এবার কি তবে নারায়ণ মূর্তির জামাতা কনজারভেটিভ পার্টির ভারতীয় বংশোদ্ভূত নেতা ঋষি সুনাকই হতে চলেছেন পরবর্তী ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী! প্রথম দফার ভোটে তিনি ৮৮ ভোটে বিজয়ী হয়েছেন। অধিকাংশের মতে, এই ধারা যদি তিনি বজায় রাখতে পারেন তাহলেই বাজিমাত। উল্লেখ্য, সুনাকের পরেই দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী পেনি মর্ডান্ট। তাঁর প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যা ৬৭।
রাজনৈতিক মহলের দাবি, এই পেনির সঙ্গে আগামীতে বেশ হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হতে পারে সুনাকের। ৫০টি ভোট পেয়ে পেনির পরেই তৃতীয় স্থানে রয়েছেন বিদেশ মন্ত্রী লিজ ট্রাস। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দৌড় থেকে বাদ পড়েছেন নাদিম জাহাবি এবং জেরেমি হান্ট। তারা ৩০টিরও কম ভোট পেয়েছেন বলে খবর। তো যা দাঁড়াল, বর্তমানে কনজারভেটিভ পার্টির নেতৃত্ব এবং প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে অংশগ্রহণ করবেন মোট ৬ জন প্রার্থী।
উল্লেখ্য, তাঁদের মধ্যে ঋষি সুনাক, পেনি মর্ডান্ট, লিজ ট্রাস ছাড়াও রয়েছেন সাবেক মন্ত্রী কেমি বদেনখ, পার্লামেন্টের সদস্য টম টুগেনহান্ট এবং অ্যাটর্নি জেনারেল সুয়েলা ব্রেভারম্যান। এঁদের মধ্যে কেমির প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যা ৪০ এবং টম পেয়েছেন ৩৭টি ভোট। আর, সুয়েলার ঝুলিতে রয়েছে ৩২টি ভোট। জানা যাচ্ছে, কনজারভেটিভ পার্টির মোট ৩৫৮ জন সাংসদ ভোট দিয়েছেন।
সূত্রের খবর, এই ৬ জন প্রার্থীর মধ্যে আরেক দফা ভোট অনুষ্ঠিত হবে বৃহস্পতিবার। এরূপ বেশ কয়েক দফা ভোটের মাধ্যমে চূড়ান্তভাবে নির্বাচন করা হবে দুইজন প্রার্থীকে। মোট কথা, যতক্ষণ না দুজন প্রতিদ্বন্দ্বী থাকছেন ততক্ষণ ভোটপর্ব চলতেই থাকবে। দুজন নির্বাচিত হলে পরে দেশ জুড়ে থাকা কনজারভেটিভ দলের ১ লাখ ৮০ হাজার সদস্য ভোট দান করবেন। সেই চূড়ান্ত ফলাফল জানা যাবে আগামী ৫ সেপ্টেম্বর।
এদিকে জানা গিয়েছে, পরবর্তী ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে ঋষি সুনাক এগিয়ে থাকলেও সেখান থেকে নাম তুলে নিয়েছেন গুজরাতি বংশোদ্ভূত ব্রিটেনের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রীতি পাতিল। তাঁর বক্তব্য, “প্রধানমন্ত্রী হওয়ার এই প্রতিযোগিতায় আমি থাকছি না। আমি চাই জাতীয় স্বার্থকেই প্রাধান্য দিতে। আমার মূল লক্ষ্যই হল ব্রিটেনকে সুরক্ষিত রাখা।”
তিনি আরও বলেন, “একজন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে আমি সর্বদাই আমার দেশ এবং জাতীয় স্বার্থের নিরাপত্তাকে সবার ওপরে রেখেছি এবং আমার মূল উদ্দেশ্য হল, দেশের রাস্তায় যাতে আরও বেশি সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন থাকে, তাঁরা আমাদের দেশের জন্য এক অসাধারণ নিরাপত্তা সেবা প্রদান করতে পারে তার নিরন্তর প্রচেষ্টা করা।”
উল্লেখ্য, গত ২০১০ সাল থেকে যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টের সদস্য হিসেবে রয়েছেন প্রীতি। কনজারভেটিভ পার্টির মুখপাত্র ছিলেন তিনি। একসময় তামাক এবং অ্যালকোহল শিল্পের লবিস্ট হিসেবেও কাজ করেছেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত এই নারী। অংশগ্রহণ করেছেন বেক্সিট আলোচনায়। সাম্প্রতিক কেলেঙ্কারির মুখে বরিস জনসনকে পদত্যাগ করবার আহ্বান জানিয়ে নতুন করে আলোচিত হয়েছেন প্রীতি পাতিল।
