Durga Pujo, 2022 : করোনার দু’বছর পরে মাতোয়ারা বাঙালি

আরও পড়ুন

দুর্গাপুজোর আর মাত্র ১০০ দিন বাকি, আজ থেকে ঠিক একশো দিন বাদে মা আসছেন তাঁর বাপের বাড়ি। এই যে মা আসছেন-আসছেন, এই অনুভূতিটা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। কিন্তু এক আজব আনন্দে মনটা কেমন লাফিয়ে ওঠে! মোটের উপরে শুরু হয়ে যায় প্ল্যানিংও। কোন-কোন দুর্গাপুজো প্যান্ডেল দেখা হবে, পুরো রাত যেদিন বেরনো হবে, সেদিন উত্তরে ঢুঁ মারা হবে, না দক্ষিণ চষে ফেলা হবে, সেই নিয়ে চায়ের আড্ডাও জমে উঠেছে ইতিমধ্যে। সঙ্গে শপিং লিস্টও তো ফাইনাল করতে হবেই! সব মিলিয়ে মায়ের এই আগমন বার্তা আমাদের এই ‘থোড় বড়ি খাড়া আর খাড়া বড়ি থোড়’-এর বোরিং জীবনে হঠাৎ করে খুশির আমেজ নিয়ে আসে।

আর মাত্র তিন মাস পর ঢাকে কাঠি পড়বে। মা আসছেন বছর ঘুরে। আশ্বিনের শারদ প্রাতের অপেক্ষায় প্রতিটি বাঙালি। ”করোনা মহামারীর দ্বিতীয় ঢেউয়ে এবারও বাঙালির সব থেকে বড় উৎসব দুর্গোৎসবে ভাঁটা পড়তে চলেছে। কুমোরটুলিতে দুর্গার বায়না নেই। থিম পুজোর ভাবনা নিয়ে মাতামাতি নেই। তারওপর তৃতীয় ঢেউয়ের ভ্রূকুটি। নমঃ নমঃ করে পুজো করা হবে বলেই আভাস পাওয়া যাচ্ছে”, এমনি চিন্তা ছিল ২০২১ সালে। কিন্তু এবছর হয়তো পুজোর প্রস্তুতি একটু অন্যরকম হবে বলে মনে করছেন সবাই।

কলকাতার দুর্গাপুজোকে স্বীকৃতি দিয়েছে ইউনেস্কো। বিশ্বের মঞ্চে সেরার স্বীকৃতি পাওয়ার সাফল্য উদযাপন করতে রাজপথে নেমেছিল কলকাতার ছোট থেকে বড় সব পুজো কমিটির সদস্য এবং শিল্পীরা। বর্ণাঢ্য সেই শোভাযাত্রা দেখতে উপচে পড়েছিল ভিড়। আর তারপর থেকেই যেন পুজো নিয়ে বাড়তি আশা তৈরি হয়েছে মানুষের মধ্যে। ফলে এ বারের পুজো যে অনেক বড় আকারে হবে এবং তা দেখতে অন্য রাজ্য বা দেশ-বিদেশ থেকেও মানুষ আসতে পারেন, তা অনুমান করাই যায়। পুজোর মাত্র ১০০ দিন বাকি, ফলে কাজও শুরু হয়ে গিয়েছে মণ্ডপে মণ্ডপে। ঠিক হয়েছে থিম। কোথাও কোথাও ইনস্টলেশনের কাজও শুরু হয়েছে। কিন্তু সময় এখনও অনেক বাকি, তাই এতদিন আগে বেশিরভাগ পুজো কমিটির সদস্যরাই থিম প্রকাশে অনিচ্ছুক। তবে জানা গিয়েছে বেশ কিছু থিমের পোশাকি নাম।

ফেসবুকে ফোরাম ফর দুর্গোৎসবের গ্ৰুপ জানিয়েছে, দুর্গাপুজোর কাউন্টডাউন শুরু হয়ে গিয়েছে। এবছর কী কী নিয়ম মেনে পুজো করা হবে তার বিধি নিষেধ তৈরির প্রস্তুতি খুব শীঘ্রই তাঁরা শুরু করবেন। রাজ্যের মন্ত্রী এবং পুর প্রশাসক ফিরহাদ হাকিম চেতলা অগ্রণীর দায়িত্বে রয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন,”এবছর জাঁকজমকভাবে পুজো করার সঠিক সময় নয়। মৃৎ শিল্পীদের সঙ্গে কথা হয়েছে, অন্যবারের থেকে ছোট আকৃতির প্রতিমা গড়তে বলা হয়েছে।” একডালিয়া এভারগ্রিনের আয়োজক, মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন,”আমাদের পুজোর আকর্ষণের কেন্দ্রই হল আলোকসজ্জা। গোটা দক্ষিণ কলকাতায় যা আর কোথাও হয় না। আমরা বলেছি এবার যেন সেই আয়োজন ছোট করেই করা হয়। পুজোর প্যান্ডেলও ছোটই হবে।”

