সংবিধান প্রণেতা আম্বেদকরের ১৩১ তম জন্মতিথি পালিত

চলুন জেনেনি আম্বেদকরের জীবনী সম্পর্কে

আরও পড়ুন

ডঃ বি আর আম্বেদকর ছিলেন ভারতীয় ব্যবহার শাস্ত্রজ্ঞ একজন ব্যাক্তিত্ব। যিনি সাধারণ মানুষকে দাসত্বের বাঁধন ছিন্ন রেখে বাঁচতে শিখিয়েছেন। ডঃ ভীমরাও রামজি আম্বেদকর জন্মগ্রহন করেছিলেন ১৪ই এপ্রিল ১৮৯১ সালে মধ্যপ্রদেশের ইন্দোর জেলার মৌ নাম একটি গ্রামে। ডঃ বি আর আম্বেদকর এর বাবার নাম ছিল রামজি সকপাল এবং মায়ের নাম ছিল ভীমা বাই। রামজি প্রথম থেকেই তাঁর ছেলেকে পড়াশোনায় উৎসাহিত করতেন। যারফলে বি আর আম্বেদকর ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনায় ভালো ছিলেন। বি আর আম্বেদকর জাতিতে ছিলেন মাহার ,যেই জাতিকে তৎকালীন সমাজে অগ্রাহ্য করা হতো। নীচু জাতির কোন মানুষ ভুল করে উঁচু কোনো জাতির বস্তু স্পর্শ করলে সেই বস্তু অপবিত্র ভেবে দ্বিতীয়বার সেটা মুছে ব্যবহার করা হতো না। এমনকি সমাজের এইরকম খারাপ চিন্তাভাবনা জন্য নীচু জাতি মানুষ বিদ্যালয়ে ঠিকমত পড়াশোনা করতে পারতো না। কিন্তু সৌভাগ্যক্রমে তৎকালীণ ব্রিটিশ সরকার সেনাবাহিনীতে কর্মরত নীচু জাতি মানুষের জন্য আলাদা করে বিদ্যালয় তৈরি করেছিল এবং এর ফলে আম্বেদকর তাঁর প্রাথমিক শিক্ষা শুরু করতে পারেন। বিদ্যালয়ের পড়াশুনা খুব ভালো হওয়া সত্ত্বেও আম্বেদকর এবং তাঁর সহপাঠী সমস্ত নীচু জাতির ছেলেকে বিদ্যালয়ের বাইরে অথবা শ্রেণীকক্ষের কোনো এক কোনায় বসতে দেওয়া হতো। এমনকি বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা তাদের কোনো গুরুত্ব দিতেন না এমনকি তাঁদের খুব অবহেলার চোখে দেখতেন।

বিদ্যালয়ে নল থেকে জল খাওয়ার অধিকার পর্যন্ত তাদের ছিল না। বিদ্যালয়ে কেরানি এলে তাদের দুর থেকেই জল দিতেন আর কেরানি না থাকলে তাদের জল না খেয়েই থাকতে হত। তৎকালীন ভারতে এই জটিল পরিস্থিতিতে বেশিরভাগ ছাত্রই বিদ্যালয়ে ভর্তি হতে চাইতো না এই অপমানের জন্য অথবা বেশিদূর পড়াশোনা করত না মাঝপথেই পড়াশুনা ছেড়ে দিত।

ছোটবেলা থেকে অত্যন্ত কঠিন জীবন সংগ্রামে অংশ নিয়ে সফলতা অর্জন করে চলতে হয়েছে কারণ আমাদের হিন্দু সমাজের নিচু জাতের মানুষদের অত্যন্ত ঘৃনার চোখে দেখা হতো যখন চাকরি থেকে অবসর নেন। তখন আম্বেদকর এর বয়স মাত্র ২ বছর ৩ মাস ১৫০ টাকা পেনশন নিয়ে সপরিবারে চলে আসেন তাদের আদি বাসভূমি কঙ্কনের দিতে আর তার দাদা এখানে একটি প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষাজীবন শুরু করেন।কিন্তু সেই স্কুলের পরিবেশ ছিল অত্যন্ত নিন্দনীয় আর জঘন্য এই দুই ভাই অন্য ছাত্রের সাথে ক্লাস ঘরে বসতে পারত না। তারা বই খাতা নিয়ে ক্লাস ঘরের এক কোণে দাঁড়িয়ে থাকতো কারণ তারাতো মহারাজাদের ছেলে প্রথম দিনই সেখানকার শিক্ষক মশাই ক্লাসে ঢুকে তাদের কে বলেছিলেন তারা নিজেদের আনা চটের আসন নিয়ে বসবে।

