একবার হামলা করার পরেও আমেরিকার উপর আবারও আক্রমণের ছক কষেছিলেন আল-কায়দার (Al-Qaeda) প্রয়াত নেতা লাদেন (Osama bin Laden)। ২০১১ সালে ১১ সেপ্টেম্বরে হামলা (9/11 Attacks)আমেরিকার ওপর লাদেন প্রথম আক্রমণ করেছিলেন। এই ঘটনার পর পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদে ওসামাকে নিকেশ করে মার্কিন বাহিনী। সেই ঘটনার পরই লাদেন সম্পর্কে বেশ কিছু গোপন তথ্য হাতে আসে মার্কিন নেভি সিলসের হাতে। সম্প্রতি সেই তথ্যাবলী নিয়ে লাদেনের ভয়ংকর পরিকল্পনা সম্পর্কে জানা গিয়েছে।
মার্কিনসূত্রে খবর, ২০১১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের হামলার কায়দাতেই আরও একবার আমেরিকায় আক্রমণের পরিকল্পনা করেছিলেন লাদেন। লাদেন আগের হামলার মতো এবার কোনও সাধারণ যাত্রীবাহী বিমান অপহরণের কথা না ভেবে প্রাইভেট জেট অপহরণের ছক কষেছিলেন। তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, কোনও ধনী ব্যক্তির ব্যক্তিগত বিমান অপহরণ করে তাকেই অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করবেন। সঙ্গে লাদেন তাঁর অনুগামীদের নির্দেশ দিয়েছিলেন, আমেরিকার যেকোনও রেলপথের অন্তত ১২ মিটার অংশ তাঁরা যেন উড়িয়ে দেয়। ফলস্বরূপ, যাত্রীবোঝাই ট্রেন উলটে গেলে প্রচুর মানুষের মৃত্যু হবে। এমনই, অমানবিকতার মতো পরিকল্পনা করে রেখেছিলেন লাদেন।
নেলি লহাউড (Nelly Lahoud) লাদেন এবং তাঁর সংগঠন আল-কায়দাকে নিয়ে বছরের পর বছর ধরে গবেষণা চালিয়ে গিয়েছেন। সূত্রের খবর, সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছেন, আমেরিকাকে বুঝতে ভুল করেছিলেন লাদেন। তিনি কখনও ভাবতেই পারেননি একটা দিনের হামলার জবাব দিতে মার্কিন প্রশাসন তাঁদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করবেন এবং সটান আফগানিস্তানে অভিযান চালাবে। জানা যায়, নেলি লাদেনের নিকেশ পর্বের প্রায় ১০ বছর আগে থেকে তাঁর লেখা ব্যক্তিগত বিভিন্ন চিঠি ও নথি খতিয়ে দেখেছেন। সেইসব নিরীক্ষণ করেই নেলির এইরকম সিদ্ধান্তের সূত্রপাত।
নেলি জানান, ওসামার লেখা একটি চিঠি পড়ে শিউরে উঠেছিলেন তিনি। সেই চিঠিতেই প্রাইভেট জেট অপহরণ করে ফের আমেরিকার উপর হামলা চালানোর প্রস্তাব দিয়েছিলেন ওসামা। এমনকী, বিমান অপহরণ করা সম্ভব না হলে তার বদলে রেললাইন উড়িয়ে দেওয়ার পরামর্শও দিয়েছিলেন তিনি। তবে দুটি পরিকল্পনার কোনওটিই আর বাস্তবায়িত হয়নি।
সূত্রের খবর, ওসামা ভেবেছিলেন, ” আমেরিকা খুব বেশি হলে রাজনৈতিকভাবে এই হামলার মোকাবিলা করার চেষ্টা করবে। মানুষ রাস্তায় নেমে সরকারের বিরুদ্ধে স্বর চড়াবে। ফলে চাপের মুখে প্রশাসনকে বিপাকে পড়তে হবে। ” একইসঙ্গে, মুসলিম অধ্যুষিত দেশগুলির অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে ওয়াশিংটন যাতে মাথা না ঘামায়, সেই বিষয়ে সরকারের উপর চাপ প্রয়োগ করবে মার্কিন জনতা।
লাদেন এবং তাঁর দল বুঝতেই পারেননি যে, আমেরিকা যে আরও সাংঘাতিক হয়ে উঠবে এবং দেশের আমজনতাও যে তাতে সায় দেবে। এটা তাঁর বিরাট ভুল ছিল বলে তিনি দাবি করেন। জানা যায়, পরিস্থিতি এতটাই জটিল হয়ে উঠেছিল যে টানা তিনবছর কার্যত পালিয়ে এবং নিজের দলের সদস্যদের সঙ্গেও কোনও যোগাযোগ না রেখে বেঁচেছিলেন আল-কায়দার নেতা ওসামা বিন লাদেন। তবে, ২০০৪ সালে তিনি আবার আল-কায়দার জঙ্গিদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং ফের একবার আমেরিকার উপর হামলার পরিকল্পনা শুরু করেন।