শনিবারের বিকেল :18 June, 2022

আরও পড়ুন

রামকিঙ্কর বেইজের জীবনী 

রামকিঙ্কর বেইজ

রামকিঙ্কর বেইজ (২৫ মে, ১৯০৬ – ২ আগস্ট, ১৯৮০) ছিলেন একজন ভারতীয় বাঙালি ভাস্কর। তিনি আধুনিক ভারতীয় ভাস্কর্যকলার অন্যতম অগ্রপথিক ছিলেন। রামকিঙ্কর ছিলেন প্রথম ভারতীয় শিল্পী যিনি আধুনিক পাশ্চাত্য শিল্প অধ্যয়ন করে সেই শৈলী নিজের ভাস্কর্যে প্রয়োগ করেন। তাকে ভারতীয় শিল্পে আধুনিকতার জনক ও অন্যতম শ্রেষ্ঠ শিল্পী মনে করা হয়। প্রখ্যাত ভাস্কর্য ও চিত্ৰশিল্পী।

তিনি অতি দরিদ্র নাপিত পরিবারে জন্মগ্রহণ করে ছিলেন । ছোটবেলা থেকেই ছবি আঁকায় ঝোঁক ছিল। দেবদেবীর ছবি আঁকতেন। মধ্যকৈশোরে রামকিঙ্কর অসহযোগ আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী স্বাধীনতা সংগ্রামীদের ছবি আঁকতেন। মাত্র ষোলো বছর বয়সে তিনি বাঁকুড়ার বিশিষ্ট সাংবাদিক এবং প্রবাসী পত্রিকার সম্পাদক রামানন্দ চট্টোপাধ্যায়ের নজরে পড়ে যান। চার বছর পরে তিনি শান্তিনিকেতনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিশ্বভারতী বিদ্যালয়ে চারুকলার ছাত্র হিসেবে যোগ দেন। ১৯২১ খ্রী. অসহযোগ আন্দোলনের হাওয়াও কিছুটা লেগেছিল। বাঁকুড়ার লোক ‘প্রবাসী’ পত্রিকার সম্পাদক রামানন্দ চট্টোপাধ্যায় তাঁর শিল্প-প্ৰতিভার পরিচয় পেয়ে তাঁকে শান্তিনিকেতনে নিয়ে আসেন (১৯২৫ খ্রীঃ)। তাঁর আঁকা ছবি দেখে নন্দলাল বসু বলেছিলেন, ‘তুমি সবই জানো, আবার এখানে কেন?’ কলাভবনে সতীর্থ হিসাবে পেয়েছিলেন রমেন্দ্ৰনাথ চক্রবর্তী, বিনোদবিহারী মুখোপাধ্যায়, বিনায়ক, মসোজী প্রমুখকে। আমৃত্যু শান্তিনিকেতনেই থেকে যান। প্ৰথমে ছাত্র, পরে শিক্ষক। ভাস্কর্য বিভাগের প্রধান হয়ে ১৯৭১ খ্রী. অবসর নেন। অজস্র ছবি এঁকেছেন, অসংখ্য মূর্তি গড়েছেন। তাঁর চিত্রে, ভাস্কর্যে রাঢ় দেশের মাটি ও মানুষ এসেছে প্রবলবেগে। তাঁর অঙ্কন শক্তিশালী সহজ কিন্তু প্ৰথাসর্বস্ব নয়।

প্ৰাচ্য-পাশ্চাত্ত্য শিল্পকলার নানা বিশেষত্ব ধরা পড়েছে তাঁর শিল্পকর্মে। ‘উৎসবী চোখ’, ‘শিলং সিরিজ’, ‘শরৎকাল’, ‘কৃষ্ণের জন্ম’, ‘নতুন শস্য’, ‘বিনোদিনী’, ‘ ‘মহিলা ও কুকুর’, ‘গ্ৰীষ্মের দুপুর’ প্রভৃতি ছবি বিশেষ উল্লেখযোগ্য। তাঁর প্রায় সমস্ত মূর্তিই খোলা আকাশের নীচে-বড় আকারের। র্যাদের তিনি সকাল-সন্ধ্যায় দেখতেন তারাই তাঁর মডেল। গতিময়তার প্রাধান্য রয়েছে তাঁর শিল্পসৃষ্টিতে। তাঁর ভাষায় ‘প্রায় সব-কটা মূর্তিই মুভিং। স্থবিরতায় আমার বিশ্বাস নেই। ‘সুজাতা’, ‘বুদ্ধদেব’, ‘গান্ধীজী’, ‘হাটের সাঁওতাল পরিবার’, ‘কাজের শেষে সাঁওতাল রমণী’, ‘কালের পথে’ প্রভৃতি এবং রবীন্দ্রনাথ, অবনীন্দ্ৰনাথ ও আলাউদ্দীন খান-এর আবক্ষ মূর্তিগুলি নির্মাণশৈলীতে বিশিষ্ট। কলকাতা, বোম্বাই ও দিল্লীতে তাঁর ছবির ও মূর্তির প্রদর্শনী হয়েছে। প্যারিস এবং জাপানের প্রদর্শনীতে তাঁর কাজ গিয়েছে। এদেশের প্ৰধান সংগ্রহশালাগুলিতে তাঁর শিল্পকর্ম রক্ষিত আছে। তিনি নিজে যদিও শান্তিনিকেতনের বাইরে বিশেষ কোথাও যাননি। গান এবং অভিনয় ভালবাসতেন। মঞ্চসজ্জা ও পরিচালনা নিয়ে কাজ করেছেন। তাঁর পরিচালনায় শান্তিনিকেতনে ইংরেজী ও বাংলা বহু নাটক অভিনীত হয়েছে। নিজেও অনেক অভিনয় করেছেন। ১৯৪৯ খ্রী. কলিকাতায় অনুষ্ঠিত সুকুমার রায়ের ‘হ য ব র ল’ নাটকের নির্দেশনা তিনি দেন। ১৯৭০ খ্রী ‘পদ্মভূষণ’ লাভ করেন। ১৯৭৫ খ্ৰী বিশ্বভারতীর ‘এমেরিটাস প্রফেসর’ হন। ১৯৭৬ খ্রী. বিশ্বভারতী তাঁকে ‘দেশিকোত্তম’ উপাধিতে ভূষিত করেন। অকৃতদার, বেহিসাবী এই শিল্পী নিজের কাজ সম্বন্ধে উদাসীন ছিলেন।রামকিঙ্কর বাইজ জীবনের প্রাকৃতিক উত্সকে সাড়া দিয়েছিল।মানব ব্যক্তিত্ব, দেহের ভাষা এবং সাধারণ মানব নাটকে খুব আগ্রহী ছিলেন।

