বালুরঘাট ব্লকের নাজিরপুর গ্রামপঞ্চায়েতের বয়দুল গ্রামের চৌধুরী পরিবারের পুজো এবারে ১১২ বছরে পদার্পণ করল। এই গ্রামের চৌধুরী বাড়ির পুজোতে ষষ্ঠী থেকে দশমী পর্যন্ত চলে মঙ্গলচণ্ডীর গান। প্রাচীন ঐতিহ্য মেনে অষ্টমীর সন্ধী পুজোর আগে এই বাড়ির সদস্যরা শূন্যে দুই রাউন্ড গুলি চালায়। তারপর শুরু হয় সন্ধীপুজো।
সূত্রের খবর, ১৯০৯ সালে এই এলাকার জোতদার প্রসন্ন লাল চৌধুরী সর্বপ্রথম এই পুজোর সূচনা করেন। এরপর বংশপরম্পরায় এই পুজো করে আসছেন পরবর্তী চৌধুরী পরিবারের সদস্যরা। এই দুর্গাপুজো প্রতিবছরই গ্রামে মিলন উৎসবের আকার নেয়। বছরের অন্যান্য সময়ে চৌধুরী পরিবারের সদস্যরা দেশের নানা প্রান্ত থাকলেও পুজোর সময়ে তারা সবাই একসঙ্গে মিলিত হয়। তবে গত দু’বছর করোনার কারনে পুজো সেভাবে বড় করে না হলেও এবছর বেশ জাঁকজমকপূর্ণভাবেই পুজোর আয়োজন করেছেন বয়দুল সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটির সদস্যরা।
এবিষয়ে চৌধুরী পরিবারের অন্যতম সদস্য ভূদেব চৌধুরী বলেন, তার ঠাকুরদার দাদা অর্থাৎ জোতদার প্রসন্ন লাল চৌধুরী সর্বপ্রথম এই পুজো শুরু করেছিলেন। সেই থেকে তার ঠাকুরদা এবং পরবর্তীতে তার বাবা-কাকারা এই পুজো করে আসছেন। এখন তারা সব ভাই-রা মিলে এই পুজো করছেন।
অন্যদিকে চৌধুরী পরিবারের আরেক ভাই দেবাশীষ চৌধুরী বলেন, তাদের বংশের এখন অনেক বংশধর রয়েছে। তাদের এই পুজোয় নিয়ম রয়েছে, যে ভাই দুর্গাপুজার দায়িত্ব নেবে, তাকে সারাবছরই কালী পুজো, শিব পুজো, মনসা পুজো-সহ বারো মাসই পুজোর দায়িত্ব নিতে হবে। এবছর তিনি পুজার দায়িত্ব নিয়েছেন। প্রতিবারই কেউ না কেউ এই মন্দিরের দায়িত্ব নেয়। প্রাচীন রীতি-নীতি মেনেই এবারও মনসা মঙ্গলের গান দিয়ে পুজো শুরু হবে।
এপ্রসঙ্গে গ্রামের বাসিন্দা অশোক মন্ডল ও নিতাই বর্মন বলেন, এই পুজো তাদের গ্রামের মানুষের কাছে উৎসব। প্রতিবছর এই দিনটির জন্য তারা অপেক্ষা করে থাকেন।
উল্লেখ্য, বালুরঘাট ব্লকের নাজিরপুর এলাকায় বয়দুল গ্রামের জমিদার ছিলেন জোতদার প্রসন্ন লাল চৌধুরী। তিনি ওই মন্দির স্থাপন করেছিলেন। প্রসন্ন বাবুর ছয় ছেলে ছিল। পরবর্তীতে ওই ছয় ছেলের বংশধররাই এই পুজোর দায়িত্ব নেয়। বর্তমানে ওই বয়দুল গ্রামে চৌধুরী পরিবারের ওই মন্দিরে সারাবছর বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ বা পুজোয় অংশ নেন গ্রামবাসীরা। জাগ্রত এই মন্দিরে সারাবছর বৈষ্ণব মতে পুজা হয়। তবে পুজোয় এই কয়েকটা দিনে মঙ্গলচণ্ডীর গানের আসর বসে। এছাড়াও অষ্টমীর দিন বন্ধুক দিয়ে শূন্যে দুই রাউন্ড গুলি চালানো হয়। যা দেখতে শহর থেকে বহু মানুষের ভিড় দেখা যায়।
বালুরঘাট থেকে বাপ্পা হালদারের রিপোর্ট, টাইমস ফোর্টিন বাংলা।