উচ্চ মাধ্যমিক পাশের পর বাবাকে আর পরিযায়ী শ্রমিক হয়ে ভিন রাজ্যে পাঠাতে চাননি সাহেবঘাটায় রহস্য মৃত্যু হওয়া উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী ডলি বর্মন। বুধবার উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর দেখা গেল পাশ করেছিলেন ডলি। কিন্তু তিনি আর এপৃথিবীতে বেঁচে নেই। মেয়ের পরীক্ষার মার্কশিট হাতে নিয়ে এমনই কথা বিড়বিড় করে বলে চলেছেন ডলির মা।
কালিয়াগঞ্জ ব্লকের মালগাঁও গ্রাম পঞ্চায়েতের গাংগুয়া গ্রামের নিহত ছাত্রীর ফল প্রকাশের পর গ্রামজুড়ে যেন অস্ফুট স্বরে ফুটে উঠল হতাশার চিত্র। বুধবার উচ্চমাধ্যমিকের ফল প্রকাশিত হয়েছে। নিহত ওই ছাত্রী ২৪৩ নম্বর পেয়ে উত্তীর্ণও হয়েছেন। কিন্তু তিনি যে আর ইহলোকে বেঁচে নেই!
প্রসঙ্গত, উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে তিনি নার্সিং-এর প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজের পায়ে দাঁড়াতে চেয়েছিলেন। কিন্তু উচ্চমাধ্যমিক পাশ করলেও সেই সেবিকা আর হওয়া হল না তার। উচ্চমাধ্যমিকের মার্কশিট দেখে গাংগুয়া গ্রামটি যেনও বধির হয়ে গিয়েছে। সদ্য মেয়ে হারানো কপর্দকশূন্য মা এখন শেষ অবলম্বন হিসেবে সি বি আই তদন্ত করে অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি জানিয়েছেন ।
উল্লেখ্য , গত ২১ এপ্রিল কালিয়াগঞ্জ ব্লকের রাধিকাপুর এন এন উচ্চবিদ্যালয়ের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রীকে ধর্ষণ করে খুন হতে হয়েছিল। গরিব দু:স্থ পরিবার থেকে উঠে এসে উচ্চমাধ্যমিক পাশ মার্কশিট পাওয়ার আগেই নার্স হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন ডলি। তিনি নার্সিং ট্রেনিং স্কুলগুলিতে ভর্তিও হতে চেয়েছিলেন। কারন, নার্সিং ট্রেনিং নিতে পারলেই একটা সরকারি চাকরি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এমনটিই জানা ছিল তার । চাকরি পেলে তিনি পরিবারকে সাহায্য করতেও পারবেন। বাবা পরিযায়ী শ্রমিক। বছরের বেশীর ভাগ সময় পরিবার চালাতে ভিন রাজ্যেই কাটাতে হ’ত বাবাকে। এমতাবস্থায় বিরহ যন্ত্রণায় ভুগতেন বাবা এবং মা উভয়ই। তাই তিনি একটা চাকরি জোগাড় করতে পারলেই বাবাকে আর ভিন রাজ্যে কাজের খোঁজে পা রাখতে দিতেন না। সেই স্বপ্ন নিয়েই সাহেবঘাটা এন এন উচ্চবিদ্যালয় থেকে উচ্চমাধ্যমিক দিয়েছিলেন ডলি। মাধ্যমিকেও তিনি ভাল ফল করেছিলেন। যে লক্ষ্য নিয়ে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় বসেছিলেন, সেই স্বপ্ন ওই তরুণী ছাত্রীর কাছে দুঃস্বপ্ন হয়েই থেকে গেল। বুধবার ফল প্রকাশের পর জানা গেল- তিনি ২৪৩ নম্বর পেয়ে উচ্চমাধ্যমিকে উত্তীর্ণ হয়েছেন। ছাত্রীটি বেঁচে থাকলে তিনি যেমন পাশ করার আনন্দের খুশি হতেন, ঠিক তেমনি পরিবারকেও আনন্দে ভরিয়ে তুলতে পারতেন। আনন্দে ভরে উঠত গোটা গ্রাম। কিন্তু ফল জানার পর গ্রাম জুড়ে হতাশার ছবি। নিহত ছাত্রীর যেমন স্বপ্নপূরণ হল না, তেমনি অভিবাভকদের কাছেও সেই স্বপ্ন অধরাই থেকে গেল। তার অকাল মৃত্যুতে পরিবারের সদস্যরা বুধবার থেকেই ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে চলেছেন। আজও মেয়েটির জন্য দিনরাত কাঁদতে হচ্ছে। নিহত ছাত্রীর মায়ের আশা- সি বি আই তদন্তের মাধ্যমে অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হবে। সেই আশাতেই দিন গুনছে নিহত ছাত্রীর পরিবার।
উত্তর দিনাজপুরের গাঙ্গুয়া গ্রাম ঘুরে উত্তম পালের রিপোর্ট, টাইমস ফোর্টিন বাংলা।