আধুনিক পশ্চিমা শিল্প এবং প্রাক ও উত্তর-শাস্ত্রীয় ভারতীয় শিল্প তাঁর উল্লেখযোগ্য বিষয় ছিল। তিনি স্থানীয় উপাদানগুলি সুবিধার্থে ব্যবহার করেছিলেন এবং একজন মডেলার এবং কার্ভারের দক্ষতার সংমিশ্রণে কাজ করেছিলেন। তাঁর চিত্রগুলিও তাঁর ভাস্কর্যগুলির মতো প্রকাশবাদী মাত্রা গ্রহণ করে, যা শক্তি এবং প্রাণশক্তি দিয়ে পূর্ণ। বাইজ যখন ঠাকুরের প্রতিকৃতি তৈরি করছিলেন, তখন এক বৈঠকের সময়, প্রবীণ কবি তাকে বাঘ হিসাবে এই বিষয়টির কাছে যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে রক্তে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। এর পরে, বাইজের নিজস্ব কথায়, তিনি “পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি”।

তাঁর কয়েকটি ভাস্কর্য কলাভবন, শান্তিনিকেতন, প্রয়াত রানী চন্দ সংগ্রহ ও চারুকলা একাডেমী, কলকাতা, এইচ.কে. সহ বিভিন্ন স্থানে সংরক্ষিত এবং প্রদর্শিত রয়েছে কেজরিওয়াল কালেকশন এবং কর্ণাটকের চিত্রকলার পরশহাট, বেঙ্গালুরু, ললিত কালা আকাদেমি, নয়াদিল্লি, ন্যাশনাল গ্যালারী অফ মডার্ন আর্ট, নয়াদিল্লি, রিজার্ভ ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া, নয়াদিল্লি, জেন এবং কিতো ডি বোয়ার, দুবাই এবং নয়াদিল্লির দিল্লী আর্ট গ্যালারী।

১৯৮০ সালের ২৩ মার্চ, বৈজকে পি জি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। তিনি প্রোস্টেট গ্রন্থির রোগে ভুগছিলেন এবং ক্ষুধা পাওয়ার সমস্ত ধারণা হারাতেন। চিকিৎসক শান্ট অপারেশন করেছেন। তাঁর চিকিত্সার ব্যয় পশ্চিমবঙ্গ সরকার এবং বিশ্বভারতীর অধ্যক্ষ বহন করেছিলেন। ২ আগস্ট কলকাতায় তাঁর মৃত্যু হয়। শান্তিনিকেতনে তাঁর ভাগ্নে তাঁর মরদেহ দাহ করা হয়েছিল। তিনি হাসপাতালে থাকার সময় তাঁর শেষ ভাস্কর্য দুর্গামূর্তিটি গড়েছিলেন।

একটি গানের গল্প

সব্যসাচী বন্দ্যোপাধ্যায়

একবার অনেক রাত্রে পুলক বন্দ্যোপাধ্যায় হেমন্তর মুখোপাধ্যায়ের বাড়ি গিয়েছেন।ইচ্ছে পরের দিন সকালে হেমন্তর পুজোর গান তৈরি করে ফিরবেন।রাত্রে শুয়েছেন দুজনে।পরের দিন খুব ভোরে ঘুম ভেঙেছে পুলকের। দেখেন পাশে হেমন্তদা নেই।হেমন্ত মুখোপাধ্যায় তখন বারান্দায়।পুলক বন্দ্যোপাধ্যায় সেখানে যেতেই হেমন্ত মুখে আঙুল দিয়ে চুপ করতে বললেন।সামনে আঙুল দিয়ে দেখালেন।পুলক দেখলেন যে লেক থেকে একটি মেয়ে চান করে আসছে।গা মাথা দিয়ে জল ঝরছে।ভিজে কাপড়।হেমন্তর বাড়ির সামনে একটা বড়ো কৃষ্ণচূড়া গাছের নীচে দাঁড়িয়ে সেই মেয়েটি। দৃশ্যটি দেখে পুলক লিখলেন সেদিন তোমায় দেখেছিলাম ভোরবেলায়’। কিছুক্ষণের মধ্যেই হেমন্ত সুর করলেন।সেই গান রেকর্ড করলেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়।বাকিটা আজ ইতিহাস। ১৬ জুন ২০২২ হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের জন্মদিনে আমার প্রণাম রইলো।

আপনিও হয়ে উঠতে পারেন নামী লেখক। ছোট গল্প , কবিতা , শিক্ষামূলক লেখা পাঠান আমাদের ই-পোর্টালের মেইল আইডিতে। বিভাগীয় সম্পাদক ,’ শনিবারের বিকেল’ times.14.2020@gmail.com

 

- Advertisement -

সম্পর্কিত খবর

- Advertisement -

ট্রেন্ডিং

close