ভারতীয় রেলের পরিকাঠামোয় একাধিক উন্নতমানের প্রযুক্তির কাজ চলছে বেশ কিছুদিন ধরেই। উল্লেখ্য, যাত্রীদের সুবিধার্থেই এইসব বদল আনা হচ্ছে রেল পরিষেবায়। ভারতের বিভিন্ন স্টেশনগুলিকে বিশ্বমানের গড়ে তোলার লক্ষ্যে রেলমন্ত্রকের তরফ থেকে নেওয়া হচ্ছে একাধিক উদ্যোগ। গণপরিবহনের ক্ষেত্রে রেল পরিষেবা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। সূত্রের খবর, এবার কলকাতা, আসানসোলের পর আন্তর্জাতিক অর্থাৎ বিশ্বমানের স্টেশন হিসেবে গড়ে তোলা হবে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতি বিজড়িত বোলপুর স্টেশন।
শুধু বোলপুর স্টেশনই নয়, পাশাপাশি রানিগঞ্জ, বহরমপুর কোর্ট এবং সুলতানগঞ্জ স্টেশনের আনা হচ্ছে পরিবর্তন। উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতায় আসবার পর থেকেই একের পর এক বিশ্বমানের সড়ক, রেল, উন্নতমানের ব্রিজ তৈরি করে চলেছে কেন্দ্রীয় সরকার। এবার ভারতের রেল পরিষেবাকে আরও বৃহৎ, সুদৃশ্য এবং সুগম করে তোলার এই উদ্যোগ নিয়েছে রেল মন্ত্রক।
জানা যাচ্ছে, রেল পর্ষদ থেকে এই বিষয়টি নিয়ে অনুমোদন দিলেই শুরু হয়ে যাবে এই আন্তর্জাতিক মানের কর্মকাণ্ড। উল্লেখ্য, বোলপুর শান্তিনিকেতন রেলওয়ে স্টেশন বীরভূম জেলার একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ স্টেশন। বোলপুর এবং শান্তিনিকেতন এই স্টেশনের দ্বারা কলকাতা এবং অন্যান্য বড় শহরগুলির সঙ্গে যুক্ত। রেলস্টেশনগুলিকে বিশ্বমানের স্টেশন গড়ে তুলতে খরচ হতে পারে ২৫০-৩০০ কোটি টাকা, খবর সূত্রে এমনটাই জানা গিয়েছে। এই বিরাট কর্মকাণ্ড সম্পন্ন হতে সময় লাগতে পারে প্রায় আড়াই থেকে তিন বছর।
এ প্রসঙ্গে পূর্ব রেলের প্রধান ইঞ্জিনিয়ার আশিষ ভরদ্বাজ জানান, “রেল কর্তৃপক্ষ পূর্ব রেলের মোট ১০টি রেলস্টেশনকে বিশ্বমানের স্টেশন হিসেবে গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই ১০টি স্টেশনের মধ্যে আসানসোল, ভাগলপুর এবং হাওড়া স্টেশনের ক্ষেত্রে টেন্ডার করে ডিপিআর গঠন করা হয়েছে। বাদ বাকি অন্যান্য স্টেশনগুলির ডিপিআর খুব শীঘ্রই নির্মাণ করা হবে। পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হওয়ার পর স্টেশনগুলির ভোল পাল্টে যাবে রীতিমতো। একাধিক সুবিধা পাবেন রেলযাত্রীরা।”
