যুক্তরাজ্যের রাজনীতিতে বরিস জনসনের যুগ শেষ। ব্যাপক তর্কবিতর্কের পর অবশেষে তাঁকে সরে যেতেই হল। তাঁর বিরুদ্ধে এক নয় একাধিক অভিযোগ রয়েছে। পার্টিগেট কেলেঙ্কারি (Partygate Scandal) থেকে শুরু করে নানা অভিযোগ উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে। এখন ব্রিটেনের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী কে হবেন তা নিয়ে শুরু হয়েছে জল্পনা। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের পরবর্তী প্রধান হয়ে বসতে পারেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত ঋষি সুনাক (Rishi Sunak), এমনটাই মনে করছে সেদেশের রাজনৈতিক মহল।
কে এই ঋষি সুনাক? গত ২০২০ সালে ফেব্রুয়ারি মাসে ঋষি বরিস জনসনের মন্ত্রীসভার সদস্য নির্বাচিত হন। পাশাপাশি তাঁকে এক্সচেনক্যুয়েরের চ্যান্সেলর হিসেবেও নিযুক্ত করা হয়। ব্রিটেনের মন্ত্রীসভায় পূর্ণ মন্ত্রীরই মর্যাদা পান তিনি। শুধু একজন সফল রাজনীতিবিদই নন, ৪২ বছর বয়সী ঋষি সুনাক একজন সফল ব্যবসায়ীও বটে। তাঁর নিজস্ব একটি বিনিয়োগ সংস্থা রয়েছে। সেই সংস্থা ক্যালিফোর্নিয়ার সিলিকন ভ্যালি থেকে আরম্ভ করে ব্যাঙ্গালোরে অবস্থিত বড় বড় কোম্পানিগুলির সঙ্গে কাজ করে চলেছে।
উল্লেখ্য, এর আগে ঋষি ট্রেজারি এবং সংসদের অধীনে মুখ্য সচিব হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। পাশাপাশি স্থানীয় সরকারের রাজ্য সচিব হিসেবেও কাজ করেছেন তিনি। ২০১৫ সালে ইয়র্কশায়ারের রিচমন্ড থেকে তিনি প্রথম ব্রিটেনের সাংসদ হিসেবে নির্বাচিত হন। ঋষি সুনাকের জন্ম ১৯৮০ সালের ১২ মে, হ্যাম্পশায়ারের সাউদাম্পটনে। তাঁর বাবা যশবীর সুনাক পেশায় একজন চিকিৎসক এবং মা ঊষা সুনাক হলেন ফার্মাসিস্ট। তিন ভাইবোনদের মধ্যে ঋষিই সবথেকে বড়। ঋষি সুনাকের ঠাকুরদার নিবাস ছিল পাঞ্জাবে। সেখান থেকে প্রথমে পূর্ব আফ্রিকা এবং পরে ইংল্যান্ডে পাড়ি দেন তাঁরা।
ঋষির উচ্চস্তরের পড়াশোনা লিঙ্কন, অক্সফোর্ড এবং স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে। পড়াশোনায় বরাবরই মেধাবী ছিলেন তিনি। স্নাতক স্তরের পড়াশোনা করেন উইনচেস্টার কলেজ থেকে। তাঁর বিষয় ছিল রাজনীতি, দর্শন এবং অর্থনীতি। ঋষির স্ত্রী আক্সতা মূর্তি বিখ্যাত ইনফোসিস দম্পতি এন আর নারায়ণ মূর্তি এবং সুধা মূর্তির কন্যা। বর্তমানে ঋষি এবং আক্সতা অনুষ্কা, কৃষ্ণা দুই কন্যাসন্তানের বাবা মা। উল্লেখ্য, গত দু বছরে করোনা মহামারির সময় ঋষির পরিকল্পিত ১০ হাজার কোটি টাকার আর্থিক প্যাকেজ ব্রিটেনে বিশেষ জনপ্রিয়তা লাভ করে। জানা যায়, তাঁর ওই প্যাকেজ পরিকল্পনার মূল অংশ ছিল দেশের সমস্ত নাগরিক এবং ব্যবসায়ীদের সাহায্য করা। পাশাপাশি দেশের বেকার, কর্মহীন যুবকদের কথাও ভেবেছিলেন তিনি।
