এবার নয়া প্রযুক্তি ব্যান্ডেল স্টেশনে। ইলেকট্রনিক ইন্টারলকিং সিস্টেম দেশের মধ্যে তো আছেই। দেশের মধ্যে প্রায় একশোটি স্টেশনে এই ইআইএস সিস্টেমটি চালু রয়েছে। এবার থেকে এই ব্যবস্থা চালু করা হবে ব্যান্ডেল স্টেশনেও। বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বড় রুট রয়েছে ব্যান্ডেলেই। আমাদের রাজ্যে খড়্গপুড়ে রয়েছে মোট ৮০০ টি রুট। ব্যান্ডেল স্টেশনে এবার সেটিই ১ হাজার ২ টি রুট করা হল।
সূত্রের খবর, আগামী ৩০ মে থেকে এই ইলেকট্রনিক ইন্টারলকিং সিস্টেমটি চালু করা হবে ব্যান্ডেল স্টেশনে। জানা গিয়েছে, ওই দিন পূর্ব রেলের রেল সেফটি ম্যানেজার স্টেশন পরিদর্শন করবেন এবং তারপর আনুষ্ঠানিক ভাবে উদ্বোধন করা হবে এই বিশেষ ব্যবস্থার। উল্লেখ্য, এর আগে ব্রিটিশ আমলে চালু হওয়া রুট রিলে ইন্টারলকিং সিস্টেমটি বাতিল করা হবে। তার বদলে চালু করা হবে এই নয়া ইআইএস সিস্টেম।
আগে যে সিস্টেমটি ছিল, সেটি ছিল পুরোপুরি ম্যানুয়াল। এবারের নতুন সিস্টেমটি চলবে পুরোপুরি ইলেকট্রনিক ব্যবস্থার মাধ্যমে। এই সিস্টেম চালুর ফলে ট্রেনের গতি বাড়বে। পাশাপাশি, আরও বেশি সংখ্যক ট্রেন চালানো যাবে এই সিস্টেম চালুর ফলে। এবার থেকে ট্রেনের ইন্ডোর মেইনটেনান্স-এর জন্য আর কোনও লোকের প্রয়োজন হবে না। এর ফলে ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটার প্রবণতা কমে যাবে অনেকাংশেই। রেল ইঞ্জিনিয়াররা জানিয়েছেন, এরপর থেকে শীতকালে কুয়াশাতেও সিগন্যালে আর কোনও রকম সমস্যার সৃষ্টি হবে না।
উল্লেখ্য, রবিবার রেলের আধিকারিক এবং নির্মাণকারী সংস্থার ইঞ্জিনিয়াররা ব্যান্ডেল স্টেশনের এই নয়া প্রযুক্তি ইলেকট্রনিক ইন্টারলকিং সিস্টেমের কাজ খতিয়ে দেখেন। দুটি বড় প্যানেল বোর্ড বসানো হয়েছে ইআইএস-এর কেবিনে, যার দ্বারা পুরো সিস্টেমটি অপারেট করা হবে। জানা গিয়েছে, পরম এন্টারপ্রাইজ এই আধুনিক ইন্টারলকিং সিস্টেমের কাজ করছে। জার্মানি প্রযুক্তির এই কাজ সম্পন্ন করেছে সিমেনস। এদিন রেলের এসএসসি সিগন্যাল ওয়ার্কস হাওড়ার অনিল কুমার মণ্ডল জানান, “রেলের নিরাপত্তা এর আগেও চালু ছিল। তবে, এই আধুনিক ব্যবস্থার ফলে নিরাপত্তা আরও জোরদার হবে। এটা অত্যাধুনিক একটি ব্যবস্থা যা এর আগে কোথাও হয়নি। আগে ছিল ব্রিটিশ ইন্টারলকিং সিস্টেম, সেটা পরিবর্তন করে এই নতুন ব্যবস্থা আনা হয়েছে। ট্রেন কতদূর যাচ্ছে বা আসছে তা লক্ষ্য করা যাবে মনিটরে। কাজ চলবে ড্যুয়াল সিস্টেমে। একটা কোনও কারণে খারাপ হলে আরেকটা অটোমেটিক কাজ করা শুরু করে দেবে।”
এই আধুনিক ব্যবস্থার কাজে কর্মরত পরম এন্টারপ্রাইজের এম ডি পুনীত পাঠক এই ব্যাপারে বলেন, “দেশের মধ্যে আর কোথাও এই ইন্টারলকিং সিস্টেম ব্যবহার করা হয়নি। বিশ্বেও এটি প্রথম। খড়্গপুরে এর আগে করা হয়েছে। তবে সেটা এত বড় আকারে নয়। এর ফলে অনেক বেশি গতিতে ট্রেন চলাচল করবে।” পাশাপাশি সিমেনসের কৃষ্ণার্জুন চট্টোপাধ্যায় জানান, “ব্যান্ডেল স্টেশনে আমরা ইআইএস চালু করতে চলেছি খুব শীঘ্রই। ব্যান্ডেল থেকে হাওড়া, বর্ধমান, কাটোয়া, এবং নৈহাটি লাইন রয়েছে। এই রুটগুলিতে এখন থেকে অনেক বেশি ট্রেন চলবে এবং ট্রেনগুলির গতিও বৃদ্ধি হবে। তবে, আগে দেখা হবে যাত্রীদের সুরক্ষা। এই নয়া সিস্টেম চালু করার জন্য, ট্র্যাক থেকে বিদ্যুৎ সব কাজের জন্যই ২৭-২৯ মে ব্যান্ডেল স্টেশনে ট্রেন চলাচল পুরোপুরি বন্ধ রাখা হবে। আগামী দিনে যদি রেল চার পাঁচটা স্টেশনকে নিয়ে ট্রাফিক কন্ট্রোল সিস্টেম চালু করতে চায় তাহলে ইআই এর অনেক সহায়তা করবে। কোনও কারণবশত যদি ট্রেনের ড্রাইভার সিগন্যাল বুঝতে না পারেন, তাহলেও কোনও অসুবিধা হবে না।”