নারীদের গর্ভপাতের অধিকার নিষিদ্ধ করল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট দেশ জুড়ে নারীদের গর্ভপাতের অধিকার খর্ব করল। ১৯৭৩ সালে আমেরিকার আদালতের তরফ থেকে এক মামলার রায়ে গর্ভপাতের অধিকার প্রদান করা হয়েছিল। এবার থেকে ওই আইনকে আর মান্য করা হবে না।

আরও পড়ুন

এ এক ঐতিহাসিক রায়। এবার থেকে আর গর্ভপাত করানো যাবে না আমেরিকায়। গর্ভপাতের অধিকার কার্যত খর্ব করল সেদেশের সুপ্রিম কোর্ট। এর ফলে, আগামীতে কেউ যদি গর্ভপাত করাতে চান তাহলে রাজ্যের সংবিধানের সেই অধিকার কেড়ে নেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে। উল্লেখ্য, সুপ্রিম কোর্টের এই নির্দেশ জারির পরে আমেরিকার একাধিক রাজ্য এই পন্থাই অবলম্বন করবে বলে অনুমান করা হচ্ছে। তবে হ্যাঁ, আমেরিকার কোনও রাজ্য প্রশাসন যদি চায়, তাহলে তারা গর্ভপাতের অনুমতি দিতেই পারে। সেক্ষেত্রে কোনওরকম হস্তক্ষেপ করবে না শীর্ষ আদালত, এমনটাও বলে দেওয়া হয়েছে এদিন।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিষিদ্ধ গর্ভপাত

উল্লেখ্য, এক্ষেত্রে একটি বিষয় বিশেষভাবে উঠে আসছে, তা হল ‘রো বনাম ওয়েড‘ মামলা। এটি মূলত ১৯৭৩ সালের ২২ জানুয়ারি জারি করা একটি যুগান্তকারী আইন। সেই আইনে মার্কিন সুপ্রিম কোর্ট টেক্সাসের একটি বিধিমালাকে গর্ভপাত নিষিদ্ধ করবার কথা ঘোষণা করেছিল। এবং আমেরিকা তা কার্যকরভাবে আইনীকরণও করেছিল। শীর্ষ আদালত স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিল, কোনও মহিলার গর্ভপাতের অধিকারটির দ্বারা রক্ষিত গোপনীয়তার অধিকারে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত ছিল ১৪তম সংশোধন। ১৯৭৩ সালের এই রায়ের পর থেকেই একাধিক রাজ্যই গর্ভপাতের অধিকারের উপর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে।

সুপ্রিম কোর্টের সামনে গর্ভপাতের বিপক্ষে আন্দোলনকারীদের জমায়েত

এবার, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই নয়া নির্দেশের জেরে গত ৫০ বছর ধরে চলে আসা গর্ভপাতের এই আইনকে আর মান্যতা দেওয়া হবে না। শীর্ষ আদালত জানিয়েছে, রো বনাম ওয়েড মামলায় মার্কিন সংবিধানের কার্যত অপব্যাখ্যা হয়েছে। ওই রায়টিতে বলা আছে, কোনও মহিলা গর্ভাবস্থার ২৪-২৮ সপ্তাহের মধ্যে গর্ভপাত করাতে পারেন। তবে হ্যাঁ, যদি এ বিষয়ে চিকিৎসকরা নিশ্চিত করেন নারীর জীবন রক্ষা বা স্বাস্থ্যের জন্য এটা জরুরি, তবেই তা সম্ভব। কিন্তু, সংবিধানে এমন কিছু উল্লেখ নেই যাতে এই অধিকার দেওয়া যেতে পারে। এদিকে, ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে, আগামীতে গর্ভপাতকে চূড়ান্ত অপরাধ হিসেবেও দেখানোর আইন তৈরি হতে পারে।

উল্লেখ্য, ১৯৮০ সালে মার্কিন সুপ্রিম কোর্ট দেশে এমন একটি আইন জারি রাখে, যাতে গর্ভপাতের জন্য কেন্দ্রীয় ফেডারেল সরকারের তহবিল ব্যবহার করা যাবে না। শুধুমাত্র, তহবিল তখনই ব্যবহার করা যাবে, যখন সেটা নারীর জীবন মরণ পরিস্থিতিতে এসে দাঁড়াবে। এর আগে মার্কিন শীর্ষ আদালত গর্ভপাত সম্পর্কিত আরও কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করেছিল দেশে। তাতে বলা হয়েছিল, দেশের অঙ্গরাজ্যগুলির সরকারি ক্লিনিকে সরকারি কর্মচারীদের দিয়ে কোনও নারী গর্ভপাত করাতে পারবেন না।

