গুনে গুনে ২৩ বছর আগে অবসর সরকারি কর্মক্ষেত্র থেকে অবসর নিয়েছিলেন যে মানুষটি, তিনিই আজ আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। একজন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মীর স্মরণসভায় যে এত ভিড়ে ঠাসা হতে পারে তা প্রমাণ করে দেখালেন প্রয়াত কমল কুমার বসু। তাঁর হাতের সৃষ্টি করা নালন্দা কিন্ডারগার্টেন নামের একটি বেসরকারি শিশু শিক্ষা নিকেতনের স্রষ্টা ছিলেন কমল কুমার বসু। তিনি অনারোজ্ঞ ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে রায়গঞ্জের একটি বেসরকারি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে মৃত্যুর কাছে হার মানেন। তাঁর মৃত্যুর পর মৃতের স্ত্রী জ্যোতি বসু, ছেলে ফকিরানন্দ বসু, মেয়ে রুপানন্দা কালী বসু,নাতি-কৌস্তুভ কালী-সহ আত্মীয়-স্বজনেরা সম্মিলিতভাবে চার দিনব্যাপী অনুষ্ঠান করেন। বুধবার স্থানীয় নালন্দা কিন্ডারগার্টেনে পারলৌকিক অনুষ্ঠান দিয়ে যাত্রা শুরু। বৃহস্পতিবার শ্মশান বন্ধু এবং আত্মীয়-স্বজনদের নিয়ে প্রীতিভোজ, শুক্রবার সৎসঙ্গী ভাই-বোনদের নিয়ে একত্রিত হওয়া। শনিবার বিকেলে ছিল স্মৃতিচারণার অনুষ্ঠান। এদিন একটি গানের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা হয় পরে একে একে নালন্দা কিন্ডারগার্টেন-এর শিক্ষিকা রাখী কুন্ডু বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ সুবোধ কুমার মানি, রায়গঞ্জের প্রথিতযশা চিকিৎসক সুদেব সাহা, বিদ্যাচক্র স্কুলের প্রাক্তন শিক্ষক ধীরাজ কুমার দাস,প্রয়াত কমল কুমার বসুর কাছের বন্ধু অভয় সরকার-সহ বিভিন্ন উপস্থিত মানুষ স্মৃতিচারণা করেন প্রয়াত কমল কুমার বসুকে নিয়ে। এদিনের স্মরণ সভায় সৌরেন চক্রবর্তী সহ বহু সম্মানীয় অতিথিবৃন্দ উপস্থিত থেকে অনুষ্ঠানটি উপভোগ করেন। তিনি রাজ্য বিদ্যুৎ বন্টন কোম্পানি লিমিটেডের উচ্চ পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। দার্জিলিং এর জলঢাকা থেকে শুরু করে কলকাতার সল্টলেকের বিদ্যুৎ ভবন পর্যন্ত তিনি কর্মসূত্রে বিভিন্ন সময়ে কাজ করে এসেছেন। সর্বোপরি রায়গঞ্জের বিদ্যুৎ বন্টন কোম্পানি লিমিটেডের প্রশাসনিক ভবন থেকে কাজ করে তিনি অবসরে যান । সারা দেশ ভ্রমণ করেছেন। দু’বছর আগে তাঁর জন্মস্থান বাংলাদেশেও ঘুরে এসেছেন কমল কুমার। তিনি গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা সমিতি থেকে শুরু করে বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি শ্রী শ্রী ঠাকুর অনুকূল চন্দ্রের আশ্রম থেকে দীক্ষা নিয়েছিলেন প্রায় পাঁচ দশক যাবৎ নিরামিষ খেতেন। থানকুনি পাতা তার ৩৬৫ দিনের সঙ্গী ছিল। ৮৩ বছর বয়সে তিনি দেহ রেখেছেন। তার কোনও শত্রু ছিল না, ছিলেন মৃদুভাষী। নিজের বাড়িতেই বাগান তৈরি থেকে শুরু করে ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়েই ব্যস্ত থাকতেন কমল কুমার বসু। এজাতীয় কথাগুলি তাঁকে নিয়ে স্মৃতিচারণায় বারে বারে উঠে এসেছে। তবে প্রয়াত কমল কুমার বসু নালন্দা কিন্ডারগার্টেন নামের যে প্রতিষ্ঠানটি রেখে গিয়েছেন- তাতে তিনি পূর্ণাঙ্গভাবে সফল। তার প্রতিষ্ঠান থেকে তৈরি হওয়া অসংখ্য ছাত্রছাত্রীরা আজ বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত। উপস্থিত বক্তাদের কথায়- কমল কুমার বসুর মতো এমন কর্মবীর যেনও প্রতিটি ঘরে জন্মগ্রহণ করেন।
ফোর্টিন টাইমলাইন, সুদর্শনপুর, রায়গঞ্জ।