Malda : জমিদারি না থাকলেও রীতি মেনেই হয়ে আসছে রায় চৌধুরী বাড়ির পুজো

আরও পড়ুন

রায় চৌধুরী বাড়ির দুর্গাপুজো এবার প্রায় সাড়ে ৩০০ বছরে পা দিল। এই জমিদার বাড়ির জমিদারি এখন না থাকলেও এর পুরনো ঐতিহ্য রয়ে গিয়েছে। মালদার চাঁচলের এই বিখ্যাত জমিদার বাড়ির পুজোকে ঘিরে রয়েছে নানান অলৌকিক ঘটনা। চাঁচল থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত কলিগ্রামের কাঁসারী পাড়া।

রায়চৌধুরী পরিবারের সদস্যদের থেকে জানা যায়, প্রায় কয়েকশো বছর আগে এই এলাকায় রাজত্ব করতেন নবাব আলীবর্দী খাঁ। নবাবের এক বিশ্বস্ত নায়েব ছিলেন বদলরাম রায় চৌধুরী। একবার প্রচন্ড খড়ার সময় নবাবের কর আদায় করতে ব্যর্থ হয়েছিলেন বলরাম রায় চৌধুরী। আর সেই অপরাধে নবাব আলীবর্দী খাঁ বদলরাম রায় চৌধুরীকে সাজা দেন। তার গোটা শরীরে চাবুক দিয়ে তাকে মেরে বাক্সবন্দী করে ভাসিয়ে দেওয়া হয় মহানন্দার জলে। এরপর নদীর অন্য পাড়ে থাকা এক সন্ন্যাসী সেই বাক্স দেখতে পেয়ে অর্ধমৃত অবস্থায় বদলরাম রায় চৌধুরীকে উদ্ধার করে। তিনি তাকে যথাসাধ্য সেবা-শুশ্রূষা করে সুস্থ করে তোলেন। সেই সন্ন্যাসীর আশ্রমে থাকাকালীন একদিন দেবী দুর্গার স্বপ্নাদেশ পান বদলরাম রায় চৌধুরী। দেবী তাকে নবাব আলীবর্দী খাঁর সম্মুখীন হওয়ার আদেশ দেন এবং তিনি জানান, তাকে যে পরগনা দান করা হবে সেই পরগনায় দেবীর মূর্তি প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এরপর স্বপ্নাদেশ অনুযায়ী, বলরাম রায় চৌধুরী শারীরিকভাবে সুস্থ হওয়ার পর একদিন হঠাৎ নবাব আলীবর্দী খাঁ-র সামনে গিয়ে হাজির হন। তাকে জীবিত অবস্থায় দেখে অবাক হয়ে যান নবাব। এরপর বদলরাম রায় চৌধুরীর মুখে গোটা ঘটনা শোনার পর নবাব তাকে পাঁচটি পরগনা দান করেন। সেই পাঁচটি পরগনার মধ্যে একটি ছিল কলিগ্রাম। আর সেখানেই কাছারিপাড়ায় দেবী দুর্গার মূর্তি প্রতিষ্ঠা করেন বদলরাম রায় চৌধুরী।

আজও বদলরাম রায় চৌধুরীর সেই পুজো হয়ে আসছে পুরনো রীতি মেনেই। প্রতিপদের দিন থেকে শুরু হয়ে যায় দেবীর ঘট পুজো। দেবীকে এখানে এক চালায় ডাকের সাজে সাজিয়ে তোলা হয়। তাঁর সঙ্গে তাঁর বাহন সাদা রংয়ের সিংহকে অসুর বধ করতে দেখা যায়। আগে এই পুজোয় পাঠাবলি প্রচলন থাকলেও বর্তমানে সেই প্রথা সম্পূর্ণরূপে লোপ পেয়েছে। এখন তার পরিবর্তে পরিবারের সদস্যরা মোহনভোগের আয়োজন করেন। অষ্টমীর দিন কুমারী পুজোর রীতি থাকলেও এখানে নবমীর দিন কুমারী পুজো হতে দেখা যায়। দশমীর দিন সকালে দেবী দুর্গার সঙ্গে রায় চৌধুরী পরিবারের সবাই সিঁদুর খেলায় মেতে ওঠেন। গোধূলি লগ্নে দেবীকে বিসর্জন দেওয়া হয় কলিগ্রামের রাণী দিঘিতে। এরপর আবার ৩৬৫ দিনের জন্য মায়ের আগমনের জন্য অপেক্ষা করতে হয়।

ফোর্টিন টাইমলাইন, মালদা।

- Advertisement -

সম্পর্কিত খবর

- Advertisement -

ট্রেন্ডিং

close