কলকাতার অন্যতম বড় পুজো দক্ষিণের নাকতলা উদয়ণ সঙ্ঘ, এ বারে তাদের মণ্ডপসজ্জার দায়িত্বে শিল্পী প্রদীপ দাস। প্রদীপের হাতে সেজে উঠবে দমদম তরুণ দলও। শিল্পী ভবতোষ সুতারের ছোঁয়ায় রূপ পাবে অর্জুনপুর আমরা সবাই এবং তাঁর হাতেই তৈরি হচ্ছে সিকদার বাগানের প্রতিমা। সনাতন দিন্দা সাজিয়ে তুলছেন বকুলবাগান এবং তাঁর হাতের সেজে উঠবেন হাতিবাগান সর্বজনীনের প্রতিমাও। সুব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় সুরুচি সঙ্ঘের সর্বাঙ্গীণ রূপায়ণের দায়িত্বে। শিল্পী পার্থ দাশগুপ্তের হাতে সেজে উঠবে ঠাকুরপুকুর এসবি পার্কের প্রতিমা এবং মণ্ডপ। বিশ্বনাথদের হাতে কুমোরটুলি সর্বজনীন এবং খিদিরপুর পল্লী শারদীয়া এবং কালীঘাট মিলন সংঘের মণ্ডপ এবং প্রতিমা সাজিয়ে তোলার দায়িত্ব। অনির্বাণ দাস সাজিয়ে তুলবেন গড়িয়াহাট হিন্দুস্থান ক্লাব, দমদমপার্ক ভারতচক্র, পূর্বাচল শক্তিসংঘ এবং আলিপুর ৭৮ পল্লী। রিন্টু দাসের হাতে সেজে উঠছে সুরুচি সংঘ এবং বড়িশা ক্লাব। উত্তরের উত্তর ১০২ বছরে পা দেওয়া টালা বারোয়ারি সাজিয়ে তুলছেন শিল্পী সঞ্জীব সাহা।

অন্যদিকে, ভবানীপুর ৭৪ পল্লী পুজোর আয়োজক এবং সভাপতি সুবীর দাস জানিয়েছেন, “করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে আমরা এবার এত মানুষকে হারিয়েছি যে বড় করে পুজো করতে আর মন চাইছে না। সকলেই সুসময়ের অপেক্ষা করছি। ‘মনুষ্যত্ব’ হবে এবারের থিম।” ত্রিধারা সম্মিলনীর আয়োজক রাসবিহারীর বিধায়ক দেবাশিস কুমার জানিয়েছেন, “শুধু মা দুর্গার পুজোর জন্যই যাবতীয় আয়োজন হবে। এছাড়া, আর কোনও বড় আয়োজন হবে না।”

গতবছর, পরিযায়ী শ্রমিক মায়ের মূর্তি বানিয়ে যাঁরা খ্যাতি পেয়েছিল এস বি পার্ক ঠাকুরপুকুরের সেই পুজোর আয়োজক কর্তারা জানিয়েছেন, ”নান্দনিক পরিমিতিকে আমরা এবছর পুজোর থিমে তুলে ধরব”।

কিন্তু বাঙালি তো, দুর্গাপুজো মানেই বড় পুজো। ১০০…৯৯…৯৮…৯৭…শুরু হয়ে গিয়েছে বিশ্বজনীন দুর্গাপুজোর কাউন্টডাউন। ২০২০ এবং ২০২১ সালে করোনার জন্য পুজো হলেও, জাঁকজমক সেভাবে হয়নি। মানুষ ঠাকুর দেখলেও, মনের মধ্যে সংক্রামিত হওয়ার ভয় ছিলই। কিন্তু এ বারে ভয়ের মতো পরিস্থিতি এখনও নেই। সম্প্রতি করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেশ কিছুটা বাড়লেও, টিকা নেওয়ার প্রক্রিয়া অনেকটাই এগিয়েছে। তাই পুজো উদ্যোক্তাদের থেকে শুরু করে থিমমেকাররা, সকলেই আশাবাদী। দু’বছরের বাধা কাটিয়ে লাভের মুখ দেখার আশায় কুমোরটুলির মৃৎশিল্পীরাও।

সবমিলিয়ে বলা যেতেই পারে, গতবারের থেকেও এবার অনাড়ম্বর পুজো দেখতে চলেছি আমরা।

ফোর্টিন ওয়েব ডেস্ক, কলকাতা।

- Advertisement -

সম্পর্কিত খবর

- Advertisement -

ট্রেন্ডিং

close