সাংবাদিক নিগ্রহের পর তদন্তের কাজে মামলাকে লঘু করার অভিযোগে তদন্তকারী পুলিশ অফিসার শাহু আলম মর্তুজাকে বদলি হতে হল। সেইসঙ্গে রায়গঞ্জ থানা আইসি সৌরভ সেনকে ছুটিতে পাঠানো হল। গত শনিবারের একটি ডিস্ট্রিক্ট অর্ডারে(D.O.) সাকুল্যে ২২জন পুলিশকর্মীর বদলি হল রায়গঞ্জ পুলিশ জেলায়।
পুলিশের সাব- ইন্সপেক্টর পদমর্যাদায় ২২ জন অফিসারকে একলপ্তে বদলি করলেন রায়গঞ্জ পুলিশ জেলার পুলিশ সুপার সানা আখতার। শনিবারের বদলির তালিকায় রয়েছেন রায়গঞ্জ থানায় কর্মরত দু’জন সাব ইন্সপেক্টর। যাদের মধ্যে একটি বিতর্কিত নামকে ঘিরে শোরগোল পড়ে গিয়েছে উত্তর দিনাজপুরের পুলিশ মহলে। তাদেরই একজনের নাম শাহ আলম মর্তুজা। তিনি নিজেই ৪৯৮-এ স্ত্রী-কে নিগ্রহের ঘটনায় অভিযুক্ত। গোয়ালপোখর-এ কর্মরত অবস্থায় থাকাকালীন পুলিশের ওই বিতর্কিত সাব-ইন্সপেক্টর শাহ আলম মর্তুজা কলকাতার উচ্চ ন্যায়ালয় থেকে জামিন নিয়ে আসেন বলে তার সহকর্মীরাই নাম গোপন রাখার শর্তে জানিয়েছেন। অন্য যে পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টর রায়গঞ্জ থানা থেকে বদলি হয়েছেন তিনি হলেন- বরুন কর্মকার।
প্রসঙ্গত, ক’দিন আগে সাংবাদিক নিগ্রহের মামলায় এক পুলিশ কনস্টেবলকে অজ্ঞাত কারনে অতি সক্রিয় ভূমিকা নিয়ে অভিযুক্ত পুলিশ কর্মীর বিরুদ্ধে লঘু ধারা দিয়ে জামিন পাইয়ে দেয় রায়গঞ্জ থানার পুলিশ বলে অভিযোগ। সূত্রের খবর, এক মাস আগে হেমতাবাদে তৃণমূল বিধায়ক সত্যজিৎ বর্মন ও নেতা কর্মীদের সঙ্গে এক ঝামেলায় জড়িয়ে পড়েন অভিযুক্ত পুলিশের এসআই শাহ আলম মর্তুজা। এই সব অভিযোগের ভিত্তিতেই বদলি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন রায়গঞ্জ পুলিশ জেলার পুলিশ সুপার সানা আখতার। উপরন্তু এহেন পরিস্থিতিতে রায়গঞ্জ থানার আইসি সৌরভ সেন পাঁচদিনের ছুটিতে যাওয়া নিয়ে ইতিমধ্যেই বিতর্ক উঠছে তুঙ্গে। পুলিশি সূত্রের খবর , আই সি সৌরভবাবুর নির্দেশেই সাংবাদিক নিগ্রহের মামলার নথি তৈরি করেছিল মর্তুজা। এ বিষয়ে সানা আখতার বলেন -” পুলিশের অভ্যন্তরীন বিষয় নিয়ে মন্তব্য করতে চাই না ”। রায়গঞ্জ পুলিশ জেলার এক কর্তার যদিও দাবি হ’ল-রুটিনমাফিক বদলি হয়েছে। সৌরভ সরকারি নিয়ম মেনেই ছুটি নিয়েছেন।
উল্লেখ্য, গত ১৫ জুন, বুধবার রায়গঞ্জের কাচিমোহাতে খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেট এ কর্মরত দেবব্রত রায় নামেরএক পুলিশ কনস্টেবলের হাতে আক্রান্ত হয়েছিলেন এবিপি আনন্দ-র সাংবাদিক সুদীপ চক্রবর্তী-সহ পাঁচজন। এদের মধ্যে দু’জনকে গুরুতর আহত অবস্থায় রায়গঞ্জ গভর্নমেন্ট মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এই ঘটনা নিয়ে অভিযুক্ত পুলিশ কর্মী দেবব্রত রায়-সহ বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে রায়গঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হলেও রায়গঞ্জ থানার পুলিশ উদ্দেশ্য-প্রণোদিতভাবে মামলা লঘু করে অভিযুক্ত দেবব্রত রায়কে আদালত থেকে জামিন পাইয়ে দিতে সহায়তা করে বলে অভিযোগ। পুলিশের এমন নক্কারজনক ভূমিকায় সংবাদ মাধ্যমই পুলিশের দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা ঘটল বলে অভিযোগ তোলেন উত্তর দিনাজপুর প্রেসক্লাবের সাংবাদিকেরা।