২০১৮ সালে থেরেসা মে প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন ঋষি লোকাল গভর্নমেন্টের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বও সামলেছেন। সেই দায়িত্ব আরও কিছুটা বেড়ে যায় বরিস জনসনের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরে। রাজনীতির দুনিয়ায় প্রবেশের আগে ঋষি গোল্ডম্যান স্যাক্স-এর মতো একটি বিখ্যাত সংস্থায় বেশ কিছুদিন চাকরি করেছেন। এখন বরিস জনসনের পদত্যাগের পর প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে তিনিই অন্যান্যদের চেয়ে এগিয়ে রয়েছেন বলা চলে।
সূত্রের খবর, ঋষি সুনাকের পাশাপাশি পরবর্তী ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী হওয়ার তালিকায় রয়েছে আরও কয়েকটি নাম। তার মধ্যে- ডামিনিক রাব, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমন্ত্রী পেনি মর্ডান্ট, সাজিদ জাভিদ, প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেন ওয়ালেস, প্রাক্তন লেভেলিং আপ সেক্রেটারি মাইকেল গোভ, প্রাক্তন বিদেশমন্ত্রী লিজ ট্রুস, বর্তমান অর্থমন্ত্রী নাধিম জাহাউয়ি, প্রাক্তন মন্ত্রী জেরেমি হান্ট প্রমুখদের নামগুলি উঠে আসছে।
তবে, এর আগে ব্রিটেনের পার্টিগেট কেলেঙ্কারিতে বরিস জনসনের পাশাপাশি বিতর্কে নাম জড়িয়েছিল ঋষি সুনাকেরও। পার্টিগেট কেলেঙ্কারি মামলার জেরে জরিমানাও দিতে হয় ঋষিকে। পাশাপাশি একটি নির্দিষ্ট শাস্তির নোটিশ জারি করা হয় তাঁর জন্য। ২০২০ সালে কোভিড পরিস্থিতির সময় প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের বাসভবনে কোভিডের বিধিনিষেধ লঙ্ঘন করে একটি মদের পার্টি আয়োজন করা হয়েছিল। সেই পার্টির কিছু ছবি, ভিডিও এবং ইমেইল ছড়িয়ে পড়ে মিডিয়ার মাধ্যমে। যা নিয়ে তুমুল বিতর্কের ঝড় ওঠে। বরিস জনসনের পাশাপাশি তীব্র কটাক্ষের মুখে পড়তে হয়েছিল ঋষি সুনাককেও। যার জেরে তাঁর জনপ্রিয়তায় ভাঁটা পড়ে সেসময়। এছাড়া, এর আগে তাঁর স্ত্রী আক্সতার বিরুদ্ধে কর ফাঁকির অভিযোগের জেরে সমালোচনার সম্মুখীনও হতে হয়েছিল তাঁকে।
ব্রিটেনের কর ব্যবস্থায় আক্সতা ‘নন-ডোমিসাইলড’ হিসেবেও চিহ্নিত হয়েছিলেন সেসময়। সম্প্রতি বরিস জনসনের মন্ত্রীসভা থেকে ইস্তফা দেওয়ার পর তিনি ঋষি বলেন, “বরিস সরকারের কাজকর্ম সম্পর্কে আপত্তি রয়েছে আমার। মানুষের প্রত্যাশা ছিল সঠিক ভাবে, দক্ষতার সঙ্গে এবং যথাযথ গুরুত্ব সহকারে সরকার পরিচালিত হবে। কিন্তু তা হয়নি এবং হচ্ছেও না”।
প্রসঙ্গত, এবার ঋষি যদি জনসনের উত্তরসূরী হন তবে তিনি ব্রিটেনের ৭৮ তম প্রধানমন্ত্রী হবেন। এখন সবটাই সময়ের অপেক্ষা।