দেওয়ালের অন্যদের থেকে তাদের বসার স্থান যেন দূরে হয় যেন কারো ছোঁয়া না লাগে এমনকি তাদের সিলেটবার্তা হাত দিয়ে ছুঁয়ে দেখতেন না দূর থেকে সিলেট খাতার লেখা দেখতেন। স্কুলের সমস্ত ছাত্রের জন্য কলসিতে খাবার জল থাকতো কিন্তু ভীম ও তার নিজের হাতে জল নিয়ে খেতে পারত না, যদি তাদের তৃষ্ণা পেত তাহলে তারা হা করতো তখন কোন জাতের ছেলে উপর থেকে তাদের মুখে জল ঢেলে দিত স্কুলের পরিবেশ দ্বারা ভেদাভেদের হাত থেকে রেহাই পেত না।
বাজারের যে সেলুনে চুল কাটে ওরা সেখানে চুল কাটতে পারত না, বাধ্য হয়ে ওদের বাড়ির বোনেরাই ছোট ভাইদের চুল কাটত। আম্বেদকর এর যখন মাত্র ৬ বছর বয়স তখন তার মা মারা যান সেই সময় তাদের একমাত্র বিধবা পিসি মীরাবাঈ এসে মা হারা এই ছেলে মেয়ে গুলোকে দেখাশোনার ভার নেন।তিনি আম্বেদকরকে অত্যন্ত ভালবাসতেন নিজের চেষ্টায় মারাঠি ইংরেজি ভাষা রীতিমতো দক্ষতা অর্জন করেছি

লেন আর তিনি চাইতেন যে সমস্ত ছেলেদের মধ্যে ছোট বয়স থেকে এমন প্রসার ঘটুক স্কুলের মধ্যে থেকেও ছেলেরা শিক্ষার উপকারিতা আনন্দ পেতে পারে সে বিষয়ে তিনি অত্যন্ত যাচ্ছিলেন।

তিনি নিয়মিতভাবে নিজের ভাই দুটিকে পড়াতেন ছেলেমেয়েদেরকে রোজ রামায়ণ-মহাভারত সন্ত কোভিদ অন্যান্য রচনা জীবনী পড়ে পড়ে শোনাতেন। শুধু তাই নয় তিনি ছেলেদেরকে ইংরেজি পড়তে আর ইংরেজি অনুবাদ করতে শিখিয়েছিলেন পরবর্তীকালে আম্বেদকর বলেছিলেন যে তিনি পিতার কাছে প্রাথমিকভাবে ইংরেজি ভাষা শিখেছিলেন।এমনকি তিনি তাকে ইংরেজি অনুবাদ করা ভালোভাবে রপ্ত করেছিলেন এরপর প্রাথমিক স্কুলে পড়া শেষ হলে আম্বেদকর আর তার দাদা আনন্দ হাই স্কুলে এসে ভর্তি হলেন। সেই সময় এই স্কুলে একজন শিক্ষকের পদ ছিল আম্বেদকর তিনি ডঃ বি. আর. আম্বেদকর কে অত্যন্ত ভালবাসতেন আর তাকে নানাভাবে সাহায্য করতেন।আর তখনকার সামাজিক নি

