‘ডট কম’-এর যুগে বছরের পর বছর যাবৎ মামলাগুলির নিস্পত্তি হচ্ছে না। ফলে বাদী-বিবাদী পক্ষের সময় এবং অর্থনাশ দুইই হয়েই চলেছে। সেই অচলাবস্থার নিষ্পত্তি ঘটাতে আইনজীবী এবং মধ্যস্থতাকারীদের নিয়ে এক বিশেষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হ’ল উত্তর দিনাজপুরের অফিসপাড়া কর্ণজোড়ার অডিটোরিয়াম হলে। শনিবার দুপুরে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন মিডিয়েটর কমিটির প্রদান তথা কলকাতা উচ্চনেয়ালয়ের বিচারপতি সৌমেন সেন। শ্রীসেন ছাড়াও কমিটির অন্য সদস্য বিচারপতিরাও ছিলেন উত্তর দিনাজপুর জোনের বিচারপতি হিরণ্ময় ভট্টাচার্য্য, দক্ষিণ দিনাজপুর জোনের বিচারপতি সৌগত ভট্টাচার্য্য এবং মালদা জোনের বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু।
প্রসঙ্গত, রাজ্যের বিভিন্ন আদালতগুলিতে অসংখ্য মামলার পাহাড় জমা নিয়ে উদ্বিগ্ন রাজ্য সরকারের সঙ্গে হাইকোর্টের বিচারপতি এবং আইনজীবীরাও। বর্তমান বিচার ব্যবস্থার পাশাপাশি সমান্তরালভাবে মধ্যস্থতাকারীর ( মিডিয়েটর ) মাধ্যমে দ্রুত মামলাগুলির নিস্পত্তির লক্ষ্যে কলকাতা হাইকোর্টে মিডিয়েশন এন্ড কনসিলিয়েশন কমিটির উদ্যোগে উল্লেখযোগ্য সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
এদিনের সম্মেলনে বিচারপতি সৌমেন সেন জানান, সবক’টি আদালতেই মামলার পাহাড় জমেছে। জরুরি প্রয়োজন হয়ে পড়েছে দ্রুত স্তূপীকৃত মামলাগুলির নিস্পত্তি করার। ২০০২ সালের সংশোধনী আইনের ৮৯ ও ৮৯(ডি) ধারার সাবসেকশনে মধ্যস্থতা করার কথা বলা হয়েছে। অনেক মামলার ক্ষেত্রেই মধ্যস্থতার কারনে দ্রুত নিস্পত্তি সম্ভব। এই ক্ষেত্রে বিচারক এবং আইনজীবীদের মধ্যস্থতা জরুরি। আইনি সচেতনতার অভাবে মামলাগুলি দীর্ঘায়িত হচ্ছে বলেও রীতিমতো উদ্বেগ প্রকাশ করেন উপস্থিত বিচারপতিরা। বিচারপতি সৌগত ভট্টাচার্য্য দক্ষিণ দিনাজপুর জেলায় মিডিয়েটর কমিটির কার্য্য পরিচালনার ক্ষেত্রে উপযুক্ত পদক্ষেপ তৈরির বিষয়টি নিয়েও আলোচনা করেন।
আইনজীবী হিমাদ্রি চক্রবর্তী এই বিষয়টিকে অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক বলে বর্ণনা করেছেন। তিনি আত্মপক্ষ সমর্থনের সুরে জানান, দিল্লি, বেঙ্গালুরুতে আদালতের চাইতে মধ্যস্থতাকারীদের কার্যালয়ে বেশি ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এদিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত আইনজীবীদের কাছে মিডিয়েটরের মাধ্যমে মামলাগুলির নিস্পত্তি ঘটাতে আইনি সচেতনতা শিবির গড়ে তোলার আহ্বান জানান বিচারপতিরা। উপস্থিত আইনজীবীদের একাংশ এই পদ্ধতিতে মামলার নিস্পত্তি হলে তাঁরা ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারেন বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। যদিও এই বিষয়টি ফুৎকারে উড়িয়ে দিয়েছেন উপস্থিত বিচারপতিরা। তাদের যুক্তি – মিডিয়েটরের মাধ্যমে একটি মামলার নিস্পত্তি হলে আরও ১০টি মামলা হাজির হবে। তাতে আইনজীবীদের পসার বাড়বে বই কমবে না। এদিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মিডিয়েটর কমিটির সদস্য সচিব অনির্বান দাস এবং উত্তর দিনাজপুর জেলা লিগ্যাল অথরিটি সচিব প্রবীর মহাপাত্র-সহ অন্যান্য বিশিষ্ট আইনজীবীরা। তবে রায়গঞ্জের কর্ণজোড়ার অডিটোরিয়াম হলে ভিড়ে ঠাঁসা অনুষ্ঠানটি ধৈর্য্য সহকারে প্রত্যক্ষ করেছেন সকলেই।
Published By
Debina Chanda, Raiganj, Fourteen Time Line