নিরিবিলি পরিবেশে কদিন মন শান্ত করতে ঘুরে নিন দুটি গ্রাম

আরও পড়ুন

মানুষের জীবনে ব্যাস্ততার শেষ নেই। একঘেয়ামি জীবনে কাজ করতে করতে ক্লান্ত মানুষ খোঁজেন নির্জন এলাকা। তাঁদেরই মধ্যে অচেনা গ্রামদুটির নাম বাগোড়া এবং দাওয়াইপানি। নিরিবিলি পছন্দ করা সব বয়সের মানুষদেরই আকৃষ্ট করবে এই দুটি গ্রাম।

জেনে নেব- বাগোড়া কিংবা দাওয়াইপানি পৌঁছনোর খুঁটিনাটি

বাঙালি হল ভ্রমণপিপাসু জাতি। কথায় আছে – তাদের পায়ে নাকি সর্ষে লাগানো। সুযোগ পেলেই বেরিয়ে পড়েন ইতিউতি। আর সমস্ত ভ্রমণপিপাসু বাঙালির কাছে পাহাড় অত্যন্ত প্রিয় এক গন্তব্য। তাই গরমের ছুটিতে উত্তরবঙ্গের দিকে পা বাড়ান অনেকেই। কিন্তু সাম্প্রতিককালে দার্জিলিং বা কার্শিয়ঙের ভিড় এড়াতে অনেকেই কিছু খোঁজ করে চলেছেন স্বল্প পরিচিত নিরিবিলি কোনও পর্যটনকেন্দ্র। আবার অনেকেই শহুরে কোলাহল এড়িয়ে কয়েকটি দিন পাহাড়ে কাটাতে চান। তাঁরা কিন্তু ঘুরে আসতে পারেন দাওয়াইপানিবাগোড়া। চাইলে আলাদাভাবেও দেখতে পারেন আবার হাতে সময় থাকলে দুটি গ্রামও ঘুরে নিতে পারেন একই সঙ্গে।ভ্রমণ হলো বাঙালি জীবনের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। সেই ভ্রমণের গন্তব্য যদি হয় পাহাড় আর অরণ্য একইসঙ্গে , তাহলে সেই ভ্রমণে এক অনন্য মাত্রা যোগ হয়।

  • দাওয়াইপানি

দাওয়াইপানি কথাটির অর্থ ঔষধি জল। ঘুম স্টেশন থেকে মাত্র মিনিট কুড়ির দূরত্বের দাওয়াইপানি গ্রামের নামকরণ হয়েছে গ্রামটির সামনে দিয়ে বয়ে যাওয়া নদীর থেকে। নদীটির জল নাকি নানা রকম খনিজ পদার্থে সমৃদ্ধ। গ্রামের মানুষ ওই জল পান করেই নাকি রোগমুক্ত থাকেন। যদিও চিকিৎসাবিজ্ঞান তা সমর্থন করে না। তবে রোগমুক্তি হোক না হোক, দাওয়াইপানির মনোরম দৃশ্য উপভোগ করলে মানুষ বারে বারে এখানেই পা রাখতে চাইবেন। গোটা গ্রামটি থেকেই দেখতে পাওয়া যায় কাঞ্চনজঙ্ঘা। স্পষ্ট দেখা যায় নামচির চারধাম ও সামদ্রূপসে মঠ। সূর্য ডোবার পর উল্টো দিকের পাহাড়ে দেখতে পাবেন অসংখ্য প্রদীপ জ্বালিয়ে রেখেছে কেউ। ওগুলি আসলে প্রদীপ নয়, রাতের দার্জিলিং! কাছেই রয়েছে গ্লেনবার্ন, লামহাট্টাতাকদহ চা বাগান। চাইলে দাওয়াইপানি থেকে একদিনে গাড়ি করে ঘুরে নিতে পারেন দার্জিলিংও।