য়ম অনুযায়ী আমদাবাদ গ্রামের অধিবাসী হিসেবে ভীমের পরিবারেও পদবী ছিল আম্বেদকর কিন্তু এই স্কুলের খাতায় ভীমের পদবী বদল করে নিজের পদবী আম্বেদকর লিখে দিলেন পরিচিত হন। আরো একটি ঘটনা বলে রাখা দরকার সেটি প্রমাণ করে সেই সময়কে প্রত্যেকদিন বাধা করতে হতো আর দাদা।হাই স্কুলের ছাত্র গোরেগাঁও এসেছিলেন বাবার সাথে দেখা করতে সে সময় একটা চাকরি নিয়ে গরেগাওন থাকতেন। দুই ভাইয়ের নাম লোক তারপর তারা একটা গরুর গাড়ি ভাড়া করে বাবার বাড়ির দিকে রওনা হল।পথে যেতে যেতে কারণ জানতে পারল আরোহী দুই ছেলে জাতিতে বাহার সাথে সাথে গাড়োয়ান অত্যন্ত রেগে গেল ওরা উঠাতে নাকি তার গাড়ির অপবিত্র হয়ে গেছে এই অপবাদ দিয়ে তাদের গাড়ি থেকে মাটিতে ফেলে দেয়। অনেক অনুরোধ করার পর সে রাজি হয় ওদের পৌঁছে দিতে তবে শর্ত থাকে যে তাকে দ্বিগুণ

Bhim Rao Ambedkar

 ভাড়া দিতে হবে আনন্দকে গাড়ি চালিয়ে নিয়ে যেতে হবে ছেলেদের সাথে গাড়োয়ান তো আর এক গাড়িতে যেতে পারে না।তাই সে হেঁটে হেঁটে গাড়ির সঙ্গে সঙ্গে যাবে তারপর অবশ্য সে বিধান অনুসারে গাড়িটাকে পবিত্র করে নেই। তারপর সেদিন সন্ধ্যে থেকে মাঝরাত অবধি গোরেগাঁও পৌঁছানো পর্যন্ত  রাস্তায় কারো সাহায্য পায়নি এমনকি পিপাসা মেটাবার জন্য তারা জলপান ও করেনি। এর কিছুদিন পর আরেকটি নতুন চাকরিতে বম্বে চলে আসেন। সেখানে ডঃ বি. আর. আম্বেদকর আর তার দাদা এনফিল্ড হাই স্কুলে ভর্তি হন।

ভারতীয় এই সময়ে দ্রুত পরিবর্তিত হয়েছিল ভারতের বড়লাট হয়ে আসেন মাউন্টব্যাটেন তিনি ভারতকে দ্বিখণ্ডিত করবার পাকাপাকি বন্দোবস্ত করে হাজার ১৯৪৭ সালের ১৫ জুলাই থেকে দুটি স্বাধীন রাষ্ট্র জন্ম নেয়। ভারত আর পাকিস্তান স্বাধীনতা ভারতকে সুসংগঠিত করার জন্য দক্ষ অভিজ্ঞ দেশের নেতারা একটা নতুন জাতীয় প্রশাসন গঠন করে আর প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরুর অনুরোধ রক্ষা করার জন্য আম্বেদকর ভারত সরকারের আইন বিভাগের দায়িত্ব নেন।
ভারতের সংবিধানের খসড়া প্রস্তুত করার জন্য সাত সদস্যের একটি কমিটি প্রস্তুত হয় এই সভার সভাপতি হন তিনি চেষ্টা করে ১৪১ দিন দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে প্রস্তুত করলেন পৃথিবীর বৃহত্তম সংবিধানের খসড়া অবশেষে অনেক বিচার-বিবেচনা করার পর হাজার ১৯৪৯ সালের ২৬ শে নভেম্বর ভারতের সংবিধান গণপরিষদে গৃহীত হয়।

সংবিধানের ৩৫৬ টি অনুচ্ছেদ আর চারটি তালিকা আমাদের ভারতীয় সংবিধানে শ্রেণীর উন্নতির জন্য যে সমস্ত বিধানকে গ্রহণ করা হয়েছে এর প্রধান উদ্যোক্তা ছিলেন ডঃ ভীমরাও রামজি আম্বেডকর অবশেষে ১৯৫৬সালের ৬ ডিসেম্বর তাঁর জীবনাবসান হয়।

- Advertisement -

সম্পর্কিত খবর

- Advertisement -

ট্রেন্ডিং

close