বুধবার রায়গঞ্জের কাচিমোহা গ্রামে সাংবাদিকদের বেধড়ক ঠেঙ্গানোয় মূল অভিযুক্ত পুলিশ কনস্টেবল দেবব্রত রায়-এর জামিন হয়ে গেল। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যে সাড়ে ছ়’টায় উত্তরদিনাজপুর সিজিএম কোর্টের এজলাস থেকে জামিন পান অভিযুক্ত শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেট-এ কর্মরত পুলিশ কনস্টেবল দেবব্রত রায়। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর এমন খবরে কার্যত হতচকিত সাংবাদিকরা বিষয়টি দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করলেও পরদিন শুক্রবার দুপুরে উত্তর দিনাজপুর প্রেসক্লাবে রীতিমতো ক্ষোভ উগড়ে দেন তারা। এদিন সাংবাদিকরা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন- অভিযুক্তকে জামিন করানোর মূলেই রায়গঞ্জ থানার আই সি সৌরভ সেন জড়িত। গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভ যেখানে আক্রান্ত সেখানে রায়গঞ্জ থানার পুলিশ অভিযুক্তের পক্ষ নিয়ে কাজ করেছে। রায়গঞ্জ থানার আই সি অজ্ঞাত কারণে তিনি তার পদকে অপব্যবহার করে সর্বতোভাবে সংশ্লিষ্ট অভিযুক্ত পুলিশকর্মীকে জামিন করানোর বিষয়ে জান লড়িয়ে দিয়েছেন বলে অভিযোগ। ‘হেড ইনজুরি’-র মতো গুরুতর আঘাতে জর্জরিত সাংবাদিকের ইনজুরি রিপোর্ট ২৪ ঘন্টার আগেই রায়গঞ্জ মেডিকেল কলেজ থেকে সংগ্রহ করিয়েছেন রায়গঞ্জ থানার আই সি সৌরভ বলে অভিযোগ। আরও অভিযোগ- তারই অধীনস্ত তদন্তকারী অফিসার মহম্মদ মুর্তাজা-কে দিয়ে অভিযুক্তের পক্ষে ভালো ভালো কথা লিখিয়ে সাংবাদিকের ইনজুরি রিপোর্ট ‘ট্যাগ’ করে তা মহামান্য আদালতের কাছে পেশ করিয়েছেন রায়গঞ্জ থানার আই সি শ্রীসেন। সঙ্গত কারণে সহজেই দোর্দণ্ডপ্রতাপ পুলিশ কনস্টেবল দেবব্রত রায় আদালত থেকে জামিন পেয়ে যায় বলে অভিযোগ। অভিযুক্তকে ছাড়ানোর চূড়ান্ত চেষ্টা করে মিশনে পৌঁছতে সফল হয়েছেন রায়গঞ্জ থানার আইসি সৌরভ সেন বলে অভিযোগ করেছেন উপস্থিত সাংবাদিকরা।
উল্লেখ্য, গত ১৫ জুন SSC -র দুর্নীতিকে ঘিরে সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে দেবব্রত রায় নামের জনৈক পুলিশ কনস্টেবলের হাতে গুরুতরভাবে আহত হন ‘এবিপি আনন্দ’-র রিপোর্টার সুদীপ চক্রবর্তী-সহ অন্যান্য সাংবাদিকরা।
সেই পুলিশ কনস্টেবল দেবব্রত রায়ের বিরুদ্ধে এমন অভব্য আচরণের অভিযোগ জানালে পুলিশ তড়িঘড়ি তাকে থানায় তুলে নিয়ে আসে ঠিক-ই। কিন্তু, বৃহস্পতিবার গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভ যেখানে আক্রান্ত, তাদের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে তথাকথিত উঁচুতলার নির্দেশে (!) রায়গঞ্জ থানার আই সি সৌরভ সেন এবং তাঁর আস্তিনে গুটিয়ে রাখা সাব ইন্সপেক্টর মহম্মদ মুর্তাজাকে সর্বতোভাবে কাজে লাগিয়ে সাংবাদিক সুদীপ চক্রবর্তী-র ইনজুরি রিপোর্ট সংগ্রহ করিয়ে মহামান্য আদালতের কাছে তা পেশ করিয়েছেন বলে অভিযোগ। এর ফলে অভিযুক্ত দেবব্রত রায়ের জামিন পাওয়ার রাস্তা সহজতর হয়ে যায়। অভিযুক্ত পুলিশ কনস্টেবলকে জামিন পেতে অতিরিক্ত ‘ বেনিফিট ‘ দেওয়া হয়েছে বলে মনে করেন রায়গঞ্জের প্রবীণ আইনজীবী আশিস কুমার সরকারও। খুব স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন- তবে কি পুলিশ ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করতেই এমন কাজে হাত ধুয়ে নেমেছিল ?
কার্যত শুক্রবার দুপুরে রায়গঞ্জের রবীন্দ্রভবন সংলগ্ন উত্তর দিনাজপুর প্রেস ক্লাবের পক্ষ থেকে এক সাংবাদিক বৈঠকের আয়োজন করা হয়। সেখানে উত্তর দিনাজপুর প্রেস ক্লাবের সম্পাদক অলিপ মিত্র জানান ” পুলিশের সঙ্গে সাংবাদিকদের এক আলাদাই ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক, কিন্তু পুলিশ সেই সম্পর্ক নিজের হাতে ভেঙে দিল “। সাংবাদিকতায় সত্যকে উন্মোচিত করতেই সাংবাদিকরা সংবাদ সংগ্রহ করেন সেখানে তাদের হিংসাত্মক আক্রমণের শিকার হতে হয়েছে। যেহেতু অভিযুক্ত নিজেই একজন শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনারেট-এ কর্মরত কনস্টেবল। তাই আইনের শাসন থেকে ছাড় পেল হিংস্র আচরণকারী অভিযুক্ত পুলিশ কনস্টেবল দেবব্রত রায়। তিনি আরও বলেন, আদালতের এমন রায়দানের পর পুলিশের ভূমিকাকে ধিক্কার জানান উপস্থিত সাংবাদিকরা। এছাড়া আগামীকাল, শনিবার শিলিগুড়িতে মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর শাখা সচিবালয় উত্তরকন্যাতে সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে একটি স্মারকলিপি পেশ করা হবে। গোটা উত্তরবঙ্গ-সহ অন্যান্য জেলাগুলিতে একঘন্টার জন্য ‘পেন ডাউন ‘ কর্মসূচি পালন করবেন বলে মন্তব্য করেছেন উত্তর দিনাজপুর প্রেসক্লাব সম্পাদক অলিপ মিত্র।
অন্যদিকে উত্তর দিনাজপুর প্রেসক্লাব সভাপতি অমিত সরকার রায়গঞ্জ থানার ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রের কথা (Heinous conspiracy) উল্লেখ করে বলেন- গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভের বিরুদ্ধে যখন পুলিশ এমন কাজ করতে পারে, সেখানে সাধারণ মানুষের নিশ্চয়তা কোথায়? তারা রায়গঞ্জ থানার আই সি সৌরভ সেন এবং তার অধস্তন কর্মীর কীর্তি এরাজ্যের মাননীয়া পুলিশ তথা মুখমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গোচরে আনতে চান l