শনিবারের বিকেল : 4 June, 2022

আরও পড়ুন

জামাইষষ্ঠীর একাল-সেকাল

জামাইষষ্ঠী নিয়ে নানান গল্পের শেষ নেই। আট থেকে আশি সব বয়সের নারীপুরুষেরাই জামাইষষ্ঠীর সঙ্গে সমধিক পরিচিত। জ্যৈষ্ঠ মাসের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠী তিথিতে দেবী ষষ্ঠীর পূজার মধ্য দিয়ে এই ব্রত পালন করা হয়। হিন্দুদের ধর্ম শাস্ত্রে মা ষষ্ঠীকে সন্তান-সন্ততির দেবী বলা হয়ে থাকে ৷ এই দিন বাড়ীর বাইরে বটের চারা পুঁতে প্রতীকী অর্থে অরণ্য রচনা করে বিশেষ পুজোর আয়োজন করা হয়। তাই একে অরণ্য ষষ্ঠীও বলা হয়ে থাকে। মূলত জ্যৈষ্ঠ মাসের শুক্লপক্ষে এই প্রথাটি পালন করা হয়ে থাকে। এবছরের জামাইষষ্ঠী পড়েছে ৫ জুন অর্থাৎ ২১ জ্যৈষ্ঠ। বিবাহিত মেয়ে এবং জামাইকে নেমন্তন্ন করে আদর-আপ্যায়ন করা এই ব্রতের রীতি। জামাইয়ের মঙ্গল কামনায় শাশুড়ি মায়েরা এই ব্রত পালন করেন। এককথায়, আদরের কন্যার সুখী দাম্পত্য জীবন কামনার উদ্দেশ্যে পালনীয় ব্রত জামাইষষ্ঠী।

  • পুজোর নিয়ম ও রীতি-নীতি

এদিন ষষ্ঠীপুজো উপলক্ষ্যে শাশুড়িরা সকালে স্নান সেরে শুদ্ধ বস্ত্র পরে পুজোর আয়োজন করে থাকেন । তারপরে ঘটে জল ভরে তার ওপর আম্রপল্লব দিয়ে স্থাপন করেন এবং সঙ্গে তালপাতার পাখা সহ ১০৮টি দুর্বো ঘাস ,করমচা ফল সঙ্গে পাঁচ থেকে নয় রকমের ফল ও কাঁঠাল পাতার জোগাড় করা হয়। পাশাপাশি একটি সুতোয় হলুদ মাখিয়ে তাতে ফুল, বেলপাতা দিয়ে গিট বেঁধে রাখেন জামাইয়ের জন্য পরে জামাই এলে তাঁকে বসিয়ে সুতোটা হাতে দেবেন। পূজায় ধর্মীয় সংস্কারের পাখার হাওয়া দিয়ে বলেন ‘ষাট-ষাট-ষাট’।

জামাইয়ের কপালে মা ষষ্ঠীর ফোঁটা এবং হাতে হলুদ মাখানো সুতো বেঁধে মেয়ে-জামাইয়ের কল্যাণ কামনা করেন শাশুড়িরা। কপালে তেল-হলুদের ফোঁটা দিয়ে তালপাতার পাখা দিয়ে বাতাস করা হয়। ধান-দূর্বা দিয়ে আশীর্বাদ করা হয়। জামাইয়ের জন্য শাশুড়ি মায়েরা নিজের হাতে পঞ্চব্যাঞ্জন রান্না করেন। বিভিন্ন ধরনের মাছ, মাংস, মিষ্টির এলাহি আয়োজন থাকে। এছাড়াও, উপহার দেওয়ারও একটা পর্ব থাকে।

  • জামাইষষ্ঠীর গুরুত্ব

জামাইষষ্ঠী মূলত লোকায়ত প্রথা। ষষ্ঠীদেবীর পার্বণ থেকেই এই প্রথার উদ্ভব। ষষ্ঠীদেবী মাতৃত্বের প্রতীক। তাই মেয়ের মুখ দেখতে এবং মেয়ে-জামাইয়ের দ্রুত সন্তান লাভের কামনায় জামাইষষ্ঠীর উৎসব পালন করা হয়। বিশেষত যে পরিবারে সদ্য বিবাহিতা কন্যা রয়েছে সেই পরিবারে ঘটা করে এই পার্বণ পালন করা হয়।