১৯৮২ সালে মার্কিন সুপ্রিম কোর্ট একটি বড়সড় আইন জারি করে। যার বেশ প্রভাব পড়েছিল দেশ জুড়ে। মামলাটির নাম ‘প্ল্যানড প্যারেন্টহুড বনাম কেইসি’। এতে বলা হয়, রাজ্যগুলি গর্ভপাতকে প্রথম তিন মাসের মধ্যে সীমিত করতে পারে যদি সেটা নন-মেডিক্যাল কারণে হয়। এক্ষেত্রে অবশ্য এমনটাও বলা হয়, ভ্রুণ পরিণত অবস্থায় যাবার আগে যদি কোনও নারী গর্ভপাত করাতে চান তাহলে সেক্ষেত্রে অঙ্গরাজ্যের কর্তৃপক্ষ কোনওরকম আইনি বোঝা তার ওপর চাপাতে পারবে না।

প্রসঙ্গত, এর আগে ২০১৮ সালে চীন নারীর স্বাস্থ্যগত জীবন ব্যতীত গর্ভপাত নিষিদ্ধ করেছে। সেদেশের বক্তব্য, দেশে জন্মের হার নিম্নমুখী। পরিবারগুলিকে আরও বেশি শিশু জন্ম দিতে উৎসাহিত করতে হবে। গর্ভপাত নারীস্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর এবং এটি নারীদের উর্বরতায় খারাপ প্রভাব ফেলে। জানা যায়, ব্রাজিলে মহিলাদের গর্ভপাত করাতে গেলে বেশ কিছু সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। সেখানে মহিলাদের জীবনের ঝুঁকির কথা মাথায় রেখেই গর্ভপাত করানোর অনুমতি প্রদান করা হয়। নতুবা, অন্যান্য বিশেষ বা জরুরি কারণেই তা মঞ্জুর করা হয়।

অন্যদিকে, নাইজেরিয়াতে নারীর প্রাণের ঝুঁকি থাকলে তবেই গর্ভপাতের অনুমতি দেওয়া হয়। এছাড়া যদি কেউ গর্ভপাত করান তাহলে তার জন্য উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা আছে। সৌদি আরবে আবার গর্ভপাতের জন্য মহিলার স্বামীর অনুমতি প্রয়োজন হয়। ইউরোপীয় ইউনিয়নের একমাত্র দেশ মাল্টাতে গর্ভপাতের অনুমতি কোনওভাবেই দেওয়া হয় না। যদি কেউ সেখানে গর্ভপাত করান, তাহলে সেক্ষেত্রে ওই মহিলাকে ১৮ মাস থেকে ৩ বছর পর্যন্ত জেলবন্দী থাকতে হয়। এমনকি তিনি যদি কোনও চিকিৎসক হন তবে তাঁর ডাক্তারি লাইসেন্সও বাতিল করে দেওয়া হয়। চলতি বছরের গত এপ্রিল মাসেই ফ্লোরিডা গর্ভপাতকে গুরুতর অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করে একটি বিল পাশ করেছে। তারপরেই, যুক্তরাষ্ট্রের আরেকটি রাজ্য ওকল্যাহোমাও এই আইনের পথে হাঁটা শুরু করে।

প্রসঙ্গত, গর্ভপাত বিষয়টি নৈতিকভাবে কতটুকু সম্মত, বা আদৌ সম্মত কিনা, তা নিয়ে যুক্তি এবং পালটা যুক্তি কখনওই শেষ হওয়ার নয়। কেউ এটাকে ব্যক্তির স্বাধীনতার অধিকারের উপর ছেড়ে দেন, আবার কেউ বিষয়টি ব্যভিচারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বলে দাবি করেন। মোদ্দা কথা, গর্ভপাত বরাবরই একটি বিতর্কিত বিষয়।

- Advertisement -

সম্পর্কিত খবর

- Advertisement -

ট্রেন্ডিং

close