শুক্রবার ভোররাতে রায়গঞ্জের সুদর্শনপুরে উষ্ণীষ সাহা নামের এক অকৃতদার ব্যবসায়ীর মৃত্যু হল। তিনি ঘরের মেঝেতে পড়েছিলেন । তার মুখ থেকে লালা ঝরছিল। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৫১ বছর। উষ্ণীষবাবুর একমাত্র বোন পূজা সাহা এদিন ভোরবেলায় দাদাকে বিছানার পাশেই মেঝেতে পড়ে থাকতে দেখেন। চিৎকার করে আত্মীয়-পরিজনদের ফোন করে বাড়িতে এনে হাসপাতালে পৌঁছনোর ব্যবস্থা করেন। চিকিৎসকেরা শত চেষ্টা করেও ফেরাতে পারেননি উষ্ণীষ বাবুর প্রাণ। প্রতিবেশীদের অনুমান, উষ্ণীষবাবু ওষুধ খেতেই বিছানা ছেড়ে উঠেছিলেন কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। তার আগেই বিধাতা কেড়ে নিয়েছেন সুদর্শন চেহারার উষ্ণীষ সাহার প্রাণ।
প্রসঙ্গত, উষ্ণীষবাবুর একমাত্র বোন পূজা সাহা রায়গঞ্জের অতিরিক্ত জেলা জজের অফিসে কর্মরতা। মাত্র ১ বছর ২ মাস আগে তাদের বাবা হরিপদ সাহাকে হারিয়েছেন দু’ভাই- বোন । এরও বেশ কিছুদিন আগে খুব কম বয়সেই দু’ভাইবোন মাতৃহারা হন। এবার উষ্ণীষবাবুর মৃত্যুতে কার্যত একাই হয়ে পড়লেন একমাত্র বোন পূজা।
উল্লেখ্য, উষ্ণীষবাবুর বাবা হরিপদ সাহা ভারত সঞ্চার নিগম (বর্তমানে বিএসএনএল)-এ কর্মরত ছিলেন। একবার তাকে বদলি করা হয় দার্জিলিঙে। সদালাপী হরিপদবাবুর সঙ্গে অনায়াসে ভাব জমে যায় বিভিন্ন চা-বাগান মালিকের। হরিপদ সাহার সুমিষ্ট ব্যবহারে আকৃষ্ট হয়ে বিভিন্ন চা ব্যবসায়ীরা তাকে রায়গঞ্জে চা পাতা বিক্রির ‘এজেন্সি’ দিতে রাজি হয়ে যান। সেই থেকে চায়ের ব্যবসায় হাতে খড়ি খড়ি হরিপদবাবুর। সাতের দশকের গোড়াতেই খুলে ফেলেন রায়গঞ্জের বিধাননগর মোড়ে ‘দি টি কিং’ নামের এক সুবিশাল চায়ের দোকান। এরপর থেকে সাহা পরিবারকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। নয়ের দশকের মাঝামাঝিতে হরিপদবাবু তাদের প্রতিষ্ঠানের গায়েই একটি নামী কোম্পানির পাইকারি ভুজিয়া, শোনপাপড়ি, রসগোল্লা, লেডিকেনি এবং রাজভোগ বিক্রির দোকানের উদ্বোধন করেন। বাবার মৃত্যুর পর উষ্ণীষবাবুই সামাল দিচ্ছিলেন তাদের পরিবারের পৈত্রিক ব্যবসা। হরিপদবাবু অত্যন্ত পশুপ্রেমী ছিলেন। তার বাড়িতে আজও গরু পালন করার ব্যবস্থা রয়েছে। আছে গরুকে দেখভালের জন্য সর্বক্ষণের কর্মীও।
অন্যদিকে উষ্ণীষ সাহার অকাল মৃত্যুতে শোক জ্ঞাপন করেছেন পশ্চিম দিনাজপুর চেম্বার অব কমার্সের সাধারণ সম্পাদক শংকর কুন্ডু এবং রায়গঞ্জ মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক অতনু বন্ধু লাহিড়ী। উষ্ণীষবাবুর মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে সমগ্র সুদর্শনপুর-সহ রায়গঞ্জের বিভিন্ন মহলে।
Fourteen Time Line, Uttar Dinajpur