রাজ্য সরকারের দেওয়া অনগ্রসর সম্প্রদায়ের ছাত্র ছাত্রীদের স্কলারশিপের কোটি কোটি টাকা লোপাটের ঘটনায় অভিযুক্ত মাহাতাবুদ্দিনকে ফের দু’দিনের পুলিশি হেফাজতে নিল করণদিঘি থানার পুলিশ। গত ২৫ এপ্রিল উত্তর দিনাজপুর জেলা প্রশাসনের অভিযোগের ভিত্তিতে করণদিঘি থানার পুলিশ করণদিঘির সাবধান এলাকার বাড়ি থেকে মাহাতাবুদ্দিনের বাড়ি থেকেই গ্রেফতার করে। ২৬ এপ্রিল ইসলামপুর মহকুমা আদালতে পেশ করে ১২ দিনের পুলিশি হেফাজতে নেয় করণদিঘি থানার পুলিশ। এই ক’দিন মাহাতাবুদ্দিনকে জিঞ্জাসাবাদ করে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উদ্ধার হয়েছে বলে পুলিশি সূত্রের খবর। আরও কিছু তথ্য উদ্ধারের জন্য পুনরায় দু’দিনের পুলিশি হেফাজত চেয়ে শনিবার আদালতের দ্বারস্থ হয় পুলিশ। বিচারক ২ দিনের পুলিশি হেফাজত মঞ্জুরও করেন। যদিও এদিনও সে কিছুই জানেনা বলে সংবাদ মাধ্যমের কাছে দাবি করে।
রাজ্য সরকারের দেওয়া অনগ্রসর সম্প্রদায়ের ছাত্র ছাত্রীদের স্কলারশিপের কোটি কোটি টাকা লোপাটের ঘটনায় অভিযুক্ত মাহাতাবুদ্দিন গত চার বছর আগেও মাটির দেওয়ালের বাড়িতে থাকতেন। তখন স্থানীয় দোকানদাররাও মাহাতাবুদ্দিনকে কোন সামগ্রী বাকিতে দিতে চাইতেন না বলে দাবি করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। কিন্তু চার বছর পর তিনি বর্তমানে রীতিমতো বিত্তশালী। তার নামে কয়েকটি বাড়ির পাশাপাশি জমিজমা সহ বেশ কয়েকটি মার্কেটেও। অন্যদিকে চার চারটি ব্যাংক এ্যাকাউন্টও রয়েছে তার। প্রত্যাশিতভাবেই প্রশ্ন উঠেছে- বছর পাঁচেক আগে যে কিনা ভিনরাজ্যে শ্রমিকের কাজে যুক্ত ছিল, সেই মাহাতাবুদ্দিন কি করে এতও বিপুল পরিমান প্রতিপত্তির মালিক হলেন। করণদিঘির অনগ্রসর সম্প্রদায়ভুক্ত ছাত্র ছাত্রীদের রাজ্য সরকারের দেওয়া স্কলারশিপের টাকা আত্মসাতের মূল চক্রি মাহাতাবুদ্দিনকে ক’দিন আগেই গ্রেফতার করে করণদিঘি থানার পুলিশ।
করণদিঘির সাবধান এলাকার বাসিন্দা মাহাতাবুদ্দিন তার নিজের নামে বিভিন্ন ব্যাঙ্কে একাউন্ট বানিয়ে এসসি, এসটি ও ওবিসি সম্প্রদায়ের ছাত্র ছাত্রীদের কাস্ট সার্টিফিকেট ব্যাবহার করে তাদের স্কলারশিপের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছিলেন। তিনি এই কাজে একাই নন বলেও অভিযোগ ছিল। এখানে জড়িয়ে আছে তার তিন ভাই হায়াত আলি, হুমাউন কবির, সারজাহান আলি-সহ একাধিক ব্যাক্তি। এই ব্যাক্তিদের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই করণদিঘি থানার আইসি, বিডিও কে লিখিত অভিযোগও দায়ের করেছিলেন স্থানীয় কিছু মানুষ।
ঘটনার প্রকৃত তদন্ত ও দোষীদের শাস্তির দাবিতে উত্তর দিনাজপুরের জেলা শাসকের কাছেও লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন এলাকার মানুষ। তার পরেই জেলা প্রশাসন পুলিশের কাছে মাহাতাবুদ্দিন-সহ একাধিক ব্যাক্তির বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করে। তার পরেই করণদিঘি থানার পুলিশ মাহাতাবুদ্দিনকে তার বাড়ি থেকেই গ্রেফতার করে। তার বিরুদ্ধে পুলিশ 420/406/468/471/120B IPC. ধারায় মামলা দায়ের করে তাকে জিঞ্জাসাবাদের জন্য ১৪ দিনের জন্য পুলিশি হেফাজত চেয়ে ইসলামপুর আদালতে পাঠানোর পরে তাকে ১২ দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেয়। এর পরেই গ্রামবাসীদের সঙ্গে কথা বললে তারা বলেন- আগে মাহাতাবুদ্দিনের কিছুই ছিল না। স্কলারশিপের টাকা আত্মসাত করে কোটি কোটি টাকা রোজগার করেছে বলে গ্রামবাসীরা অভিযোগ করেছেন। তাদের দাবি- তার সমস্ত সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার পাশাপাশি কঠোর সাজা হোক তার। আর এই ঘটনায় যুক্ত সব্বাইকে খুঁজে বের করা হোক। প্রশাসনের ধারণা- মাহতাবউদ্দিন হিমশৈলের চুড়ো মাত্র। আড়ালে লুকিয়ে রয়েছেন রাঘব বোয়ালেরা। তাদের খোঁজেই তদন্তের ছায়া প্রলম্বিত করছে জেলা ও পুলিশ-প্রশাসন।