বৈশাখ এসে গেছে মানেই আমের মরশুম শুরু। এখন বঙ্গবাসী অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে আছে মালদার জগৎ বিখ্যাত আমের জন্য। কিন্তু, এই বছর মালদার আমের বাজারে দেখা যাচ্ছে অন্যরকম ছবি। যেহেতু, মালদার আমের খ্যাতি সর্বত্র ছড়িয়ে আছে সেই কারণে জেলার চাহিদা পূরণের পাশাপাশি বিভিন্ন রাজ্য এবং প্রতিবেশী দেশগুলিতে আম রপ্তানি করা হয়। তবে, এবার আমের ফলন ভালো হওয়া সত্ত্বেও আম চাষীদের কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ৷
উল্লেখ্য, এই বছর লাফিয়ে বেড়েছে পেট্রোল ডিজেলের মূল্য। ফলত, মালদা থেকে ভিন্ন রাজ্য এবং দেশগুলিতে আম রপ্তানি করার ক্ষেত্রে যদি পণ্য পরিবহন যথেষ্ট পরিমাণ না হয় তাহলে বিদেশের বাজারে এই আম নিয়ে গিয়ে তেমন লাভ পাওয়া যাবে না বলে আম চাষীরা মনে করছে। প্রসঙ্গত, এই রপ্তানির বড়ো অংশের লাভের পরিমাণ পায় মালদার আম চাষীরা এবং রপ্তানিকারকরা। কিন্তু, এবার জ্বালানির অতিরিক্ত মূল্য বৃদ্ধির ফলে রপ্তানিতে তেমন লাভের আশা ছেড়ে দিয়েছেন বহু আম চাষী। এই সমস্যার জেরে এবার আম চাষী থেকে শুরু করে রপ্তানিকারকরা চাইছে আমের মূল্য অন্ততপক্ষে ২০ শতাংশ বৃদ্ধি করতে। তা না হলে এবার বাইরে আম রপ্তানি করা যাবে না।
জেলা উদ্যান পালন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, গত বছর মালদা জেলায় মোট ৩১ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে আম ফলে। এই বছর ৪৫০ হেক্টর জমিতে আম ফলনের লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। এই বছর গাছে প্রচুর পরিমাণে মুকুল আসায় আমের রেকর্ড ফলন হওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী ছিলেন দফতরের আধিকারিকরা৷ তবে, মাঝে আবহাওয়া খারাপ থাকায় প্রচুর আম নষ্টও হয়েছে এবার৷
মালদার সাহাপুরের এক আম চাষী অনিল দাস জানিয়েছেন, “এই বছরের প্রথম দিকে ব্যাপক পরিমাণ আমের মুকুল এসেছিল গাছে। যেহেতু, এবার করোনার প্রকোপ থেকেও মুক্তি পেয়েছি আমরা, সুতরাং এবার আমের ফলনও ভালো হবে এবং তা বিদেশের বাজারে রপ্তানি করে আমরা যথেষ্ট মুনাফা অর্জন করতে পারব। কিন্তু, আবহাওয়া খারাপ থাকায় আমের ফলন বেশ কমে গিয়েছে। আর, যতটুকু ফলন হয়েছে তা বিদেশের বাজারে রপ্তানির ক্ষেত্রে দেখা দিচ্ছে সমস্যা। ডিজেল পেট্রোলের এই আগুন দামের কারণে পরিবহন খাতে খরচ করে আমের সেই দাম আমরা পাব না। বিদেশের বাজারে আম যদি কিলো প্রতি ১২০-১৫০ টাকা হয়, তবেই লাভের মুখ দেখতে পাব আমরা৷ তা না হলে আম রপ্তানি এবার বন্ধ রাখতে হবে।”
অপরদিকে, মালদার আমের এক আড়ৎদার সৌমেন পোদ্দার জানান, “এ বছর যে হারে ডিজেলের দাম বেড়েছে তাতে গত বছর বিদেশের বাজারে যে আম ১০ টাকা ছিল এবার তার দাম দ্বিগুণ বৃদ্ধি না করলে চরম ক্ষতিগ্রস্ত হবে ব্যবসায়ীরা। এই কারণেই এবার রপ্তানির বিষয় নিয়ে যথেষ্ট চিন্তার কারণ রয়েছে।”