  • ষষ্ঠীতে কি করেন মা-এঁরা

প্রসঙ্গত, এই উৎসবের পেছনে রয়েছে বাঙালি সমাজের একটি আর্থ সামাজিক অবস্থা। পাশাপাশি একটি প্রবাদ রয়েছে, যম-জামাই ভাগনা-কেউ নয় আপনা। কারণ যম মানুষের মৃত্যু দূত। অন্যদিকে জামাই এবং ভাগনা অন্যের বাড়ির উত্তরাধিকারী। সেক্ষেত্রে তাদের কখনও নিজের বলে দাবি করা যায় না। এদের খুশি করার জন্য মাঝে মাঝেই আদর আপ্যায়ন করা উচিত বলে মনে করা হত৷ কারণ জামাই খুশি থাকলে শ্বশুর বাড়িতে মেয়ে ভাল থাকবে বলে আশা করা হত৷ তাই গরমকালে জামাইকে একটু ডেকে এনে আম-দুধ খাইয়ে পরিতৃপ্ত করা এবং আশীর্বাদস্বরূপ উপহারসামগ্রীও প্রদান করার প্রথা চালু হয় বলে মনে করা হয়৷

বঙ্গজীবনে মানুষ আধুনিকতার দিকে যতই এগিয়ে যাক না কেন, আচার অনুষ্ঠান যে একে বারে উঠে গিয়েছে তা বোধহয় বলা উচিত হবে না৷ কারণ একেবারে সেকেলে অবস্থা না থাকলেও নতুন আঙ্গিকে পুরনো আচার অনুষ্ঠান বজিয়ে রেখেছেন এখনও বঙ্গজীবনে৷ তাই গ্রামের পাশাপাশি ও শহুরাঞ্চলেও জামাই ষষ্ঠী পালনের রেওয়াজটা চলে আসছে৷ তবে বলা যেতেই পারে নগর জীবনে এই দিনটি পালনে কিছুটা বিবর্তন এসেছে৷ যেমন এ যুগের কর্মরত ব্যস্ত শাশুড়িরা নিজের হাতে রান্না করে জামাইকে খাওয়াতে পারছেন না, তাই বলে জামাইষষ্ঠী হচ্ছে না তা নয়,পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে, ব্যাস্ততার যুগে বাড়ির বদলে রেস্তোরায় জামাইষষ্ঠীর আয়োজন করে শাশুড়ি তাঁর কর্তব্য সারছেন৷ যদিও এ নিয়েও নিন্দুকেরা খুঁত ধরেন আন্তরিকতার অভাব রয়েছে বলে৷ তবে এমন ব্যবস্থায় খুশি জামাই বাবাজীরাও৷ আগের মতো বসে থাকার দিন শেষ , জীবনের গতি বেড়েছে ফলে নিজ নিজ পেশায় টিকে থাকতে তারাও কর্মে মুক্তি খোঁজেন ৷ ফলে সারাদিনটা শ্বশুরবাড়ীতে নষ্ট করতে রাজী নন একালের জামাইরাও৷

  • ষষ্ঠীতে অন্নগ্রহণ করেন না মা’য়েরা

নামেই জামাইষষ্ঠীর ব্রত,শুধু শাশুড়ি মায়েরাই নয় জন্মদাত্রী মায়েরাও ছেলে-মেয়ের জন্য এই ব্রত পালন করে থাকেন। এদিন মায়েরা জামাই বাবাজী কিংবা ছেলে-মেয়ের জন্য ষোড়শ উপাচারে রান্না করে খাওয়ালেও নিজেরা কিন্তু খই-দুধ কিংবা আমি মুড়ি খেয়ে ষষ্ঠীপুজোর দিন কাটিয়ে দেন। মায়েদের নিরামিষ খাবার এই অমানবিক রীতিটি বাদ দিলে বাকি সবগুলিই গ্রহণযোগ্য।

 

বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিলেও ছেলের মঙ্গল কামনায় সমান তৎপর মা

(রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ- সদস্য, রাইটার্স বিল্ডিং এর কৃষি দফতরে কর্মরত-উদয়ণ রায়ের ‘ওয়াল’ থেকে সংগৃহীত)

বুড়ি কলে মুখ ধুয়ে বেরিয়ে যাচ্ছিলেন, বোঁচকাটা বগলদাবা করে। পুরোহিত আটকালেন। বললেন, বুড়ি এই যে তুমি মন্দিরে রোজ দুপুরে আসো, ভোগ খাও, চলে যাও…(!) বুড়ি তাকে থামিয়ে দিয়ে বললেন, কেনও? আমি তো দশ টাকা দিয়ে কুপন কাটি। অবশ্য রোজই যে তা কাটতে হয়, এমনটি নয়। এক একদিন বিনা কুপনেও ভোগ দেয়….।কিন্তু কেনও জিজ্ঞাসা করছেন? পুরোহিত বললেন, না, মানে তোমায় তো আরতির সময় দেখি না, সকালে পুজোর সময় দেখি না….।বছরে একদিনও তোমায় মন্দিরে অন্য সম য় দেখি না…,সারাদিন করোটা কি?বুড়ি বললেন, কেনও, ভিক্ষা? রাতে স্টেশনে শুই….আবার সকাল থেকে ভিক্ষা….
পুরোহিত বললেন, তোমার কিছু চাওয়ার নেই মায়ের কাছে?…এই যে এত দূর দূর থেকে সব আসেন, মায়ের কাছে এটা-সেটা চাইতে….।তোমার কিচ্ছু চাওয়ার নেই…. ?