  • বাগোড়া

দাওয়াইপানি থেকে বাগোড়া ঘণ্টা দুয়েকের দূরত্বে অবস্থিত। কিছুটা সবুজে মোড়া বাগোড়া পক্ষীপ্রেমীদের কাছে বেশ জনপ্রিয়। এটি কার্শিয়ং মহকুমার অধীনে। কাঞ্চনজঙ্ঘার সঙ্গে মেঘ ও রোদের খেলা দেখতে দেখতেই কেটে যায় সময়। ফুরসৎ পেলে হাঁটতে যেতে পারেন ঘন পাইন বনেও। এখানে বিমানবাহিনীর একটি ভিউ পয়েন্ট রয়েছে। হেঁটে হেঁটেই ঘুরে আসা যায় সেটি। তা ছাড়া কয়েক কিলোমিটারের দূরত্বে রয়েছে চিমনি, ডাওহিল ও ফরেস্ট মিউজিয়াম। চারিদিক থেকে শুনতে পাওয়া যায় অনামী বিভিন্ন পাখির ডাক, গাছের ফাঁক দিয়ে আলো-আঁধারি প্রকৃতির দৃশ্য চিরকাল মনে থেকে যাবে। যে কারনে মানুষ বাগোড়া ও দাওয়াইপানির নাম খোঁজ করে চলেছেন।

কী ভাবে সেখানে যাবেন এবং থাকবেনই বা কোথায় ?

দু’টি স্থানে যেতেই প্রথমে পৌঁছতে হবে নিউ জলপাইগুড়ি রেল স্টেশন কিংবা বাসে এলে তেনজিং নোরগে বাসস্ট্যান্ড। প্রতিদিন অনেকগুলি ট্রেন শিয়ালদহ ও হাওড়া থেকে উত্তরবঙ্গে আসে। তবে সবচেয়ে জনপ্রিয় ট্রেনগুলি হল দার্জিলিং মেলপদাতিক এক্সপ্রেস । ট্রেনে টিকিট না পেলে ধর্মতলা থেকে বাসে পৌঁছে যাওয়া যায় নিউ জলপাইগুড়ি। সময় কম-বেশি একই লাগে। নিউ জলপাইগুড়ি অথবা তেনজিং নোরগে বাসস্ট্যান্ড থেকে দাওয়াইপানি যেতে গেলে দার্জিলিংগামী গাড়িতে চেপে জোড়বাংলো নামতে হবে। সেখান থেকে দাওয়াইপানি ১৫ কিলোমিটার। বাগোড়া যেতে গেলেও প্রাথমিক পথটি একই। শুধু নামতে হবে কার্শিয়ঙে। কার্শিয়ং নেমে ডান দিকে গেলেই বাগোড়া।

দাওয়াইপানিতে এখন থাকার জন্য বেশ কয়েকটি হোম-স্টে খুলেছে। কোন ঝাঁ-চকচকে দোকান নেই, ভ্রমণ পিপাসু মানুষদের তেমন ভিড়ভাট্টাও নেই; শুধুই পাহাড়ি লোকেদের সাধারণ জীবনযাত্রা মন্থর গতিতে এগিয়ে চলেছে। তবে ইতিমধ্যেই কিছু হোম-স্টে ব্যবস্থা হয়েছে। ভাড়া থাকা-খাওয়া মিলিয়ে জনপ্রতি দৈনিক দেড় হাজার টাকার মতো। তবে হোম-স্টে-র সংখ্যা যেহেতু কম তাই আগে থেকে ঠিক করে যাওয়াই ভাল। বাগোড়াতে ব্যক্তিগত মালিকানা ও সরকারের যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত একটি হোম-স্টে রয়েছে। তবে পাহাড়ি অঞ্চলের মানুষের মন অত্যন্ত সরল এবং সাদাসিধে। তারা সকলেই যে অতিথিবৎসল তা বলাই বাহুল্য। একবার তাদের আতিথিয়তা গ্রহণ করলে জীবনভর মনে থাকবে।

- Advertisement -

সম্পর্কিত খবর

- Advertisement -

ট্রেন্ডিং

close