করোনার দাপটের পর এবার বিশ্ব জুড়ে এক নতুন আতঙ্কের নাম ‘মাংকি পক্স’ (Monkey Pox). এও এক ধরনের ছোঁয়াচে রোগ। বিশ্বব্যাপী খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে এই রোগ। এর সূত্রপাত ঘটেছিল আফ্রিকায়। এখন আফ্রিকা ছাড়াও অন্যান্য মহাদেশে এই রোগের খবর পাওয়া যাচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) প্রতিনিয়তই এই রোগের পরিসংখ্যানের দিকে নজর রাখছে। আফ্রিকার বাইরে প্রথম মাংকি পক্সে আক্রান্ত রোগীর খবর মেলে যুক্তরাজ্যে। এরপর একে একে স্পেন, জার্মানি, পর্তুগাল, ইজরায়েল, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড, কানাডা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, নেদারল্যান্ডের মতো দেশগুলিতে এর প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বক্তব্য অনুযায়ী, এই রোগের সংক্রমণ অস্বাভাবিক। যে সমস্ত দেশগুলিতে এই ভাইরাস ছড়িয়েছে, সেগুলি আদৌ এই ভাইরাসের উৎসস্থল নয়। ইতিমধ্যেই আফ্রিকার বাইরে মোট ৩০ টি দেশে ৭৮০ জনেরও বেশি মাংকি পক্সে আক্রান্ত রোগীর তথ্য মিলেছে। সম্প্রতি উত্তরপ্রদেশের এক ঘটনায় মাংকি পক্স নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে ভারতে। উত্তরপ্রদেশে এক নাবালিকার শরীরে মাংকি পক্সের একাধিক উপসর্গ থাকায় তার নমুনা পাঠানো হয়েছে পরীক্ষা করার জন্য।
উল্লেখ্য, সদ্যই মাংকি পক্সের সতর্কতাজনিত ব্যবস্থার জন্য এক গাইডলাইন বা নির্দেশিকা জারি করেছে কেন্দ্র। মাংকি পক্স কিভাবে রোধ করা যায় তার জন্য একাধিক বার্তা দিলেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডঃ মারিয়া ভান কারখোভ। তিনি মূলত যে দেশগুলিতে এখনও সেভাবে প্রভাব বিস্তার করেনি এই রোগ, তাদের সংক্রমণ রুখতে নানা পরামর্শ দিয়েছেন। ভাইরাস ঘটিত এই রোগ কিভাবে ছড়ায়, কি তার উপসর্গ, রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা কি করবে আর কি করবে না, সেসব সম্পর্কে মানুষকে সচতন করতে একাধিক পরামর্শ দিয়েছেন ডঃ মারিয়া।
তাঁর পরামর্শ অনুযায়ী, যে সমস্ত দেশগুলিতে এখনও মাংকি পক্স থাবা বসাতে পারেনি, তাদের উচিত দ্রুত কিভাবে আক্রান্তকে চিহ্নিত করা যায় সে সম্পর্কে অবগত হওয়া। রোগ যদি ছড়িয়েও পড়ে, তাহলে তা প্রতিরোধ করতে যাবতীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। মাংকি পক্সে আক্রান্ত ব্যক্তির খোঁজ পাওয়া মাত্রই তাঁকে আইসোলেশন বা একেবারে আলাদা করে রাখতে হবে। এবং দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
নয়া নির্দেশিকায় আরও বলা হয়েছে, যারা ফ্রন্ট লাইন ওয়ার্কার বা প্রথম সারিতে কাজ করা স্বাস্থ্যকর্মী, তাদের দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। তার কারণ, রোগীর সংস্পর্শে কিন্তু তাঁরাই প্রথমে আসেন। ফলত, তাঁদের হাতে গ্লাভস, মুখে মাস্ক, এবং পিপিই কিট পরে তবেই রোগীর শুশ্রূষা করা আবশ্যিক। বিশ্ব জুড়ে যাতে এই রোগ মহামারির আকার ধারণ না করতে পারে, সে বিষয়ে আলোচনার জন্য আগামী সপ্তাহে একটি বৈঠক ডেকেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
প্রসঙ্গত, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তরফ থেকে মনে করা হচ্ছে, জলবায়ু দ্রুত পরিবর্তনের কারণে আবহাওয়ার পরিস্থিতি ক্ষণে ক্ষণে বদলাচ্ছে। এর ফলে মানুষ এবং প্রাণীদের খাদ্যগ্রহণের স্বভাবে পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। যার জেরে যেসব রোগগুলি পরিবেশগতভাবে ভঙ্গুর, যেগুলি মূলত প্রাণীদের দেহে ছড়িয়ে পড়ে, সেসব রোগ এখন ক্রমবর্ধমান হারে মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ছে।
ইতিমধ্যেই দেশের সমস্ত বিমানবন্দরগুলিতে বাইরে থেকে আগত যাত্রীদের প্রতি বিশেষ নজর রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নতুন নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, মাংকি পক্সে আক্রান্ত ব্যক্তিদের স্পর্শ করা যাবে না। এমনকি, তাদের ব্যবহৃত জিনিসপত্রেও হাত দেওয়া যাবে না। সংক্রমিত ব্যক্তির সংস্পর্শে এলে সঙ্গে সঙ্গেই সাবান দিয়ে ভালো করে হাত ধুয়ে ফেলতে হবে। সঙ্গে সবসময় স্যানিটাইজার রাখতে হবে। আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে এলে বয়স্ক এবং অন্তঃসত্ত্বা মহিলাদের থেকে দূরত্ব বজায় রেখে চলতে হবে।
তবে হ্যাঁ, মাংকি পক্স নিয়ে অতিরিক্ত উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনও কারণ নেই, এমনটাই বলছেন বিশেষজ্ঞরা। এটা কোনও নতুন ভাইরাস নয়। সাবধানতা অবলম্বন করতেই হবে। এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের প্রাণহানি হয় না বললেই চলে। প্রায় ২১ দিনের মাথায় রোগ নিরাময় হয়ে যায়। সুতরাং, অযথা আতঙ্কিত হবেন না, বরং সতর্ক থাকুন।