শরীর খুবই অসুস্থ , শরীরে যন্ত্রণা হচ্ছে। তাই একটি বুনো হনুমান চিকিৎসা করাতে নিজেই সোজা চলে এল ডাক্তারবাবুর চেম্বারে। শুধু তাই নয়, ডাক্তারবাবুকে ইশারা করে তার চোখের সমস্যাও দেখিয়ে দিল। শরীরের আর কোথায় অসুবিধা সেটাও দেখিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে সেই বুনো হনুমান। তখনই ডাক্তারবাবু পশু চিকিৎসকের সাথে টেলিফোনে যোগাযোগ করে ওষুধ দেন। ওষুধ নিয়ে টানা প্রায় দুঘণ্টা বেডে শুয়ে থাকে হনুমানটি। ঘটনাটি ঘটেছে বাঁকুড়ার সিমলাপালের দুবরাজপুর গ্রামের গ্রামীন চিকিৎসক অনিমেষ পালের চেম্বারে।
দুপুর বারোটা নাগাদ ডাক্তার অনিমেষ পালের চেম্বারে গিয়ে দেখা যায়, মাঝবয়সি একটি হনুমান রোগীদের বসার আসনে শুয়ে আছে। তাকে দেখে অনেকেই এনেছেন কলা, কেউবা এনেছেন আপেল। কিন্তু কোন কিছুই খাচ্ছেনা হনুমানটি। বারবার চোখ এবং মাথায় হাত দিয়ে কিছু একটা বোঝাতে চাইছে সে।
এ বিষয়ে গ্রামীণ চিকিৎসক অনিমেষ পাল জানান, “হনুমানটিকে চেম্বারের দিকে আসতে দেখে ভয়ে আমি দরজা বন্ধ করে দিই। এরপর হনুমানটি চেম্বারের পাশেই একটি জলের ট্যাপ খুলে জল খায়, তারপর ট্যাপটি যথারীতি বন্ধ করে দেয়। যা দেখে উপস্থিত অন্তত কুড়ি জন মানুষ হতবাক হয়ে যান। তারপর এসে হনুমানটি বারবার আমার দরজায় ধাক্কা মারতে থাকে। দরজা না খোলায় রেগে পাশে থাকা সাইকেল গুলোকে উল্টিয়ে দেয়। এরপর দরজা খুলতেই হনুমানটি রুগীদের ভিড় ঠেলে সরাসরি আমার টেবিলের উপর আমার মুখোমুখি বসে। ওষুধের খাপ নিয়ে আমাকে ইশারা করে দেখিয়ে বলে- ওষুধ দাও। শুধু তাই নয় চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখায় চোখে যন্ত্রণা হচ্ছে এমন কিছু”।
খবর পেয়ে অনেকেই বিভিন্ন রকমের ফল খেতে দেয় হনুমানটিকে। কিন্তু কোনো ফল না খেয়ে ইলেকট্রিক ফ্যানের নিচে বাতাসে চুপচাপ শুয়ে থাকে সে। একবার ইশারা করে ফ্যানের স্পিড বাড়াতে বলে। পরে পশু চিকিৎসকের পরামর্শ মতো চিকিৎসক চোখে আই ড্রপ দেন। ব্যথানাশক ওষুধ হনুমানটি নিজেই খেয়ে নেয়। পরে খবর পেয়ে বনদপ্তরের কর্মীরা ঘটনাস্থলে যান। দুপুর ২ টো নাগাদ দুবরাজপুরের বিট অফিসার ডাক্তার বাবুর চেম্বার এ এলে হনুমানটি মোটরসাইকেলে চেপে বিট অফিসারের সঙ্গে ফরেস্ট অফিসে চলে যায়। কিন্তু যন্ত্রণা বাড়তে থাকায় ফের হনুমানটি বিকেল পাঁচটা নাগাদ ডাক্তার বাবুর চেম্বার এ একইভাবে এসে শুয়ে থাকে। রাতে হনুমানটি ডাক্তার বাবুর চেম্বারের পাশাপাশি এলাকায় ছিল। শুক্রবার হনুমানটিকে দেখতে পাওয়া যায়নি বলে দুবরাজপুর গ্রামের একাধিক বাসিন্দা জানান।
তবে এই বিষয়ে সারেঙ্গা রেঞ্জ অফিসার সুরজিৎ কুমার মজুমদার জানান,” হয়তো এই প্রখর রোদে এই হনুমানটি অসুস্থ বোধ করছিল বা জল খাবার জন্য দুবরাজপুর এলাকায় ওই চিকিৎসকের চেম্বারে ঢুকে পড়েছিল “। জানা গেছে, বর্তমানে হনুমাটিকে দুবরাজপুর বিট এলাকার থেকে সারেঙ্গা রেঞ্জে আনার পর চিকিৎসা করিয়ে বর্তমানে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে হনুমানটিকে এবং পরে তাকে জঙ্গলে ছেড়ে দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।