শনিবারের বিকেল : 28 May, 2022

আরও পড়ুন

ডালিঝাড়া বৌদ্ধ বিহার-মন্দির কমপ্লেক্স

যশোরের কেশবপুর উপজেলার কাশিমপুর গ্রামের ডালিঝাড়া ঢিবিতে প্রত্নতাত্ত্বিক খনন পরিচালনা করে একটি পূর্ণাঙ্গ ‘বৌদ্ধ বিহার-মন্দির কমপ্লেক্স’-এর স্থাপত্যিক ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কৃত হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, এই স্থাপনাগুলি আনুমানিক খ্রি: নবম থেকে একাদশ শতকের মধ্যবর্তী সময়ে নির্মিত ও ব্যবহৃত হয়েছে। এই ধরণের স্থাপত্যকাঠামোর ধংসাবশেষ প্রথম খুঁজে পাওয়া গেল বাংলাদেশের দক্ষিণপশ্চিমাঞ্চলে। দেশের ও বিদেশের বিভিন্ন বিশেষজ্ঞদের প্রাথমিক পর্যবেক্ষণ অনুসারে এই স্থাপনাগুলির কিছু অনন্য ও ব্যতিক্রমী বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এই বৈশিষ্ট্যাবলী ভারতীয় উপমহাদেশের পূর্বদিকে এর আগে আবিষ্কৃত অন্যান্য বৌদ্ধবিহারগুলির থেকে একেবারেই ভিন্ন। এই ব্যতিক্রমী ও অনন্য ‘বৌদ্ধবিহার-মন্দির কমপ্লেক্সের’ ধংসাবশেষটি বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে মানববসতি বিস্তার ও পরিবর্তন বোঝার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেছেন বিশেষজ্ঞগণ।

বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের সরিয়ে ও জোয়ারভাতার প্রভাববলয়ের আওতাধীন গাঙ্গেয় ব-দ্বীপের সতত পরিবর্তনশীল প্রতিবেশে মানুষের বসবাস, ভূমি ব্যবহার, চাষাবাদ এবং যোগাযোগের প্রকৃতি ও রূপান্তর ব্যাখ্যা করার জন্য এই স্থাপনাগুলি আর খননে আবিষ্কৃত বিভিন্ন আলামত তাৎপর্যপূর্ণ হতে পারে। বিশেষ করে, বিহারের পশ্চিম দিকে স্থাপত্যকাঠামোর নিচের পললের মধ্যে প্রাপ্ত বিপুল পরিমান কালো রঙের চালের ডিপোজিট প্রমান করে যে, আনুমানিক খ্রি: নবম শতক বা তারও আগে এখানে মানুষ ধান চাষ শুরু করেছিল। আলোচ্য স্থাপনাটির সামগ্রিক পরিকল্পনায় বাংলাদেশ তথা ভারতীয় উপমহাদেশের পূর্বাংশের অন্যান্য বৌদ্ধ বিহারগুলোর আয়তাকার বা বর্গাকার স্থাপত্যিক পরিকল্পনায় অনুসৃত হয়েছে। এক্ষেত্রে তিনদিকে ভিক্ষুকক্ষ ও একদিকে মন্দিরসহ একটি আয়তাকার পরিকল্পনা রয়েছে। পূর্বদিকের কেন্দ্রীয় মন্দিরের পশ্চিম দিকে একটি অর্ধবৃত্তাকার প্রবেশপথ সিঁড়িসহ আবিষ্কৃত হয়েছে। মাঝখানে রয়েছে বিহারঙ্গন। বিহারঙ্গনের মধ্যে একটি বর্গাকৃতির ও প্রদক্ষিণ পথ বিশিষ্ট কেন্দ্রীয় মন্দির রয়েছে। পুরো বিহারঙ্গন ইট বিছানো সোলিং দ্বারা আচ্ছাদিত ছিল। প্রাপ্ত মৃৎপাত্রের প্রকারতাত্ত্বিক কালানুক্রম অনুসারে প্রথম কালপর্বের স্থাপত্যিক ধ্বংসাবশেষের নির্মাণ ও ব্যবহারের সময়কাল প্রাথমিকভাবে আনুমানিক খ্রি: নবম থেকে একাদশ শতক বলে অনুমান করা যায়। পরবর্তীতে বিভিন্ন কালপর্বে স্থাপত্যটি ধ্বংস, পুননির্মাণ, সংস্কার ও পুনর্ব্যবহারের মধ্য দিয়ে গেছে আনুমানিক খ্রি: ষোড়শ থেকে সপ্তদশ শতক পর্যন্ত। তবে, বিহার ও মন্দিরগুলির পরবর্তীকালীন প্রকৃতি ও ব্যবহারে কোনও বদল ঘটেছিল কি না এখনও স্পষ্ট নয়। দক্ষিণপূর্ব কোনের মন্দিরটি স্থানীয় অধিবাসীগণের গৃহ নির্মাণের কারণে ধ্বংস হয়ে গেছে। পশ্চিমবাহুর মাঝখানে একটি বড় কক্ষ রয়েছে। এই কক্ষটির পশ্চিমে একটি বৃহদাকার অভিক্ষেপ রয়েছে। পশ্চিমবাহুর মধ্যবর্তী এই অভিক্ষেপ ও বড় বিহারের প্রধান প্রবেশদ্বার ছিল।

পূর্ববাহুর দু’টি মন্দিরের উত্তর-পূর্ব কোণের মন্দিরটির পরিমাপ হল উত্তর-দক্ষিণে আনুমানিক ১৯ মিটার ও পূর্ব-পশ্চিমে আনুমানিক ২৪ মিটার। পূর্বদিকের মাঝখানের (পশ্চিম দিকের বাহুর মধ্যবর্তী প্রধান প্রবেশদ্বারের ঠিক বিপরীতে) উন্মোচিত বৌদ্ধমন্দিরটির পরিমাপ উত্তর-দক্ষিণে আনুমানিক ২১ মিটার ও পূর্ব-পশ্চিমে আনুমানিক ২৪ মিটার। মন্দির সম্বলিত ঢিবিটি চারপাশের ভূমি থেকে প্রায় ২.৫ মিটার উঁচু। উভয় মন্দিরই চারপাশে আবদ্ধ কক্ষ তৈরী করে কেন্দ্রে নির্মিত হয়েছে। এই ধরণের স্থাপনারীটি সেলুলের স্থাপনারীটি হিসেবে পরিচিত। এই অঞ্চলের নিকটবর্তী ভরতবায়না, মনিরামপুরের দমদম পীঠরস্থান ঢিবি ও ঝুড়িঝাড়া ঢিবিতে উন্মোচিত স্থাপত্য কাঠামোতেও একই রীতি লক্ষ্যণীয়। এই বিশেষ শৈলীর ও পরিকল্পনার মন্দির বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলেই এখনও পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া গেছে। বিহারটির পরিমাপ উত্তর-দক্ষিণে ৬০ মিটার এবং পূর্ব-পশ্চিমে ৯০ মিটার। বিহারের উঠোনটির পরিমাপ ৩৪.৫ মিটার (উত্তর-দক্ষিণে) ও ৪০.৬ মিটার (পূর্ব-পশ্চিমে)।

বিহারের ভেতরের দিকে এখনও পর্যন্ত উন্মোচিত দক্ষিণ ও পশ্চিম বহু সংলগ্ন বারান্দার পরিমাপ উত্তর-দক্ষিণ বরাবর ৪২ মিটার এবং পূর্ব-পশ্চিম বরাবর ৪৪.৬ মিটার। ভিতরের এই বারান্দার প্রস্থ ২.৪০ মিটার থেকে ২.৫৫ মিটার। দক্ষিণ বাহু সংলগ্ন বাইরের বারান্দার প্রস্থ ৪.৫০ মিটার। পশ্চিম দিকের বাইরের এবং প্রবেশপথ সংলগ্ন বারান্দা বা পরিসরের প্রস্থ হল ৪.৭৫ মিটার। এই বারান্দা দক্ষিণ বাহুর বারান্দার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। প্রাথমিক পযবেক্ষণের ভিত্তিতে অনুমান করা যায়, এই অঞ্চলের ভূমি আদি কাল থেকে নদী, জোয়ার-ভাটা, লবণাক্ততার প্রভাবে নানা পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে গেলেও মানুষ এখানে অভিযোজন করছে। প্রতিবেশের বদলের সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে এই অঞ্চলে বসতি বিস্তার করেছে।

কবিতা

সাবধান! রাস্তার কাজ চলছে

সন্দীপ কুমার ঝাঁ

মগজের প্রতি বাঁকে,থরে থরে জমা হচ্ছে বারুদ
চোখের উপর,ঢালাও বরফ কুচির মত শান্তি

সবাই জানে,ছায়াহীন উপত‍্যকায় গর্জে ওঠার আগে,
আসলে কিছুটা গড়িয়ে নিতে হয়।
পিছিয়ে আসতে হয় কয়েক পা
রাস্তার রাস্তায় ল‍্যাদ খাওয়া শান্ত ষাঁড়েদের
হঠাৎ ক্ষেপে ওঠার মত

আলস‍্যকে জড়িয়ে নিয়ে,অন্ধকার দেখছে-
রাষ্ট্রের জলপাই পোশাক

রাষ্ট্র কি জানে না,ভারী বুটের ওজন
মানচিত্র বেশিদিন নিতে পারে না?
ছিঁড়ে যায়,ভেঙে যায়
শেষ পর্যন্ত রক্ত স্নানে, উঠে আসতে হয়

রাতের আকাশে জমা পিস্তলের মত কালো
চকচকে ট্রিগার-এখন ধ্রুবতারা…

- Advertisement -

সম্পর্কিত খবর

- Advertisement -

ট্রেন্ডিং

close