অন্যদিকে, পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত সাজিদ জাভিদকে নিয়েও এর আগে জল্পনার সৃষ্টি হয়েছিল। শেষ মুহুর্তে এসে যাবতীয় জল্পনার অবসান ঘটিয়ে তিনিও নাম প্রত্যাহার করে নিয়েছেন বলে সূত্রের খবর। প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের সমালোচনা করে সম্প্রতি পদত্যাগ করেছেন তিনি। এর আগে ২০১৯ সালে তিনি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে সামিল হয়েছিলেন। পাশাপাশি, প্রধানমন্ত্রীর ধর্মীয় স্বাধীনতা বিষয়ক বিশেষ দূত, পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত রেহমান চিশতিও নাম তুলে নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দৌড় থেকে।
উল্লেখ্য, রেহমান চিশতি পেশায় একজন আইনজীবী। গত ২০১০ সাল থেকে তিনি গিলিনহাম এবং রেইনহামের সাংসদ পদে আসীন রয়েছেন। ২০১৯-২০ সাল থেকে তিনি যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর ধর্মীয় স্বাধীনতা বিষয়ক বিশেষ দূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এর আগে ১৯৯৭ সাল থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টোর রাজনৈতিক উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেছেন রেহমান।
এদিন প্রথম ভোটের ফলপ্রকাশের পরেই জেরেমি হান্ট স্পষ্টতই জানিয়েছেন, “আমি এবার ঋষি সুনাককেই সমর্থন করব। ঋষি খুবই ভদ্র মানুষ এবং সোজাসুজি কথা বলতে ভালোবাসেন। নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে তিনি সম্পূর্ণ সততার সঙ্গে কাজ করে থাকেন। তাই, ঋষি পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হলে আমি বেশ গর্বিতই বোধ করব।” অন্যদিকে, সুয়েলা ব্রেভারম্যান ভোটের ফলপ্রকাশের পর বলেন, “আমার সহকর্মীদের আমি বিশেষ ধন্যবাদ জানাই। দ্বিতীয় দফার ভোটে যেতে পারে আমি খুব আনন্দিত।”
উল্লেখ্য, যুক্তরাজ্যের অ্যাটর্নি জেনারেল সুয়েলা ব্রেভারম্যান সকলের নজরে আসেন বেক্সিট সমর্থন করে। জ্বালানি খাতের শুল্ক কম করা এবং কার্বন নিঃসরণ কমানো নিয়ে সরব হয়েছিলেন তিনি। কিন্তু, ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বের হওয়ার চুক্তি বাতিল করার জেরে ওই সরকারের মন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দেন তিনি। ২০১৫ সালে হ্যাম্পশায়ারের ফারেহাম থেকে সাংসদ নির্বাচন হন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে সামিল হওয়া আরেক প্রার্থী কেমি বদেনখ যুক্তরাজ্যের আবাসন মন্ত্রী থাকাকালীন কর কমানোর অঙ্গীকারবদ্ধ হয়েছিলেন। পেশায় তিনি একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। তাঁর ছোটবেলা কেটেছে যুক্তরাষ্ট্র এবং নাইজেরিয়াতে। তিনি তাঁর কর্মজীবন শুরু করেন একজন ব্যাংকার হিসেবে। পরে, যুক্তরাজ্যের সাপ্তাহিক একটি ম্যাগাজিনের পরিচালক হিসেবে কাজ করেন তিনি। গত ২০১৭ সালে সাফর্ন ওয়ালডেন শহর থেকে তিনি সাংসদ নির্বাচিত হন।
ঋষি সুনাকের বড় প্রতিদ্বন্দ্বী পেনি মর্ডান্ট ছিলেন বরিস জনসন সরকারের বাণিজ্য নীতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী। গত ২০১৯ সালে যুক্তরাজ্যের প্রথম নারী প্রতিরক্ষা মন্ত্রী হন তিনি। এর আগে ডেভিড ক্যামেরুন প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন আর্মস ফোর্সড মন্ত্রী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। ২০১০ সাল থেকে পোর্টসমাউথ নর্থের সাংসদ হিসেবে সংসদে দায়িত্ব পালন করছেন।
তবে যাই হোক, প্রথম দফার নির্বাচনে ভারতীয় বংশোদ্ভূত রাজনীতিবিদ ঋষি সুনাক বরিস জনসনের উত্তরসূরী হওয়ার দৌড়ে থাকা কনজারভেটিভ পার্টি বা টোরি দলের আইনপ্রণেতাদের মধ্যে যেহেতু সবচেয়ে বেশি ভোট পেয়ে এগিয়ে রয়েছেন, তাই রাজনৈতিক মহলের অনুমান ব্রিটেনের সংসদীয় ইতিহাসে এই এশিয়ান ব্যক্তিই সেদেশের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন।