Uttar Dinajpur: স্ফটিক নিয়ে গবেষণার জন্য কুয়ালালামপুর চললেন শুভজিৎ

আরও পড়ুন

প্রথম বিদেশের মাটি ছোঁয়ার কথা আগামিকাল, ১ ডিসেম্বর। তাই দু’দিন আগে থেকেই শুরু করেছিলেন জামাকাপড় গোছানোর কাজ। বিদেশে গিয়ে নিজের হাতে খাবার বানিয়ে পেটের খিদে মেটানোর জন্য ইতিমধ্যেই সুটকেসে ঢুকেছে চাল, ডাল, প্রেসার কুকার, তাওয়া, হাতা আরো কত কি। চোখ ছলছল অবস্থায় ব্যাগ গুছিয়ে দিচ্ছেন আদরের ছোট বোন জয়া। করনদিঘি ব্লকের আলতাপুর হাইস্কুলের প্রাক্তনী শুভজিৎ সরকার চলেছেন রসায়ন নিয়ে গবেষণা করতে মালয়েশিয়ায়। করনদিঘি ব্লকের প্রত্যন্ত গ্রাম বিকনপুর থেকে এই প্রথম কোনও ছেলে গবেষণার জন্য পাড়ি দিতে চলেছেন বিদেশ। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই প্রত্যন্ত গ্রাম জুড়ে আজ খুশির হাওয়া। সূত্রের খবর, বিদেশে ৩ বছরের গবেষণার জন্য ফেলোশিপ হিসেবে শুভজিৎ ভারত সরকারের কাছ থেকে পেয়েছেন ১ কোটি ২৫ লক্ষ টাকা। সিন্থেটিক অর্গানিক রসায়নের সঙ্গে তরল স্ফটিক নিয়ে গবেষণা করতে তিনি পা রাখতে চলেছেন মালয়েশিয়ার ইউনিভার্সিটি অফ মালায়াতে। এদিন তিনি জানান, স্থানীয় বিকনপুর প্রাথমিকের পর আলতাপুর হাইস্কুল থেকে মাধ্যমিক পাশ করেন তিনি। এরপর কর্ণজোড়া স্কুল থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে, ইটাহারের ড. মেঘনাদ সাহা কলেজ থেকে রসায়নে স্নাতক হয়েছেন। তারপর চলে আসেন শিলিগুড়ির উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে। স্নাতকোত্তর শেষে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মহঃ ফিরোজ হোসেন ও অধ্যাপক ভাস্কর বিশ্বাসের প্রেরণায় খোঁজ নিতে শুরু করে বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার সুযোগ পান। করোনা আবহে সেই সময় শুরু হয় দেশজুড়ে লকডাউন। সেই সময় মানসিক ভাবে তিনি একেবারেই ভেঙে পড়েছিল বলে জানান শুভজিৎ। তিনি বলেন, তারপরই নিজেই যোগাযোগ করতে শুরু করেন জার্মানি, ইংল্যান্ড, হাঙ্গেরি, জাপান, মালয়েশিয়া-সহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যালয় গুলিতে। সুযোগও মিলে যায় বেশ কয়েকটি বিদেশের বড় বিশ্ববিদ্যালয়ে। তখন ভারত সরকারের কাছে ফেলোশিপের আবেদন করলে তারা অনুমোদন দেয়। কিন্তু পারিবারিক আর্থিক স্বচ্ছলতা না থাকায় সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন করনদিঘির সমষ্টি উন্নয়ণ আধিকারিক নীতীশ তামাং, থানার আই সি পলাশ মোহান্ত, স্থানীয় বিধায়ক গৌতম পালও। তাদের সহযোগিতাতেই মঙ্গলবার ট্রেনে কোলকাতার পথে পা বাড়ালেন তিনি।
বাবা শঙ্কর সরকার বেসরকারি কোম্পানি ছেড়ে লকডাউনের পর থেকে প্রান্তিক কৃষক হিসেবে চাষাবাদ করেন। তাঁর স্বপ্ন, বড় ছেলে উচ্চ শিক্ষিত হয়েও যেনও মানুষের মত মানুষ হতে পারে। তিনি বলেন, ওর উচ্চ শিক্ষার জন্য আমি আর্থিক ভাবে সাহায্য করতে পারিনি। যা সাফল্য এসেছে, সেটা সম্পূর্ণভাবে ওর কৃতিত্ব। সকলের সাহায্য নিয়ে গবেষণার পাশাপাশি ও যেন ভালো মানুষ হয়, সেটাই কামনা করি।

এদিকে, গবেষণা শেষে ভবিষ্যতে দেশে ফিরে আসতে চান বিনয়ী স্বভাবের শুভজিৎ। তাঁর ইচ্ছে- এদেশের কোনওগবেষণা সংস্থায় গবেষণা করে নতুন কিছু আবিষ্কার করা।
এদিন সকাল থেকেই লুকিয়ে চোখের জল মুছছিলেন ঠাকুরমা, দিদা, কাকু, কাকিমা সহ মা সরস্বতী সরকার, বোন জয়া ও ভাই তন্ময়। কিন্তু বিদায়বেলায় তার আর ধরে রাখতে পারেননি চোখের জল। মায়ের চোখের জল মুছে বুধবার যখন কলকাতা হয়ে কুয়ালালামপুর পাড়ি দিচ্ছেন তিনি, তখন তার দু’চোখে নতুন কিছু আবিস্কারের স্বপ্ন। তাঁর জন্য শুভ কামনা করেছেন সকলেই।

উত্তর দিনাজপুরের করমদিঘি থেকে প্রবাল সাহার রিপোর্ট, টাইমস ফোর্টিন বাংলা।
.

- Advertisement -

সম্পর্কিত খবর

- Advertisement -

ট্রেন্ডিং

close