তিনদিক সীমান্ত বেষ্টিত দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার ছেলে আব্দুল মোতাকাব্বের ইতিমধ্যেই আমেরিকার পাঁচ পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অপ্রচলিত শক্তি নিয়ে গবেষণা করার সুযোগ পেয়েছেন। স্বামী বিবেকানন্দের স্মৃতিধন্য শিকাগোতে গবেষণার জন্য ডাক পেতেই ২৩ বছর বয়সী এই তরুণের সাফল্যে উচ্ছ্বসিত পরিবার-সহ গ্রামবাসী। পাশাপাশি প্রতিশ্রুতি মিলেছে, মাসে ২ লক্ষ টাকা ভাতা পাওয়ার।
উল্লেখ্য, দক্ষিণ দিনাজপুরে আব্দুলের বাড়ি কুমারগঞ্জ ব্লকের সমজিয়া গ্রামপঞ্চায়েতের কৃষ্ণপুর গ্রামে। বাবা তোফাজ্জল হোসেন সরকার। পেশায় প্রাক্তন প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক। দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার প্রত্যন্ত একটি গ্রামে তারা বাস করলেও আব্দুল উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার পড়াশোনার জন্য বালুরঘাটে আসেন। পরিবারের পক্ষ থেকে জানা যায়, আব্দুলের ছোট থেকেই লেখাপড়ার প্রতি আগ্রহ ছিল। প্রত্যেক পরীক্ষায় তিনি অসম্ভব ভালো ফল করে উতীর্ণ হয়েছেন।
এবিষয়ে আব্দুল মোতাকাব্বের জানান, “ছোটবেলা থেকেই আমার জীবনের একটাই লক্ষ্য ছিল, বড় হয়ে গবেষণার কাজ করব। দেশের হয়ে সেবা করব। আমার দীর্ঘ পরিশ্রমের পরে আমার কাছে এত বড় সুযোগ এসেছে। আজ আমার বাবা মায়ের স্বপ্ন পূরণ করতে পারলাম। ভবিষ্যতে আমি বিজ্ঞানী হয়ে দেশের জন্য কিছু করতে চাই।”
পাশাপাশি, আবদুল আরও জানান, তার মতন অন্যান্য ছাত্র ছাত্রীরাও চেষ্টা করে যেনও তাদের লক্ষ্যে সফল হতে পারে। প্রত্যন্ত এলাকা বা পরিবার কোনও কিছুই যেনও তাদের লক্ষ্যে বাঁধা নয়। স্কুল শিক্ষক থেকে কলেজ প্রফেসর প্রত্যেকেই সমান তালে তার এই লক্ষ্যে পৌঁছতে বিশেষভাবে সাহায্য করেছেন। ৫ বছর পর দেশে ফিরে গবেষণা করার পাশাপাশি প্রত্যক্ষ রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হয়ে দেশের কাজ করতে চান সে। রাজনৈতিক দিক থেকে একটা বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত হয়ে জনসেবায় নিজেকে নিযুক্ত করতে চান আব্দুল। এমনকি প্রত্যন্ত গ্রামের ভবিষ্যত প্রজন্ম যেনও সব রকম ভাবে সুযোগ সুবিধা পেতে পারে এটাই তার জীবনের শ্রেষ্ঠ চাওয়া।
তাঁর মা মেহবুবা বিবি বলেন, “ছোটবেলা থেকেই ওর একটাই ইচ্ছে ছিল। বিজ্ঞানী হওয়ার পাশাপাশি একটা বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত হয়ে জনসেবায় নিজেকে নিযুক্ত করতে চায়। অনেক পরিশ্রমের ফল পেয়েছে। যতটা পেরেছি ওর পাশে থাকার চেষ্টা করেছি আমরা পুরো পরিবার। ছেলের সাফল্যে আজ আমরা খুবই গর্বিত। আমরা সকলেই খুব খুশি।”
প্রসঙ্গত, আব্দুলের স্কুলজীবন কেটেছে নিজস্ব ব্লকে। ২০১৫ সালে তিনি কুমারগঞ্জ ব্লকের আঙ্গিনা বরোইট উচ্চবিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পাশ করেন। এরপর ২০১৭ সালে বালুরঘাট ললিত মোহন আদর্শ উচ্চবিদ্যালয় থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় সফল হওয়ার পর ডিগ্রি অর্জনের জন্য যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। এরপর থেকে গবেষণা নিয়ে পড়াশুনা শুরু হয় তার। ইতিমধ্যেই আমেরিকার পাঁচ পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পরিবেশ নিয়ে গবেষণা করার সুযোগ পেয়েছেন। জেলার এই প্রত্যন্ত এলাকা থেকে এত বড় জায়গায় পৌঁছে যাওয়া রীতিমত জেলা বাসিকে বিস্মিত করেছে। আব্দুল মোতাকাব্বের কথায়- আগামী দিনে তার এলাকা কিংবা জেলার যে কোনও প্রান্তে কোনও ছাত্র-ছাত্রীরা এই ধরনের সুযোগ পেতে সর্বতো ভাবে সাহায্য করবে।
দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাট থেকে বাপ্পা হালদারের রিপোর্ট, টাইমস ফোর্টিন বাংলা।