ও দপ্যরিক কর্মকান্ডের কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল কীর্তনখোলা নদীবন্দর সংলগ্ন কালেক্টরেট ভবনসহ আশপাশের আরও কয়েকটি স্থাপনা। প্রায় বিগ্ন ও পরিত্যক্ত দোষ থেকে উদ্দার করে সংরক্ষণ ও পরিরোক্ষনের মাদ্ধমে ওলিক আদল ঠিক রেখে এই কালেক্টরেট ভবনেই যাত্রা শুরু হয় বরিশাল বিভাগীয় জাদুঘরের। কালেক্টেরত ভবনটি তদানীন্তন লাল রঙের বহির্বর্ণ বিশিষ্ট বিভিন্ন স্থানে ও প্রশাসনিক কেন্দ্রগুলিতে নির্মিত হওয়া বিষেশ প্রকারের স্থাপনাগুলোর অন্তর্ভুক্ত। দেশীয় ও বহিরাগত বিভিন্ন স্থাপত্য শৈলী ও উপাদানের সংমিশ্রণ ঘটেছে এই ভবনের স্থাপত্যে।
১৭৭১: ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির দেওয়ানি লেভার পর লর্ড ক্লাইভ কর্তৃক বাকেরগঞ্জে দরবার অনুষ্ঠান আয়োজন।
১৮০১: জেলা সদর দফতর বাকেরগঞ্জ থেকে বরিশালে স্থানান্তর। কয়েকটি আধাপাকা প্রশাসনিক দফতর নির্মাণ।
১৮২১: ‘বরিশাল পুরাতন কালেক্টরেট ভবন’ নামের দ্বিতল ইমারত নির্মাণ।
১৯৭৯: পি.ডব্লিউ.ডি কর্তৃক বরিশাল পুরাতন কালেক্টরেট ভবন ব্যবহার অনুপযোগী ঘোষণা।
১৯৮৪: ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা।
১৯৯০: নতুন কালেক্টরেট(জেলা প্রশাসক) ভবনে তৃতীয় বারের মতো দফতর স্থানান্তর।
২০০৩: গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ভবনটি সংরক্ষিত পুরাকীর্তির প্রজ্ঞাপন জারি।
২০০৪: গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ভবনটি সংরক্ষিত পুরাকীর্তি ঘোষণার গেজেট বিনজ্ঞপ্তি জারি।
২০০৫: প্রত্নতত্ত্ব অধিদপফতরের অনুকূলে পুরাতন কালেক্টরেট ভবনের দখল ভার হস্তান্তর।
২০০৫-২০০৭: “বরিশাল পুরাতন ক্যালেটরেট ভবন সংস্কার-সংরক্ষণ ও জাদুঘরে রূপান্তর শীর্ষক কর্মসূচি ২০০৫-২০০৭” সম্পাদন।
২০১২-২০১৪: “বরিশাল পুরাতন কালেক্টরেট ভবন সংস্কার-সংরক্ষণ ও জাদুঘরে রূপান্তর শীর্ষক কর্মসূচী ২০১২-২০১৪” সম্পাদন।
২০১৫: ৮ জুন ২০১৫ খ্রিস্টাব্দ তারিখে সাংস্কৃতিক বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী জনাব আসাদুজ্জামান নূর, এমপি পুরাত কালেক্টরেট ভবনে “বরিশাল বিভাগীয় জাদুঘর” উদ্বোধন করেন।
- কবিতা:
জোনাকি
দীপঙ্কর মন্ডল
একটা জোনাকি খেলা মাঠ
পকেটে মুখ বন্ধ হাত
হেঁটে চলছে পা আর আমরা সবাই
হঠাৎই আগুন
বই খাতা ছাড়া একটা কাগজ
নীলে উড়তে চাওয়া জেদ
কি হয়েছিল কে জানে
ছেলেটা বাড়ি আসেনি
রাত গুলো লিখেছে দেওয়ালে
চুপচাপ
দীপঙ্কর মন্ডল
থামো অনেক হল
বিষ আর ভালোবাসা এক না
যার যেটা দরকার নিয়ে যাক
এক হাতের তালুতে সব নাচে না
বাইরের ঠান্ডা গরম
থার্মিটারে অনেক কিছুই ধরা পড়ে না
আলো আসলে জানলা বন্ধ করোনা
চুপচাপ বেরিয়ে এসো