আম গাছ থেকে পড়ে কিডনি রোগে মৃত্যু এক শিশুর। স্বাস্থ্যসাথীর কার্ড থাকলেও মিলছে না পরিষেবা। দেখা মেলেনি রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক কর্তাদেরও। বিডিওকে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ মহকুমা শাসকের। এই বিষয়ে তৃণমূলকে খোঁচা বিজেপি-র। পাল্টা সবরকমভাবে পাশে থাকার আশ্বাস তৃণমূল নেতৃত্বের।
সূত্রের খবর, অসুস্থ ওই শিশুর নাম অভি ঋষি। বয়স ৬ বছর। মালদার হরিশ্চন্দ্রপুর থানা এলাকার এক মুশহর পরিবারের শিশু বিনা চিকিৎসায় ধীরে ধীরে মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়ছে। স্বাস্থ্য সাথীর কার্ড থাকলেও সেই কার্ড থেকে চিকিৎসার সুবিধা মেলেনি। প্রায় দু’মাস আগে আম গাছ থেকে পড়ে পেটে চোট পেয়েছিল ওই শিশু। এরপর থেকেই তার শরীর অসুস্থ হতে শুরু করে।
অভিকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে গেলে তারা বলেন, অভির ডান দিকের কিডনি অকেজো হয়ে গিয়েছে। এই শুনে অভির পরিবারের মাথার উপর যেন আকাশ ভেঙে পড়ে। অভির চিকিৎসার জন্য সর্বস্ব হারিয়ে ফেলেছে এই পরিবারটি। আবাস যোজনার ঘর করার টাকা মিলেছিল কিন্তু সেটিও ঘর না করে শিশুর চিকিৎসার পিছনে খরচা হয়ে গিয়েছে বলে জানায় পরিবার। তারা মুশহর সম্প্রদায়ের মানুষ হলেও এরা এখনও পর্যন্ত বিপিএল কার্ড তো দূরের কথা মুশহর হওয়ার সার্টিফিকেটও পাননি। সরকারের সব সুবিধা থেকে এখনও পর্যন্ত বঞ্চিত এই পরিবার।
অভির বাবা হিন্দোল ঋষি। পেশায় এক পরিযায়ী শ্রমিক। ভিন রাজ্যে কাজ করে যেটুকু টাকা জমিয়ে ছিলেন তাও ছেলের পেছনে খরচা হয়ে গিয়েছে। কিন্তু, ডানদিকের কিডনি বিকল হয়ে যাওয়ায় ছেলে ক্রমশই অসুস্থ হয়ে পড়ছে। শরীরে জল জমা হচ্ছে। চিকিৎসার জন্য টাকা যোগাড় করতে পারছেনা পরিবার। তাই বাধ্য হয়ে পরিবারের ছোট সদস্য অভির মৃত্যুর জন্য দিন গুনছে পরিবার। অভির মা নমিতা ঋষি এবং ঠাকুমা সীমা ঋষি দু’জনে লোকের বাড়ি বাড়ি পরিচারিকার কাজ করে কোনওরকমে সংসার চালান। অভির অসুখ ধরা পড়ার পর থেকেই সব টাকাই তার চিকিৎসার পিছনে খরচা হয়ে যাচ্ছে। তাই বাধ্য হয়ে শাক পাতা খেয়ে দিন চালাতে হচ্ছে এই পরিবারকে।
প্রসঙ্গত, এই ঘটনা নিয়েই শুরু হয়েছে তৃণমূল বিজেপির মধ্যে রাজনৈতিক চাপানউতোর। তৃণমূলকে তীব্র আক্রমণ জানিয়েছে বিজেপি। জেলা বিজেপি সাংগঠনিক সম্পাদক রূপেশ আগারওয়ালের মোতে, “একদিকে দুর্নীতি চলছে রাজ্য-জুড়ে। মন্ত্রীর বান্ধবীর বাড়ি থেকে কোটি কোটি টাকার পাহাড় উদ্ধার হচ্ছে। অন্যদিকে টাকার অভাবে চিকিৎসা না করতে পেরে মৃত্যুর দিকে ঢলে পড়ছে অভি। স্বাস্থ্য সাথী কার্ড থাকা সত্ত্বেও মিলছে না চিকিৎসার সুবিধা। এটা সম্পূর্ণ সরকার এবং প্রশাসনের ব্যর্থতা।” তিনি এই বিষয়ে আর কি কি বলেছেন শুনব-
এপ্রসঙ্গে, তৃণমূল নেত্ৰী তথা হরিশ্চন্দ্রপুর ১ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যা সুজাতা সাহা বলেন, সবরকম ভাবে তৃণমূল কংগ্রেস এই পরিবারের পাশে থাকবে। তাদের বিপিএলের তালিকায় নাম এবং সার্টিফিকেট কেন পাননি সেটাও খতিয়ে দেখা হবে। খুব তাড়াতাড়ি সেই ব্যবস্থাও করা হবে।
চাঁচল মহকুমা শাসক কল্লোল রায় জানান বিষয়টি এখন শুনলাম। বিডিও সাহেবকে বলব খোঁজ নিয়ে তড়িঘড়ি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে। প্রশাসন সব রকম ভাবে পরিবারের পাশে থাকবে।
উল্লেখ্য, কিছুদিন আগেই মন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করলেন হরিশ্চন্দ্রপুরের বিধায়ক তাজমুল হোসেন। এখন দেখার বিষয় দায়িত্ব প্রাপ্ত মন্ত্রী এই নিয়ে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেন কি না? ছ’বছরের সেই ছোট্ট শিশুটি কী পাবে চিকিৎসা? যদি চিকিৎসার অভাবে সেই শিশুকে মারা যেতে হয় তবে তা সমাজের লজ্জা। তাহলে সরকার এবং প্রশাসনের সম্পূর্ণ ব্যর্থতা।