শনিবার সাতসকালে রায়গঞ্জ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে রোগীর মৃত্যুতে ওয়ার্ডবয় এবং আয়া মাসীদের গাফিলতির অভিযোগ এনে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। মৃত যুবকের নাম রুবাই রজক। বয়স ২৩ বছর। বাড়ি রায়গঞ্জের উকিলপাড়ার পীরপুকুর সংলগ্ন একটি বহুতল আবাসনে। মৃতের বাবা শীলচরে এস এস বি-তে কর্মরত। রুবাইকে নিয়ে পাঞ্জাবের চন্ডিগড়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য যাওয়ার কথা ছিল রজক পরিবারের। কিন্তু তার আগেই এমন বিপত্তি ঘটে যাওয়ায় হতবাক সকলেই।
সূত্রের খবর, দীর্ঘদিন যাবত কিডনির সমস্যায় ভুগছিলেন রুবাই। প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন- রায়গঞ্জের বিদ্রোহী ক্লাব সংলগ্ন একটি পীরের মাজারের গায়ে গড়ে ওঠা রেস্তোরাঁয় শুক্রবার রাতে “আংটি বদল” নামের একটি অনুষ্ঠান ছিল। সেখানে রুবাইবাবুও আমন্ত্রিত হয়ে মাংস ভক্ষণ করেছিলেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা অভিযোগ করেছেন। তাদের সমবয়সীরা নাকি রুবাইবাবুকে মাংস খেতে নিষেধও করেছিলেন। প্রত্যুত্তরে রুবাইবাবু নাকি তাদের জানিয়েছিলেন- আগামীকাল অর্থাৎ আজ,শনিবার তার নাকি ডায়ালিসিসের তারিখ আছে, তাই তার নাকি কিছু হবে না। কিন্তু শুক্রবার গভীর রাত থেকেই রুবাইবাবুর শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়, দেখা দেয় তীব্র শ্বাসকষ্টও। অবস্থা বেগতিক বুঝে ভোর সাড়ে চারটে নাগাদ নিজেই বাইক চালিয়ে রায়গঞ্জ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের জরুরি বিভাগে দেখিয়ে মেল মেডিসিন ওয়ার্ড-এ এসে ভর্তি হন। কর্তব্যরত চিকিৎসকেরা রুবাইবাবুর জন্য কিছু প্রেসক্রিপশন-এ ওষুধের নামও লিখে দিয়েছিলেন। ইতিমধ্যেই রক্তবমি শুরু হয়ে যায় রুবাইবাবুর। প্যান্টের মধ্যেই মলত্যাগ করে দেন রুবাই। রুবাইবাবুর মা বেবী রজক অভিযোগ করেছেন- তার ছেলেকে বাঁচানোর আকুতিতে কোনও আয়ামাসী কিংবা ওয়ার্ডবয় এগিয়ে আসেননি। এদিন মেল মেডিসিন ওয়ার্ডের শয্যা থেকে থেকে রোগ যন্ত্রণায় কাতরাতে কাতরাতে মেঝেতে পড়ে গিয়েই নাকি রুবাইয়ের মৃত্যু ঘটে। অন্যদিকে হাসপাতাল সূত্রের খবর- তাকে শয্যায় রাখার পর প্রাথমিক চিকিৎসা পরিষেবা হিসেবে চালানো হয়েছে অক্সিজেন এর নল, হাতে পড়ানো হয়েছে জেলকো। চিকিৎসকের দেওয়া ব্যবস্থাপত্রে লেখা ওষুধগুলি আনার কথা বলা হয়েছে। এদের মেডিকেল কলেজের মেল মেডিসিন ওয়ার্ড থেকে রুবায়ের মৃতদেহটি লাশ কাটা ঘরের ড্রয়ারে রাখা হয়েছে। তার বাবা শিলচর থেকে ফিরলে দেহটির সৎকার করা হবে বলে জানা গেছে।উল্লেখ্য, রুবাই রজ ক কোমলেশ স্থানীয় কমল টকিজ লাগোয়া,কুটু কালিবাড়ি সংলগ্ন এলাকায় মানুষ হন। সেই কারণে তাকে দেখতে রায়গঞ্জ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের শয্যায় দেখতে হাজির হয়েছিলেন অনেকটাই সমবয়সী প্রাক্তন কাউন্সিলর তথা কো-অর্ডিনেটর অনিরুদ্ধ সাহাও।তবে তিনি হাসপাতালে গোলমাল না বাঁধাতে পরামর্শ দিয়ে গিয়েছেন বলে জানা গেছে।প্রসঙ্গত, শনিবার কাকভোরে রুবাই রজক এমার্জেন্সিতে দেখানোর পর তাকে ‘মেল মেডিসিন ‘ ওয়ার্ডে ভর্তির জন্য ব্যবস্থাপত্রে লিখে দেন কর্তব্যরত চিকিৎসক। ইতিমধ্যেই মৃত্যুর মতো অনভিপ্রেত র্ঘটনা ঘটে যায়।এরপর তাকে কোনও রকম চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়াতো দুরস্ত কোনও হাসপাতালে কর্মরত ‘ওয়ার্ড বয়’ তাকে বেড-এ নিয়ে যেতে সাহায্য করেননি বলে পরিবারের সদস্যের অভিযোগ।শুধু তাই নয়, দীর্ঘক্ষণ যাবৎ ডাকাডাকি করলেও তার নাকে অক্সিজেন এর নলটুকুও গুঁজে দেওয়া হয়নি । অন্যান্য রোগীরা বেড থেকে এসে তাকে সহযোগিতা করলেও শেষ রক্ষা হয়নি বলে অভিযোগ। যদিও এবিষয়ে দায়িত্বে থাকা সিস্টার ইনচার্য বা কর্তৃপক্ষ কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি। এদিকে তীব্র উত্তেজনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় রায়গঞ্জ থানার বিশাল পুলিশ বাহিনী। এখনও তীব্র উত্তেজনা রয়েছে। পরিবারের সদস্যরা হাসপাতালের আয়া-সহ বাকি “ওয়ার্ড বয়”-দের ছাঁটাই- এর দাবি জানিয়েছেন । গাফিলতির জন্যই তারা তাদের সন্তানকে হারিয়েছেন বলে দাবি করেছেন মৃত যুবকের মা। তবে ওয়ার্ডবয়-দের যে গাফিলতি আছে এবং পয়সা ছাড়া যে তারা কোনও কাজ করেন না, তা প্রতিটি ভুক্তভোগী-মাত্রই জানেন। বেসরকারি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে যদি ‘ওয়ার্ড বয়’-রা কাজ করতে পারেন সেক্ষেত্রে এখানকার ওয়ার্ডবয়-রা কাজ করবেন না কেনও সেই প্রশ্নও তুলেছেন অনেকেই।
রায়গঞ্জ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল থেকে নিজস্ব প্রতিনিধির রিপোর্ট, টাইমস ফোর্টিন বাংলা ।