সারাদিন সূর্য্যের তীব্রদাবদাহের পর রাতে নেমে এসেছিল স্বস্তির কালবৈশাখী। আর সেই কালবৈশাখী যেন অভিশাপ হয়ে নামলো গ্রাম্য এলাকার মানুষের জীবনে। স্বস্তির ঝড়ে কোথাও ঝড়লো রক্ত আবার কোথাও ভাঙলো কাঁচা-পাকা গৃহস্থবাড়ি। বাদ পড়েনি হাটবাজারের অস্থায়ী টিনের দোকানেও। গতকাল রাতে কালবৈশাখীর তাণ্ডবে লন্ডভন্ড হয়েছে মালদার চাঁচলের বেশ কয়েকটি গ্রাম পঞ্চায়েতের বহুগ্রাম। সব খুঁইয়ে খোলা আকাশের নিচে ঠাঁই অসহায় মানুষদের।শুক্রবার সকালেই ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনে তৃণমূল বিধায়ক-সহ প্রশাসনিক আধিকারিকরা। ছুড়লেন সাহায্যের আশ্বাসবাণীও।
উল্লেখ্য, চাঁচল ১ নম্বর ব্লকের কলিগ্রাম, ভেবা, ভগবানপুর, আসরাইল-সহ একাধিক গ্রামে ঝড়ের তান্ডবের ছাপ স্পষ্ট। চাঁচলের কলিগ্রামে নূরবিবির বাড়ির টিনের ছাউনি উড়ে গিয়ে রাজ্য সড়কে পড়েছে। কোনরকমে প্রাণে বেঁচেছে গোটা পরিবার। বর্তমানে খোলা আকাশের নীচে ঠাঁই হয়েছে তাদের। পরিদর্শনে গিয়েছিলেন এলাকার পঞ্চায়েত প্রধান রেজাউল খান। তিনি সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন।
একই তান্ডব লক্ষ্য করা গেছে ভগবানপূর অঞ্চলের ভেবা গ্রামে। সেখানে ভেঙেছে বহু বসতবাড়ি। ছারখার হয়েছে আম ও কলাবাগান। নুইয়ে পড়েছে পাটগাছ। এছাড়াও তছনছ হয়েছে বহু পোল্ট্রী মুরগির খামার। ফলে মারা গিয়েছে হাজারো মুরগি। ওই এলাকায় ঝড়ের গতিবেগ এটাই ছিল যে, টিনের চাল উড়ে গিয়ে আটকে রয়েছে বৈদ্যুতিক তারে। উপরে পড়েছে বহু বৈদ্যুতিক খুটি। গাছ ভেঙে পড়ে বন্ধ হয়েছে রাস্তা। এমনই ধ্বংস লীলার চিত্র জ্বলজ্বল করছে ভেবা এলাকায়।
ভেবা গ্রামের দুর্গত রফিকুল ইসলাম ঋণ নিয়ে তৈরি করেছিলেন পোল্ট্রী খামার। প্রচূর পোল্ট্রী মুরগি মজুত ছিল। ঝড়ে খামার ঘর চাপা পড়ে মুরগি গুলি মারা গিয়েছে। এখন সব খুইয়ে সর্বহারা রফিকুল। তিনি সরকারের কাছে সাহায্যের দাবি করেছেন।
ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি ঝড়ে শারীরিকভাবে আহত হয়েছেন ২ জন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তারা রায়গঞ্জ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। জখম ওই দুজন সলেমান আলির কান কেটেছে ও সেখ আলমের পা ভেঙে গিয়েছে। তাদের বাড়ি ভেবা গ্রামে। ঝড়ের পর শুক্রবার সাতসকালে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনে যান চাঁচলের বিধায়ক নীহাররঞ্জন ঘোষ। ক্ষতিগ্রস্তের দুয়ারে পৌঁছে তাদেরকের আশ্বস্ত করেন। পাশাপাশি জরুর অবস্থায় দুর্গতদের বাড়িতে পৌঁছেদেন ত্রানও।
বিধায়ক নীহার বলেন, খবর পেয়ে গ্রামগুলিতে পৌঁছেছি। প্রাথমিকভাবে অনুমান করা হচ্ছে সবথেকে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির স্থল ভগবানপুর পঞ্চায়েত এলাকা। প্রাকৃতিক দুর্যোগ কেউ আটকাতে পারেনা। সবাইকে পাশে থেকে এর মোকাবিলা করতে হবে। আমি নিজের তহবিল থেকে ত্রিপল, পোশাক ও শুকনো খাবার দুর্গতদের হাতে তুলে দিয়েছি। ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি রাজস্তরেও জানানো হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
Avishek Saha, Reporter, Uttar Malda