Uttar Dinajpur: স্রেফ মুক্তির আশায় কয়েদিরাও কাজ করছেন শহরে

আরও পড়ুন

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বহু আগেই বলে গিয়েছেন-‘ওরা কাজ করে’। তবে এক্ষেত্রে ভিন্ন ছবি; সরকারি নথিতে খুনের আসামী হয়েও বিধি মেনে মানুষের মাঝে কাজে মগ্ন ‘রায়গঞ্জ মুক্ত সংশোধনাগারের বন্দিরা’। সারা রাজ্যের সঙ্গে সঙ্গে উত্তর দিনাজপুরের জেলা সদর রায়গঞ্জেও সকলের সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করে চলেছেন খুনের দায়ে সাজাপ্রাপ্ত আসামীরা। পুরনো অপরাধ ভুলে “প্রত্যেকে আমরা পরের তরে” এমন ভাবনাকে মুঠো করে কাজ করে চলেছেন ‘ওরা’। এই মুহূর্তে ২৩ জন রায়গঞ্জ মুক্ত সংশোধনাগারের বন্দি রয়েছেন, যারা সকলেই নিয়ম করে সংশ্লিষ্ট মুক্ত সংশোধনাগার থেকে বার হচ্ছেন, পাশাপাশি কারারক্ষীদের বেঁধে দেওয়া নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই মুক্ত সংশোধনাগারে ফিরে আসছেন। এমনটি চালিয়ে যেতে পারলে কারাকর্মীদের কলমের খোঁচায় সুনির্দিষ্ট সময়েই তারা মুক্তি লাভ করবেন সংশোধনাগারের ঘেরাটোপ থেকে। সেই লক্ষ্যেই প্রাণপণ লড়ছেন মুক্ত সংশোধনাগারের ২৩ জন বন্দি। ঠিক ছ’বছর আগে ১২ নম্বর (পড়ুন- পূর্বতন ৩৪ নম্বর) জাতীয় সড়কের গা ঘেঁষে থাকা জেলা সংশোধনাগারের সামনে ২০১৬ সালে সংশোধন ও প্রশাসন বিভাগের মন্ত্রী হায়দার আজিজ সফি কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারের আদলে জেলা সংশোধনাগার সংলগ্ন এলাকায় রায়গঞ্জ মুক্ত সংশোধনাগারের শুভ দ্বারোদঘাটন করেন। এরপর থেকে মুক্ত সংশোধনাগারে পা রাখার জন্য কয়েদিদের মধ্যে হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। ডাক্তার এস ওয়াজেদ আলির কথায়- “সেই ট্র্যাডিশন আজও সমানে চলছে”। অর্থাৎ অপরাধীরা প্রত্যেকেই সংশোধনাগার থেকে মুক্তির আগে ‘রায়গঞ্জ মুক্ত সংশোধনাগারের মাধ্যমে’ “প্রি-রিলিজ” চাইছেন ।

মহামান্য আদালতের রায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত বহু সাজাপ্রাপ্ত অপরাধীরা রায়গঞ্জ সংশোধনাগারে আটক রয়েছেন। তবে তাদের মধ্যে কিছু বন্দিকে সরকারি নিয়ম মেনে, স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে মানুষের মধ্যে মিশে সংশোধন হওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়। মূলত সেই কারণেই কেন্দ্রীয় কারাগারের পাশাপাশি জেলা কিংবা মহকুমাস্তরে শুরু হয়েছিল মুক্ত সংশোধনাগার তৈরির পরিকল্পনা। রায়গঞ্জ শহর লাগোয়া বর্তমানে ১২নম্বর জাতীয় সড়কের পাশেই রয়েছে একটি মুক্ত সংশোধনাগার। কারারক্ষী ও স্থানীয় মানুষদের সূত্রে খবর- এই মূহুর্তে সেখানে মুক্ত অবস্থায় বন্দি হিসেবে রয়েছেন ২৩ জন । যারা প্রতিদিন নিয়ম মেনে সকালের ” রোল কল”-এ হাজিরা দিয়ে চলে যান শহরের সাধারণ মানুষের ভিড়ে। দিনশেষে আর পাঁচজন কর্মী বা দিনমজুরের মত আয় করে পুনরায় ফেরেন সরকারি ঘেরাটোপে। বিধি মেনে তাদেরও সন্ধ্যেবেলায় সাড়া দিতে হয় ‘রোল কল’- এ। এদের কেউ টোটো চালিয়ে উপার্জন করছেন, তো কেউ রাজমিস্ত্রীর সাহায্যকারী শ্রমিক। কেউবা জেরক্স মেশিন চালিয়ে রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয় লাগোয়া দোকানে কাজ করছেন, তো কেউ কাঠের মিস্ত্রি হিসেবে নাম লিখিয়েছেন সমাজের আঙিনায়। রায়গঞ্জ মুক্ত সংশোধনাগারে পা রেখেই জানা গেল- তাদের নয়া জীবনযুদ্ধের লড়াইয়ের কথা, অন্ধকার থেকে আলোয় ফেরার উত্তরণের চেষ্টার কাহিনীও ।

নাম গোপন রাখার শর্তে বন্দিদের কাজের সমস্যার কথাও জানিয়েছেন রায়গঞ্জ সংশোধনাগারের কারারক্ষীরা। তাদের কথায়, যেহেতু ওরা সাজাপ্রাপ্ত কয়েদি, তাই সাধারণ মানুষ খুব সহজে তাদের মেনে নিতে চান না। অনেকেই চান না তাদেরকে বাড়ির কাজে রাখতে। তাই ওদেরকে নিয়ে কোথাও কোনও গুরুতর সমস্যা হলে থানার সহায়তা নিয়ে সেখানে পৌঁছে সাধারণ মানুষকে প্রাণপণ বোঝানোর চেষ্টা করে আর পাঁচটা সাধারণ মানুষের মতো জীবনধারণের সুযোগ করে দেওয়া হয়। কবির কথায় ফের বলা যায়- সরকারি বিধির পাশাপাশি কারাকর্মীদের ভরসাতেই আজও তারা সমানতালে ‘কাজ করে যায়’।

রায়গঞ্জের মুক্ত সংশোধনাগার ঘুরে এসে প্রবাল সাহার রিপোর্ট, টাইমস ফোর্টিন বাংলা।

- Advertisement -

সম্পর্কিত খবর

- Advertisement -

ট্রেন্ডিং

close