বাংলা অ্যাকাডেমির পুরস্কার পেয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাংলা সাহিত্য চর্চায় তাঁর নিরলস সাধনার জন্য বাংলা অ্যাকাডেমির বিশেষ পুরস্কারে পুরস্কৃত করা হয়েছে মুখ্যমন্ত্রীকে। এর আগে ২০২০ সালে মুখ্যমন্ত্রীর লেখা ‘কবিতা বিতান‘ বইটি কলকাতা বইমেলায় প্রকাশিত হয়। উল্লেখ্য, সোমবার ২৫ বৈশাখে তাঁর লেখা কবিতা বিতান বইয়ের জন্য পশ্চিমবঙ্গ বাংলা অ্যাকাডেমি পুরস্কার প্রদান করা হয় মুখ্যমন্ত্রীকে।
উল্লেখ্য, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুরস্কার পাওয়ার পরই এই বিষয় নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজেদের ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন সাহিত্য জগতের বহু মানুষ। শুধু তাই নয়, পদত্যাগ এবং পুরস্কার ফেরানোর মতো ঘটনাও ঘটেছে। বুধবার সাহিত্য অ্যাকাডেমির উপদেষ্টামন্ডলী থেকে পদত্যাগ করেছেন অনাদি বিশ্বাস। পাশাপাশি, এই ঘটনার প্রতিবাদে বিশিষ্ট লেখক এবং গবেষক রত্না রশিদ বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর ২০১৯ সালে পাওয়া অন্নদাশঙ্কর স্মারক ফিরিয়ে দিয়েছেন।
রত্না রশিদ এ বিষয়ে এদিন জানিয়েছেন, “বাংলা অ্যাকাডেমির এই অবিবেচকের মতো সিদ্ধান্তের জন্য আমি আমার স্মারক ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হলাম। বই থাকলেই কি পুরস্কার পাওয়া যায়? বইয়ের তো একটা মান থাকা উচিত নাকি? উনি আমাদের মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী। ওঁনার কাছ থেকে কি আমরা আরেকটু পরিণত সিদ্ধান্ত আশা করতে পারি না? ওঁনাকে এরকম একটা পুরস্কার দেওয়ার কথা হলেও তিনি তা গ্রহণ করবেন কেন?”
অন্যদিকে, এদিন অনাদি বিশ্বাস এই বিষয়ে বলেছেন, “বহুদিন ধরেই মনের মধ্যে একটা ক্ষোভ ছিল। ২০২১ সালের ২৩ ডিসেম্বর বাংলায় মূল সাহিত্য অ্যাকাডেমি পুরস্কারের জন্য ‘মীরজাফর’ এবং ‘অন্যান্য নাটক’ বইটির নাম ঘোষণা করা হল। তখন থেকেই জমছিল ক্ষোভ। তার কারণ, ৬৩ বছর ধরে অন্যান্য ভাষার সঙ্গে বাংলায় মূল সাহিত্য অ্যাকাডেমির পুরস্কার প্রদান করা হয়। কিন্তু, বাংলাতে এতদিন পর্যন্ত কোনও নাটকের বই সাহিত্য অ্যাকাডেমির পুরস্কার লাভ করেনি। কিন্তু, এবার সেই প্রথা ভেঙে পুরস্কৃত করা হল ব্রাত্য বসুর লেখা মীরজাফর এবং অন্যান্য নাটক বই দুটিকে। এ বিষয়ে অনেকেই আবার বলতে পারেন যে, বুদ্ধদেব বসুর লেখা ‘তপস্বী ও তরঙ্গিনী’-ও তো পুরস্কার পেয়েছিল। কিন্তু, সেটি নাটকের বই নয়, তা মূলত কাব্য নাটিকা। আর, বুদ্ধদেব বসু কোনওকালেই নাট্যকার ছিলেন না। আমি আরটিআই করে সমস্ত নথিপত্র দিল্লি থেকে আনিয়ে ছিলাম। তাতে গ্রাউন্ড লিস্টে অন্তত ৬০ টি নাম ছিল ২০২০-২০২১-এর তালিকাতে। সেই নামের বাইরে থেকে ওই বই বাছাই করা হয়েছিল।”
পাশাপাশি তিনি আরও বলেন, “রবীন্দ্রনাথের জন্মদিনের দিন কবিতা নিয়ে রীতিমতো একটি ছেলেখেলা হল কলকাতা শহরে৷ এই ঘটনার পর এখনকার সাহিত্যিকদের একসঙ্গে বৈঠক করা বা ওঠাবসা করা আর আমার পক্ষে সম্ভব নয়। তাই আমি এই পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এটাই আমি আমার নৈতিক কর্তব্য বলে মনে করি। আমি রবীন্দ্রনাথকে ভীষণ ভাবে শ্রদ্ধা করি, দেবতা জ্ঞানে তাঁকে নিয়মিত পুজো করি, তাঁর কবিতা নিয়ে যদি এমন ছেলেখেলা হয় তাহলে উপদেষ্টামন্ডলীর পদে থাকা আমার নৈতিক কর্তব্যে ঘা দেয়।”
প্রসঙ্গত, এদিন অনাদি বিশ্বাস এবং রত্না রশিদ পরিস্কার ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন যে, তাঁরা কেউই তাঁদের নিজেদের সিদ্ধান্ত থেকে কোনওভাবেই সরবেন না। তাঁদের কথায়, সরে আসব বলে তো আমরা আর প্রতিবাদ জানাইনি। প্রতিবাদ তো প্রতিবাদই। এমন ধরনের অন্যায়ের প্রতিবাদ এর আগেও করে এসেছি, করছি এবং আগামীতেও তাই করব। এই প্রতিবাদের পেছনে কোনওরকম রাজনৈতিক যোগাযোগ নেই বলে জানিয়েছেন অনাদি বিশ্বাস।