উত্তর দিনাজপুরের ইসলামপুর মহকুমার প্রাথমিক শিক্ষা দফতরের গুদাম থেকে প্রায় দুই লক্ষ পাঠ্য বই উধাও এর ঘটনায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। ইসলামপুর অবর বিদ্যালয় পরিদর্শকের পক্ষ থেকে ষ্টোর কিপারের বিরুদ্ধে ইসলামপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে। পুলিশ সেই অভিযোগের ভিত্তিতে ষ্টোর কিপার ভীম মন্ডলকে গ্রেফতার করেছে। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে ইসলামপুর থানার পুলিশ। শনিবার ঘটনার সরেজমিনে তদন্তে যাচ্ছেন উত্তর দিনাজপুর জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক দুলাল সরকার।
সূত্রের খবর, ২০২৩ -২৪ শিক্ষাবর্ষে নিম্ন প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক পর্যন্ত সরকারি পাঠ্য বই বিতরণের জন্য রাজ্য স্কুল শিক্ষাদফতর থেকে জেলায় জেলায় বই পাঠানো হয়। উত্তর দিনাজপুর জেলার ইসলামপুর মহকুমায় দু’লক্ষ ১৫ হাজারের মত পাঠ্য বই পাঠানো হয়েছিল। ইসলামপুর মহকুমায় প্রাথমিক শিক্ষাদফতরের ষ্টোরের দায়িত্বে আছেন অস্থায়ী কর্মী ভীম মন্ডল। ২০১৭ সাল থেকে ভীম মন্ডল ষ্টোরের দায়িত্বে আছেন। তিনি রাজ্য শিক্ষা দফতর থেকে পাঠানো বই গ্রহন গ্রহণ করেন। ভীমবাবুই সরকারি পাঠ্য বই স্কুলে স্কুলে বিতরণ করে থাকেন। আগামী ২ জানুয়ারি থেকে সরকারি পাঠ্য বই স্কুলে স্কুলে বিতরণ করার পরিকল্পনা নিয়েছে জেলা শিক্ষা দফতর। জেলা শিক্ষা দফতর এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরই ব্লকের অবর বিদ্যালয় পরিদর্শকদের জানিয়ে দেওয়া হয়। ইসলামপুর ব্লকের অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক শুভঙ্কর নন্দীর হাতে এই নির্দেশ আসার পরই তিনি ষ্টোর পরিদর্শনে যান। তিনি ষ্টোর পরিদর্শন করতেই চক্ষু চড়কগাছ। তিনি ষ্টোরে গিয়ে দেখেন- যে পরিমাণ সরকারি পাঠ্য বই গ্রহণ করা হয়েছে প্রায় দু’লক্ষ বই উধাও হয়ে গেছে। ষ্টোর কিপার ভীম মন্ডলকে জিজ্ঞাসাবাদ করে তার কাছ থেকে কোনও সদুত্তর মেলেনি। অবর বিদ্যালয় পরিদর্শকের হাতে এই তথ্য আসার পরই বৃহস্পতিবার শুভঙ্কর নন্দী রায়গঞ্জের কর্ণজোড়ায় জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক এবং জেলা প্রশাসনের নজরে আনেন। জেলা প্রশাসনের নির্দেশে শুক্রবার অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক শুভঙ্কর নন্দী ইসলামপুর থানায় ভীম মন্ডলের নামে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশ অভিযোগ পাওয়ার পরই ভীম মন্ডলকে গ্রেফতার করেছে। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে ইসলামপুর থানার পুলিশ। বিষয়টি জানাজানি হতেই শুক্রবার দুপুরে অবর বিদ্যালয় পরিদর্শকের সঙ্গে মিলিত হন তৃণমূল প্রাথমিক শিক্ষক সংঠনের নেতারা। অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক সিপিএমের প্রাথমিক শিক্ষক সংগঠন এবিপিটিএ নেতাদের বিষয়টি নিয়ে অবগতি না করায় তারাও উত্তেজিত হয়ে অবর বিদ্যালয় পরিদর্শকের সঙ্গে মিলিত হয়ে ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্তের দাবি জানান। এবিপিটিএ জেলা কমিটির সদস্য রঘুপতি মুখোপাধ্যায়ের অভিযোগ- পাঠ্যবই উধাও এর ঘটনা একটি সংগঠিত অপরাধ। ২০১৯ সালে এই প্রাথমিক শিক্ষা দফতরের গুদামে আগুনে ভস্মীভূত হয়েছিল। ঘটনার তদন্ত শুরু হলেও তদন্তের শেষ হয়নি। এই ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত হওয়া জরুরী। শিশুদের পাঠ্যবই নিয়ে ছেলেখেলা তারা মানবেন না। পাঠ্যবই গুদাম পর্যন্ত এসেছে নাকি মাঝপথেই বই উধাও হয়ে গেল পুলিশকে তা খুঁজে বার করতে হবে। তৃণমূল প্রাথমিক শিক্ষক সংগঠনের ইসলামপুর শহর সভাপতি মৌসুমী নন্দী জানিয়েছেন, সরকারি পাঠ্য বই উধাও-এর মত ঘটনা ঘটেছে। বিপুল পরিমাণ পাঠ্যবই কিভাবে উধাও হ’ল পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। পুলিশি তদন্তে পুরো ঘটনা পরিষ্কার হবে। অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক শুভঙ্কর নন্দী জানিয়েছেন, বই উধাও-এর ঘটনাটি থানায় অভিযোগ দায়ের করার পাশাপাশি জেলা শিক্ষা দফতর, জেলা প্রশাসন এবং রাজ্য শিক্ষা দফতরকেও তিনি জানিয়েছেন। বিপুল পরিমাণ সরকারি পাঠ্যবই উধাও এর ঘটনায় জেলা জুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। শনিবার ঘটনার তদন্তে ইসলামপুরে যাচ্ছেন জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক দুলাল সরকার।
এ বিষয়ে ইসলামপুরের এ বি টি এর অবর বিদালয় পরিদর্শক সদস্য রঘুপতি মুখোপাধ্যায় কি জানিয়েছেন শুনুন-
পাশাপাশি ইসলামপুর তৃণমূল প্রাথমিক শিক্ষক সংগঠনের সভাপতি মৌসুমী নন্দী কি বলেছেন শোনাব-
অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক শুভঙ্কর নন্দী আরও কি কি জনিয়েছেন শুনুন-
উত্তর দিনাজপুরের ইসলামপুর থেকে উত্তম পালের রিপোর্ট, টাইমস ফোর্টিন বাংলা।