বুড়ি বললেন, নেই গো। ছেলে বাড়ি থেকে বার করে দিল। বলল শুতে দেওয়ার জায়গা নেই,খেতে দেওয়ার ভাত নেই, তাদের পরিবার বড় হচ্ছে। তা ছেলে যখন বার করে দিল তখন তোমার ও কালী আমার কি করবেন? তাকে তো আমি পেটে ধরিনি রে বাবা…তার কি দায় আছে আমার প্রতি…..! তবে মন্দিরে আসো কেনও?….

মাকে বলতে গো, মাকে বলতে…., তিনি যেনও ছেলেটার অমঙ্গল না করেন। তিনিও মা তো (!) বুঝবেন…। তারও তো কেউ নেই (!) নইলে ইট বালু দিয়ে তৈরি তোমাদের মন্দিরে পড়ে থাকেন? সারারাত তালা লাগিয়ে, দরজা, জানালা লাগিয়ে চলে যাও…সে একগ্লাস জল চাইলে পাবে কিনা তা কে জানেন… ও সবার ভাগ্যই এক…দেখো না এই দুর্গাপুজো আসছে…. নর্দমার উপরে, এখানে সেখানে প্যাণ্ডেল করে চার পাঁচ দিন ঠায় দাঁড় করিয়ে রাখবে..কান মাথা খাওয়া গান চালাবে…মদ গিলে রাতে নেত্ত করবে…কুটকাচালি করবে সব সেজেগুজে বসে…মা ঠায় দাঁড়িয়ে থাকবেন…তারপর মন ভরে গেলে টান মেরে জলে ফেলে দিয়ে আসবে নাচতে নাচতে….ওর কাছে আমি আমার জন্যে আর কি চাইব বলো…আমি আসি…টাকা দিই…কুপন নিই.. ভোগ খাই…আর মাকে বলি তুই তো সব জানিস ছেলেটার যেন অমঙ্গল না হয় দেখিস…এই তো…আসি ?

পুরোহিত স্তব্ধবাক ! সত্যিই তো মন্দিরে তালা দেওয়া এখন। পাখা, লাইট নেভানো। কর্তৃপক্ষ এত টাকা বিদ্যুতের বিল দিতে পারে না। বুড়ি চলে যাচ্ছে। ময়লা শাড়ি। বগলে বোচকা। চলায় না আছে কোনও তাড়া, বলায় না আছে কোনও
ক্ষোভ। এত শান্ত কি করে হলে বুড়ি….?

বুড়ি ফিরে তাকালেন.. হাসলেনও…। সামনের উপরের পাটিতে দাঁত নেই, মেরেকেটে খুব বেশি হলে হবে দুটো কি তিনটে…।এমন নিরুদ্বেগ, অমলিন হাসি একমাত্র মায়েরাই হাসতে পারেন… স্বামী-শ্বশুরের ভিটে থেকে তাড়িয়ে দিলেও…।

কবিতা

লেখক নবজিৎ চক্রবর্তী (অসম)

          শরতের ডাক   

                                    – নবজিৎ চক্রবর্তী

শরতের ডানা মেলে দূর্গা পূজা আসে
আলোকে ভুবন ভরে হালকা মেঘ ভাসে
আকাশে উড়ে চলে ধবল বকের ঝাক
বাঁশ ঝুপে সাপ দেখে শালিকের হাক।
রঙ বেরঙের প্রজাপতি হাওয়ায় দোলায় পাখা
পূজার কদিন মণ্ডপে আমার হবে থাকা।
ডালে ডালে ভ্রমর উড়ে
থোকা থোকা শিউলি ফুলে
রাত ভর শিশির পরে
ঘাস-বন আর পাতার কূলে।
বন্ধুদের সাথে জেদ ধরে
রঙ্গন বলেই দিল স্পষ্ট
অষ্টমীতে উপুস থাকবে
হোক না যতই কষ্ট।

- Advertisement -

সম্পর্কিত খবর

- Advertisement -

ট্রেন্ডিং

close