রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. প্রাণতোষ কুমার পাল উত্তর আমেরিকার মেক্সিকোর এজটেকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ সম্মান (ফেলো অফ এজটেকা ইউনিভার্সিটি, F.A.U.) সম্মান পেলেন। রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার ও তথ্য বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. প্রাণতোষ কুমার পাল। প্রসঙ্গত, ২০২০ সালে তিনি ড. অগাস্টিন ওয়া ইন্টারন্যাশনাল পোস্টডক্টরাল ফেলোশিপ প্রোগ্রামের জন্য মনোনয়নপত্র পান। প্রথমে তিনি গত বছর অর্থাৎ ২০২১ সালে ফেলো অফ এজটেকা ইউনিভার্সিটির তকমা পান তার পোস্টডক্টরাল গবেষণার কৃতিত্ব অর্জন করেন । প্রসঙ্গত, এজটেকা বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রায় চল্লিশ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত। মেক্সিকোতে এগারোটি ক্যাম্পাস ছাড়াও ইউরোপ মহাদেশেও এর উল্লেখযোগ্য দুটি ক্যাম্পাস আছে। এছাড়া পৃথিবীর প্রায় ৫০ টির বেশি দেশে এজটেকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনলাইন ও ব্লেনডেড ইন্টারন্যাশনাল প্রোগ্রাম বিশেষ জনপ্রিয়৷
প্রসঙ্গত, ফেলো অফ এজটেকা ইউনিভার্সিটির সম্মানটি আসে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক প্রদত্ত ড. অগাস্টিন ওয়া ইন্টারন্যাশনাল পোস্টডক্টরাল ফেলোশিপ প্রোগ্রামটিতে নির্বাচনের মাধ্যমে। এই ইন্টারন্যাশনাল পোস্টডক্টরাল ফেলোশিপের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল- গবেষকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পসে স্ববেতন রিসার্চের সুযোগ পান, পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে ডিস্টিংগুইসড রিসার্চারদের সর্বোচ ডিগ্রি অর্থাৎ ডক্টর অফ সাইন্স (DSc) ডিগ্রিতে সুযোগ দেওয়া হয় ।
মনোনয়ন পাওয়ার পর অধ্যাপক পাল পোস্টডক্টরাল সংক্রান্ত কাজকর্মের জন্য দুটি সুযোগই পান। অধ্যাপক পাল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা প্রকল্পের পরিবর্তে অত্যধিক সম্মানীয় ডক্টর অফ সাইন্স বা (DSc) ডিগ্রির প্রকল্পটিকে বেছে নেন। এবং এই বছর ২০২২ সালে (DSc) ডিগ্রির থিসিসটি বিশ্ববিদ্যালয়ে জমা করেন। এই থিসিসটিতে মোট ৭৫ টি গবেষণা পত্র সংযোজিত আছে বলে জানান অধ্যাপক পাল। অতিসম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানান- তার ডিগ্রিটি পরীক্ষার মাধ্যমে চূড়ান্ত হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কনভোকেশনে অধ্যাপক পাল যোগ না দিতে পারায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অধ্যাপক পালকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ সম্মান ‘ফেলো অফ এজটেকা ইউনিভার্সিটি’ ও সেইসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রি ‘ডক্টর অফ সায়েন্স’ পাঠায়।
প্রসঙ্গত, ড. পাল (DSc) ডিগ্রিলাভ করেন ইনফরমেশন সায়েন্স এন্ড টেকনোলজির বিষয়ে। তার ২০১৬ সাল পরবর্তী পোস্টডক্টরাল কাজগুলিকে এই থিসিসের অন্তর্ভুক্ত করেন। ড. পাল আরও জানান, ৭৫টি গবেষণাপত্রকে এই থিসিসের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। থিসিসের মূল বিষয় ছিল- ইনফরমেশন সায়েন্স এন্ড টেকনোলজিতে ক্লাউড কম্পিউটিং, বিগ ডাটা ও অন্যান্য প্রযুক্তির প্রয়োগ এবং শিক্ষা ক্ষেত্রে তার সুযোগ। ড. পাল জানান- ইনফরমেশন সায়েন্স এন্ড টেকনোলজিতে (DSc) ডিগ্রির অধিকারী রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয় তথা পশ্চিমবঙ্গ ও ভারতবর্ষে নেই বলে চলে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের বাইরে কম্পিউটার সায়েন্স বিষয়ের (DSc) ডিগ্রির প্রাপক আছে বলে জানান অধ্যাপক শ্রীপাল।
তিনি তার এই কৃতিত্বের জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ২০২০ সালের উপাচার্য অধ্যাপক অনিল ভূঁইমালিকে। তিনি জানান- ২০২০ সালে তার কাছে মনোনয়নপত্ৰ এলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক অনুমতি নিয়ে তিনি আবেদন করেন। মেক্সিকোর এজটেকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক প্রেরিত সম্মান ও ডিগ্রিগুলিকে এদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের মুখে তুলে ধরেন অধ্যাপক শ্রীপাল। উপস্থিত ছিলেন বর্তমান রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপিকা সঞ্চারী