চাকরি পেলে তবেই পানীয় জল পাবেন গ্রামবাসীরা। গ্রামেরই এক মহিলার নাছোড় দাবির কারনে পরিশ্রুত পানীয় জলের পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন গোটা গ্রাম। তীব্র দাবদাহের মাঝেই পানীয় জলের দাবিতে গ্রামীন সড়কে বালতি, কলসি রেখে বিক্ষোভ দেখান গ্রামের মহিলারা। রবিবার এমন ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে মালদার চাঁচল-এর ১ নম্বর ব্লকের মহানন্দপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের দৈভাত্তা গ্রামে। এমন ঘটনার জেরে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। জল সংকটের ঘটনা সামনে আসতেই শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপান-উতোর।
সূত্রের খবর, মালদার চাঁচল-এর ১ নম্বর ব্লকের দৈভাত্তা গ্রামে প্রায় ৪০০ টি পরিবার রয়েছে। পানীয় জলের সংকট দূর করার জন্য গ্রামের এক পাশে বসানো হয়েছে পিএইচই প্রকল্প। পরিশ্রুত পানীয় জলের পরিষেবা দিতে বাড়ি-বাড়ি পৌঁছে গিয়েছে জল সংযোগ। কিন্তু তিন বছর কেটে গেলেও মিলেনি পানীয় জল। গ্রামবাসীরা একাধিকবার প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট দফতরকে জানিয়েও কোনও সুরাহা হয়নি বলে অভিযোগ। রবিবার দুপুরে দৈভাত্তা গ্রামীণ সড়কে পরিশ্রুত পানীয় জলের দাবিতে বিক্ষোভ দেখান গোটা গ্রামবাসী। খালি বালতি, কলসি বাজিয়ে ক্ষিপ্ত মহিলারা বিক্ষোভ শুরু করেন। অভিযোগ, এলাকার এক মহিলা ছবি মণ্ডল পিএইচই প্রকল্পের দরজায় তালা ঝুলিয়ে রেখেছেন। ফলে জল পরিষেবা ব্যাহত হয়ে পড়েছে এলাকায়। গ্রামে পঞ্চায়েতের তরফে সাব মার্সিবল না থাকায় এক কিমি দূরে মাঠের মধ্যে কৃষি সেচের জল সংগ্রহ করতে হয়। রাতের বেলা আতঙ্কের মধ্যে জল আনতে যেতে হয় মহিলাদের। এদিকে তীব্র রোদে পুকুরের জল শুকিয়ে যাওয়ায় গ্রামবাসীরা স্বাভাবিক ভাবে স্নান করতেও পারছেন না। রান্না করা, বাসন মাজা, কাপড় কাচার ক্ষেত্রে স্বল্প পরিমাণে জল ব্যবহার হচ্ছে।
গ্রামবাসীদের অভিযোগের ভিত্তিতে পাল্টা জবাব দিয়েছেন ছবি মণ্ডল। তিনি দাবি করে বলেন, আমার জায়গায় পিএইচই প্রকল্প বসানো হয়েছে। আমি কেন চাকরি পাবনা। চাকরি না দিলে আমি তালা খুলব না। তবে চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে গ্রামবাসীরা আমাকে সহযোগিতা করলেই তালা খুলে দিব।
দৈভাত্তায় জল সঙ্কটের ঘটনা সামনে আসতেই শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপান-উতোর। চাঁচল ১ নম্বর ব্লক বিজেপির কো-কনভেনার প্রসেনজিৎ শর্মা বলেন, রাজ্য সরকার ও তার জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর পানীয় জলের পরিষেবা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। আধিকারিকেরা নাকে সর্ষের তেল দিয়ে ঘুমোচ্ছে। মানুষের দুর্ভোগের কথা এরা শুনেও না শোনার ভান করে থাকে।
অন্য দিকে চাঁচল ১ নম্বর ব্লক কংগ্রেস কমিটির সভাপতি আঞ্জারুল হকের বলেন, তৃণমূলের আমলে টাকার বিনিময়ে চাকরি হয়। ওই মহিলাকে চাকরি টোপ দিয়ে পিএইচই বসিয়েছে। তৃণমূল প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে পারেননি। যার জেরে জল সঙ্কটে ভুগছে গোটা গ্রাম।
বিরোধীদের কটাক্ষের পাল্টা মন্তব্য করেছেন চাঁচলের তৃণমূল বিধায়ক নীহাররঞ্জন ঘোষ। বিধায়ক বলেন, পিএইচই দফতরের আধিকারিকদের সঙ্গে জল সঙ্কটের বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। দ্রুত জল পরিষেবা স্বাভাবিক হবে। তবে বিজেপি ও কংগ্রেস মানুষের সঙ্গে বঞ্চনা করে। তাদের পাশে মানুষ নেই। তৃণমূল সরকার দুয়ারে-দুয়ারে জল পৌঁছে দিয়েছে।
ফোর্টিন টাইমলাইন, মালদা।