ঘরেতেই যেখানে জা-এ, জা-এ সঙ্গে খুব সুসম্পর্ক থাকে না। সেখানে আবার এবারে ভোটের লড়াইয়ে সম্মুখ সমরে অবতীর্ণ হয়েছেন দুই জা। দুই জা-এর লড়াই এখন নির্বাচনের নজরকাড়া কেন্দ্র হিসেবে স্থান পেয়েছে। একইসঙ্গে সংসার করেছেন প্রায় ২৩ বছর। বাড়ির উঠোন একই, রান্নাও করেন একসঙ্গেই, সহোদর বোনের মত থাকেন দু’জনে। এমনকি তাদের বিয়েও হয়েছে একই দিনে। কিন্তু দু’জনের সম্পর্কের মাঝে বাঁধ সেধেছে এবছরের পঞ্চায়েত নির্বাচন। কার্যত পড়শী সকলকে অবাক করে দুই জা ভোটের লড়াইয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে দাঁড়িয়ে পড়েছেন। একজন দাঁড়িয়েছেন শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের হয়ে, অন্যজন দাঁড়িয়েছেন দীর্ঘ ৩৪ বছর পশ্চিমবঙ্গে রাজত্ব করা সি.পি.এম-এর হয়ে।
উল্লেখ্য, এই সি.পি(আই).এম-কে সরিয়েই ২০১১ সালে বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস ক্ষমতায় আসে। কিন্তু নির্বাচনে দুই প্রতিপক্ষ দলের প্রার্থী হলেও এখনও ঘর করছেন তারা একসঙ্গেই। এমনকি একজন প্রচারে বার হলে তার সন্তানদের দেখভাল করা-সহ বিভিন্ন কাজ সারছেন অন্য জা। বাড়ির রান্না, গবাদি পশুদের পরিচর্যা-সহ বাড়ির কাজকর্ম সামলাচ্ছেন সঞ্জিমা খাতুন। এমনকি বাড়ির দাওয়ায় বসে ভাইঝি তথা সখিনা খাতুনের মেয়ের একাকিত্বের সঙ্গীও হয়ে উঠেছেন তিনি। অন্যদিকে সেই সময় এলাকার বাড়ি বাড়ি গিয়ে নির্বাচনী প্রচার সেরেছেন সখিনা খাতুন। তবে ব্যাক্তিগত জীবনে যতই মিল-ই থাকুক না কেনও নির্বাচনে কেউ কাউকে এক ইঞ্চি জমিও ছাড়তে নারাজ। যা দেখে অবাক গ্রামবাসীরাও। পরিবারে কোনও বিবাদ নেই, অথচ রাজনীতির ময়দানে তারা একে অপরের প্রতিপক্ষ। গ্রামবাসীরা জানান, যে কোনও একজনকে ভোট তো দিতেই হবে কিন্তু এই যে দলীয় মতবিরোধ থাকা সত্বেও পারিবারিক বাঁধন অটুট এটা সত্যিই বেনজির ঘটনা।
বাড়ির দাওয়ায় বসে সঞ্জিমা খাতুন জানান, ব্যক্তিগত সম্পর্ক একইরকম থাকবে। তবে রাজনৈতিক ময়দানে অবশ্যই লড়াই থাকবে। এমনকি জেতার বিষয়েও আশাবাদী তিনি।
বাড়ি-বাড়ি ঘুরে প্রচার করছেন সখিনা খাতুন। নির্বাচনী প্রচারের মাঝে তুলে ধরছেন রাজ্য সরকারের প্রকল্পগুলিও। প্রচারের ফাঁকে তিনিও জানান, তিনি বাড়ি ফিরলে হয়তো তার জা বেরোবেন এলাকায় প্রচার করতে। লড়াই এর ময়দানে হার জিত তো থাকবেই, তবে তা তাদের পারিবারিক বন্ধনে প্রভাব ফেলবে না বলেই ধারনা উভয়ের।
এখন বড় প্রশ্ন, স্থানীয় বাসিন্দারা বিষয়টি নিয়ে যতই মজা করুক, নির্বাচনে কে কাকে ছাপিয়ে বাজিমাত করবে সেদিকেই তাকিয়ে রয়েছেন তারা।
উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জ থেকে প্রবাল সাহার রিপোর্ট, টাইমস ফোর্টিন বাংলা।