নীলচাষের কথা ইতিহাসে বইয়ের পাতায় আমরা সবাই পড়েছি ।নীল চাষের কথা বললেই উঠে আসে ইংরেজদের ভয়াবহ অত্যাচারের কাহিনী,ভারতের চাষিদের ওপর নীলকরদের অন্যায়-অবিচার। মালদা শহর থেকে প্রায় ৭০ কিলোমিটার দূরে রয়েছে এই নীলকুঠি, বামনগোলা ব্লকে মদনাবতী অঞ্চলে ছিল নীলকুঠি। এই নীলকুঠির সে সময় দায়িত্বে ছিলেন উইলিয়াম কেরি। সেই সময়ে ইতিহাস বলে সম্পূর্ণ ভিন্ন্য কথা। তিনি বাংলাকে নাকি ভালোবেসেছিলেন হৃদয় থেকে। সেই সময় মদনাবতীর নীলকুঠি এলাকার মানুষের স্বার্থে , নিজের উদ্যোগে শুধু ভাষা নয়, শিক্ষা-স্বাস্থ্যের উন্নতির দিকে এগিয়ে এসেছিলেন উইলিয়াম কেরি। সমাজ থেকে কুসংস্কার দূর করতে উইলিয়াম কেরি সমস্তরকম চেষ্টা চালিয়েছিলেন । ইংরেজদের আমলে উইলিয়াম কেরি সাহেব মদনাবতীর ওই নীলকুঠি এলাকার মানুষকে নতুন করে বাঁচার সাহস জুগিয়েছিলেন। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বদলেছে পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি এবং নয়া প্রজন্মের মানসিকতা। তাই উইলিয়াম কেরির স্মৃতি বিজড়িত ওই নীলকুঠি আজ কার্যত ধ্বংসের মুখে । তৎকালীন নীলকর সাহেবদের অত্যাচারের কাহিনী কৃষকেরা হাড়ে হাড়ে উপলব্ধি করলেও সমাজ সাংসারিক হিসেবে উইলিয়াম কেরিকে মনে রেখেছেন অনেকেই।
সাম্প্রতিককালের ওঠা অভিযোগে বলা হয়েছে – নীলকুঠির ভগ্নাবশেষে মানুষের স্বেচ্ছাচারিতার ছবি স্পষ্ট। ইতিহাসপ্রেমী সহ- বহু মানুষের অভিযোগ, কেরি সাহেবের স্মৃতি বিজড়িত নীলকুঠিটিকে যখন খোঁজা হচ্ছে, তখন নীলকুঠির ভগ্নাবশেষের গায়ে গোবরের ঘুঁটে দিচ্ছেন কিছু মানুষ। বরং এর ফলে ইতিহাসের গন্ধ মাখা নীলকুঠির ভগ্নাবশেষের পাঁজরের ইটগুলিও নষ্ট হওয়ার পথে। অনেকে ক্যামেরার সামনে আসতে না চাইলেও অভিযোগ করে বলেন, এর জন্য যেমন দায়ী কিছু স্থানীয় বাসিন্দারা অন্যদিকে তেমনই প্রশাসনিক নিষ্ক্রিয়তার বিরুদ্ধেও অভিযোগ উঠেছে।
জনশ্রুতিতে আছে -উইলিয়াম কেরি , নীলকুঠির ম্যানেজার হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন। মালদহের বামনগোলা ব্লকে মদনাবতী অঞ্চলের নীলকুঠিতে, প্রথম আসেন ১৭৮৪ সালের ১৫ জুন ।ইংরেজদের আমলে সেই জায়গার পরিস্থিতি খুব খারাপ থাকায়,প্রথম উইলিয়াম কেরি ম্যানেজার হয়ে আসার পরে।তিনি চেয়েছিলেন এলাকার গরিব মানুষের স্বার্থে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি ব্যবস্থার উন্নতির জন্য আধুনিক যন্ত্রপাতি-সহ উন্নত বীজ আনানোর ব্যবস্থাও করেন নিজ উদ্যোগেই।
তা আজও স্মরণীয় হয়ে আছে সকলের মনে। শুধু তাই নয়, বাংলা ভাষায় গ্রন্থ ছাপানোর সুবিধার জন্য ১৭৯৮ সালে তিনি ৪০ পাউন্ড দিয়ে একটি কাঠের মুদ্রণযন্ত্র কিনে বসান বামনগোলা ব্লকের নীলকুঠিতে।
তবে ১৭৯৬ সালের ১১অক্টোবর সংক্রমণ ঘটিত রোগে মৃত্যু হয় উইলিয়াম কেরির পাঁচ বছরের পুত্র পিটারের। সেই নীলকুঠি গ্রামে মেঘডুমরা দিঘির ধারে উইলিয়াম কেরির তার প্রিয় পুত্রকে সমাধিস্থ করেছিলেন আজওপিটারের মৃত্যুর স্মৃতি বহন করে চলেছে দিঘির ধারে থাকা সেই সমাধিস্থল।
এই নীলকুঠির ভগ্নাবশেষকে সংস্কার করে তার স্মৃতি ধরে রাখার জন্য ইতিহাসপ্রেমী অনেকেই বলেন, নীলকুঠির কাছে ছিল সুড়ঙ্গ, আজ সেটা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। মুখ খনন করে ইতিহাসকে জাগিয়ে তোলারও কথা বলছেন অনেকেই। আবার কেউ কেউ বামনগোলার মদনাবতীতে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলারও দাবি তুলেছেন। উইলিয়াম কেরি সাহেবের স্মৃতি মদনাবতী এলাকায় ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। প্রশাসনিক উদ্দ্যোগ-ই ইতিহাসকে বাঁচিয়ে রাখতে পারে।