চাঁচলের মরা মহানন্দা নদী খাতে পাট্টা, তৎকালীন বাম সরকারকে কাঠগড়ায় তুললেন মন্ত্রী, দোষ ঢাকতে দোষারোপ পালটা সিপিআইএম, খোঁচা বিজেপির।ভুল করেছে বামেরা তার খেসারত দিতে হচ্ছে তৃণমূলকে। মরা মহানন্দায় পাট্টা দেওয়া নিয়ে বামেদের বিরুদ্ধে আক্রমণ চালালেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দপ্তরের প্রতিমন্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন। তবে দখলমুক্ত করার জন্য পাট্টা ভাঙার বিষয় নিয়ে মুখ না খুললেও প্রশাসনিক স্তরে আলোচনায় বসবেন তিনি বলে আশ্বাসবানী শুনিয়েছেন।
কয়েকদশক ধরে দখল হতে হতে এখন পুরোটাই দখল হয়েছে চাঁচলের একমাত্র জল নিকাশির মরামহানন্দা। নদীর জলাশয়ের পাট্টা তুলে দেওয়া হয় মানুষের হাতে। সেই পাট্টার ভিত্তিতে নদীরবুকে খুটিগেড়ে বসে রয়েছে ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে আবাসিকরা বলে অভিযোগ। বর্ষা আসলেই জল নিকাশি নিয়ে পঞ্চায়েতকে দুষছেহ এলাকাবাসী। বাসিন্দাদের অভিযোগের ভিত্তিতে পঞ্চায়েতের তরফে মরামহানন্দা দখলমুক্ত করতে যাওয়া হলে ঘুরে আসতে হয়। দখলকারীরা দাবি করেন, তাদের পাট্টা রয়েছে। সপ্তাখানেক আগে দখলকারীদের মুখ থেকে এই কথা শুনে পঞ্চায়েত প্রধান ও উপপ্রধানকে এভাবেই ঘুরে আসতে হয়।
নদীর খাতে কিভাবে পাট্টা হল, তা নিয়ে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দপ্তরের প্রতিমন্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিকে প্রশ্ন করা হলে তিনি অভিযোগের কাঠগড়ায় দাঁড় করান ৩৪ বছরের রাজ্যের অপসারিত বামফ্রন্ট সরকারকে। মন্ত্রী অভিযোগ করে বলেন, চাঁচলের মরামহানন্দার পাট্টা আমাদের দেওয়া নয়। সেগুলো বাম জমানায় হয়েছে। বেনিয়মভাবে যত্রতত্রভাবে তা বিলি করা হয়েছে।বর্তমানে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে হাজার হাজার মানুষ। চাঁচলের জল নিকাশির সবচেয়ে বড় মাধ্যম হল মরামহানন্দা। কিন্তু সেটিতে গজিয়ে উঠেছে স্থায়ী-অস্থায়ী ঘরবাড়ি।স্থানীয় প্রশাসনকে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে বলব।
শাসকদলের মন্ত্রীর এহেন অভিযোগকে নস্যাৎ করে কাঠগড়ায় তুলেছে সিপিআইএম।সিপিঅআইএমের মালদা জেলা কমিটির সদস্য মনোওয়ারুল আলম অভিযোগ করে বলেন, শাকের ভেতর মাছ লুকাতে ব্যস্ত তৃণমূল। নিজেদের দুর্নীতি আড়াল করার জন্য আমাদের উপর দোষ চাপাচ্ছে মন্ত্রী। চাঁচলের মরা মহানন্দা দখলমুক্ত করার জন্য বারবার আন্দোলন চালিয়েছি।যদিও আমাদের আমলে পাট্টা দেওয়া হয়ে থাকে, সেই পাট্টা মানুষের স্বার্থে ভাঙা দরকার সরকারের। কাজ না করে অন্যের পর কাঁদা ছুড়ছেন মন্ত্রী।শহরবাসীর স্বার্থে পাট্টা ভাঙুক সরকার। বর্ষার আগে নদী দখলমুক্ত না হলে,বন্যা পরিস্থিতি হয়ে দুয়ারে দুয়ারে জল যন্ত্রণা দেখা দিবে বলে আশঙ্কা করছেন চাঁচলের বাসিন্দা দীপক চ্যাটার্জী।
মহানন্দার নাট্যমঞ্চে সবটাই শাসকদলের নাটক বলে কটাক্ষ করেছেন বিজেপি।
চাঁচলের বিজেপি নেতা প্রসেনজিৎ শর্মা বলেন, তৎকালীন সরকার ভুল করলে বর্তমানের উচিত সংশোধন করা। তবে দখলকারীদের মুনাফা পেতেই কাজ আটকাচ্ছে তৃণমূল নেতারা।যদিও এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সাংবাদিকদের ক্যামেরায় মুখ দেখাতে চায়নি চাঁচল-১ নং ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার দপ্তরের আধিকারিক অরিজিৎ দাস। তবে তিনি মৌখিকভাবে জানান, ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে পাট্টা গুলি দেওয়া হয়েছে, এখনকার নয়।
চলছে শাসক-বিরোধীর তর্জা। আর এই সুযোগে মরামহানন্দা দখল করে নির্মাণ করছে অট্টালিকা। এখন দেখার বিষয়,কবে চাঁচলের মরামহানন্দা নিজের স্বমহিমায় ফিরতে পারে, প্রশাসনের উপর আস্থা রেখে মুখ চেয়ে চাঁচলবাসী।