কি কি পরিবর্তন আসবে রেলস্টেশনগুলিতে? বিশ্বমানের এই রেলস্টেশনগুলি গড়ে উঠবে বিমানবন্দরের আদলে। স্টেশনের যাত্রী প্রতীক্ষালয়গুলি হয়ে উঠবে ঝকঝকে, তাক লাগানো। পাশাপাশি থাকবে একাধিক কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা। এখনও পর্যন্ত স্টেশনের প্রবেশ দ্বার এবং প্রস্থানের দ্বার একটাই, কিন্তু বিশ্বমানের হওয়ার পর তাতে বদল আনা হবে৷ স্টেশনে ঢোকার জন্য থাকবে আলাদা গেট এবং বেরোনোর জন্য নির্মিত হবে আলাদা রাস্তা।
রেলস্টেশনগুলিতে ওঠার জন্য বা ওভারব্রিজে ওঠানামার জন্য আর থাকবে না সিঁড়ি। তার জায়গায় বসানো হবে এস্কেলেটর এবং লিফট। এ নিঃসন্দেহে এক বিরাট সুবিধা। বিশেষত, বয়স্ক মানুষ এবং অসুস্থ ব্যক্তিদের জন্য তা বিরাট সুবিধার হবে। এছাড়াও, বিশেষভাবে সক্ষম ব্যক্তিদের জন্য থাকবে আলাদা বন্দোবস্ত। ওভার ব্রিজগুলিকে আরও চওড়া করা হবে এবং তা মোটা কাঁচ দিয়ে আচ্ছাদিত থাকবে।
বড় বড় স্টেশনগুলিতে ট্রেন ধরবার ক্ষেত্রে যাত্রীদের একটি বড় সমস্যা হল কোন প্ল্যাটফর্মে ট্রেন এসে দাঁড়াবে। এ নিয়ে বিস্তর সমস্যায় পড়েন এবং হয়রান হন রেলযাত্রীরা। বিশ্বমানের স্টেশন হওয়ার পর সেই সমস্যার সমাধান হবে অনেকাংশেই। যাত্রীদের ট্রেন কোন প্ল্যাটফর্মে কখন এসে দাঁড়াচ্ছে তা দেখানোর জন্য বসানো হবে বিশেষ মনিটর। যাত্রীরা শীততপ নিয়ন্ত্রিত কাঁচের ঘরে বসেই তা লক্ষ্য করতে পারবেন। থাকবে ইন্টারনেট পরিষেবা, পরিশুদ্ধ পানীয় জলের ব্যবস্থা।
- এছাড়াও পরিবর্তন আনা হবে স্টেশনের ভোজনালয় অর্থাৎ ক্যান্টিনে। দুপুরের খাবার এবং রাতের খাবারের জন্য স্টেশনে তৈরি করা হবে বিশেষ ক্যাফেটেরিয়া এবং উন্নতমানের রেঁস্তোরা। থাকবে আধুনিক প্রযুক্তি যুক্ত বাথরুমের ব্যবস্থা। স্টেশনে তৈরি করা হবে বিরাট শপিং মল। তাতে শুধু রেলযাত্রীরাই নন, বহিরাগতরাও সেখানে স্বচ্ছন্দে কেনাকাটা করতে পারবেন। পুরো ব্যপারটি সিসিটিভি-র (CCTV) নজরের অধীনে থাকবে। এককথায় বিশ্বমানের স্টেশন হলে তা হবে চোখ ধাঁধানো। রেল কর্তৃপক্ষ ঢেলে সাজাবে স্টেশনগুলিকে।
সৌন্দর্যের নিরিখে এই বিশ্বমানের স্টেশনগুলি হয়ে উঠবে নজরকাড়া। উল্লেখ্য, বিশ্বমানের স্টেশন তৈরির খবর শুনে কার্যত খুশি বোলপুর, রানিগঞ্জ, বহরমপুর এবং সুলতানগঞ্জের বাসিন্দারা। তবে, অনেকেই আবার এর প্রতিবাদ করে জানিয়েছেন, স্টেশন বিশ্বমানের না তৈরি করে কয়েকটা দূরপাল্লার ট্রেন বাড়ানো হোক। বহরমপুরবাসীদের মত, আগে বহরমপুর টু কলকাতা ট্রেনের ব্যবস্থা করা হোক। বহরমপুর কোর্ট স্টেশনে এর আগেও নাকি চলমান সিঁড়ির ব্যবস্থা করা হয়েছিল, কিন্তু কদিন চলার পরেই তা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। এসব নানা কারণেই কটাক্ষ করেছেন বহু সাধারণ মানুষ।