রায় মুখোপাধ্যায়, বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক কালিশংকর তিওয়ারি, বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ড. দুর্লভ সরকার এবং অন্যান্য অধ্যাপক এবং আধিকারিকেরা। ড. পালের এই কৃতিত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বেশ খুশি এবং তিনি গর্বিত। ড. পালের শ্রীবৃদ্ধি কামনা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগের ডিন কালিশংকর তিওয়ারি এবং তিনি যে ইন্টার ডিসিপ্লিনারির যে বিভিন্ন বিষয়ে কাজ করছেন সে বিষয়ে উল্লেখ করেন৷ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ড. দুর্লভ সরকার জানান- অধ্যাপক পালের বিভিন্ন গবেষণামূলক কাজে ও শিক্ষামূলক কাজে তিনি খুবই সন্তুষ্ট। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক প্রেরিত কনভোকেশন গাউন, উপাধি, সন্মান ও স্মারক গুলিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে তুলে ধরেন অধ্যাপক পাল।
উল্লেখ্য, রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদের মধ্যে ইতিপূর্বে প্রবীণ অধ্যাপক বিজ্ঞান বিভাগের ডিন অধ্যাপক কালিশংকর তিওয়ারির (DSC) বা ডক্টর অফ সায়েন্স ডিগ্রিটি লাভ করেন ২০১৯ সালে রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয় সমাবর্তন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে।
তবে নবীন ও অন্যান্য অধ্যাপকদের মধ্যে ড. পালই প্রথম, যিনি এই ধরনের সম্মান ও ডিগ্রি অর্জন করলেন এবং সম্পূর্ণ ইন্টারন্যাশনাল পোস্টডক্টরাল ফেলোশিপ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। ড. পাল জানান- ফেলোশিপ প্রোগ্রামটিতে সুযোগ না পেলে ভারতীয় টাকায় প্রায় ১৬ থেকে ২০ লক্ষ টাকার মতন ব্যয় করতে হয় এই ডিগ্রির খরচ হিসেবে। কিন্তু মেক্সিকোর এজটেকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক ইন্টারন্যাশনাল ফেলোশিপের মাধ্যমে ড. পাল সম্পূর্ণ বিনামূল্যে এই প্রোগ্রামটিকে সম্পূর্ণ করতে পেরেছেন৷ এদিন তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের সামনে থিসিসটিকেও তুলে ধরেন।
ড. প্রাণতোষ কুমার পাল, গঙ্গারামপুরের ভূমিপুত্র তথা রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার ইনফরমেশন সায়েন্স বিভাগের বিভাগীয় প্রধান৷ এছাড়া তিনি কম্পিউটার এন্ড ইনফরমেশন পোস্ট গ্রাজুয়েট প্রোগ্রামের ডিরেক্টর, অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়েরই সায়েন্টিস্ট পদের সঙ্গে কর্মরত। ইতিমধ্যে ইনফর্মেশন সায়েন্সে তাঁর অনবদ্য অবদানের জন্য বিভিন্ন জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান এর বিভিন্ন পদে মনোনীত এবং নির্বাচিত হয়েছেন। ২০২০ সালে আমেরিকার লুইসিয়ানায় প্রতিষ্ঠিত লোগোস ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি থেকে অনারীস কওসা ডক্টরাল ডিগ্রী (DSC/DLitt.) এর প্রস্তাব এলেও তার পরিবর্তে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের অনারারি প্রফেসর পদে যোগ দেন।
২০২১ সালে দক্ষিণ আমেরিকার ক্রাউন ইউনিভার্সিট ইন্টারন্যাশনাল চার্টার্ড ইনকর্পোরেটেড (CUICI) সান্তাক্রুজ, আর্জেন্টিনার ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর কারিকুলাম এন্ড রিসার্চ ডেভোলপমেন্ট (ICCRD) এর এক্সিকিউটিভ সেক্রেটারি পদে প্রস্তাব আসায় তিনি সেই গুরুত্বপূর্ণ পদটিও গ্রহণ করেন। এছাড়া শিক্ষা, গবেষণা এবং ইনফর্মেশন সাইন্সে অবদানের জন্য তিনি ম্যাঙ্গালোর এর শ্রীনিবাস বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনোভেটিভ প্রোগ্রাম ও গবেষণা পরিকল্পনার চিপ অ্যাডভাইজার হিসেবে যোগ দেন।
এছাড়া ডঃ পাল প্রায় ৫০টি দেশের ৩০০-র বেশি কনফারেন্সে বক্তা, সংগঠক, টেকনিক্যাল কমিটির মেম্বার হিসেবে যুক্ত। এখানেই শেষ নয়, ডক্টর পাল বিভিন্ন জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক জার্নাল এবং বুক সিরিজের চিফ এডিটর পদেও যুক্ত।
তার সাফল্যে খুশি তার পরিবারের সকলে, তার মেয়ে, তার বিভাগের সহকর্মী, তার ছাত্র-ছাত্রী এবং অন্যান্য গবেষকেরা । আগামীতে আরও গবেষণামূলক কাজ এবং রায়গঞ্জ ইউনিভার্সিটির তরফে স্কিলবেসড বিভিন্ন শাখার (ইন্টারডিসসিপ্লিনারী) স্টুডেন্টদের জন্য প্রোগ্রাম শুরু করার ইচ্ছা রয়েছে বলে জানান ড. পাল।
রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রবাল সাহার রিপোর্ট, টাইমস ফোর্টিন বাংলা।