প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ডেনমার্ক সফর

0
66

তিন দিনের ইউরোপ সফরে গিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। জার্মানির পর পৌঁছেছেন ডেনমার্কে। সেখানে গিয়ে ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রী মেট ফ্রেডরিকসনের  সঙ্গে সাক্ষাতের পর সেখানে বসবাসকারী ভারতীয়দের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন তিনি। ডেনমার্কের ভারতীয়রা প্রধানমন্ত্রীকে সামনাসামনি দেখে এবং তাঁর বক্তব্য শুনে রীতিমতো উচ্ছ্বসিত। এদিন ডেনমার্কের রাজধানী কোপেনহেগেন বিমানবন্দরে তাঁকে স্বাগত জানাতে এসেছিলেন ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রী। 

ডেনমার্কে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এদিন ডেনমার্কবাসীর উদ্দেশ্যে বলেন, “ভারত এবং ডেনমার্কের সম্পর্ক বেশ মজবুত। ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সদ্য বৈঠক করে দুই দেশের সম্পর্ক আরও বিশেষ ভালো হবে বলে তাঁর বিশ্বাস। কোভিডের সময়কালের কথা উল্লেখ করে এদিন তিনি বলেন, সারা বিশ্বে এর ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। তবে, এক্ষেত্রে ভারত একটি নির্ধারক ভূমিকা পালন করছে। এই সময় যদি ভারত মেড ইন ইন্ডিয়া ভ্যাক্সিন তৈরি না করত, তাহলে পরিস্থিতি আরও সংকটজনক হয়ে উঠত। এই কঠিন সময়ে দাঁড়িয়ে ভারত সারা বিশ্বকে ভ্যাক্সিন এবং ওষুধ প্রদান করেছে। যা বিশেষ গর্বের বিষয়।” 

ডেনিশ প্রধানমন্ত্রী মেট ফ্রেডরিকসনের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী

প্রসঙ্গত, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের আবহেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এই সফরে বেরিয়েছেন। ভারত থেকে রওনা দেওয়ার আগে তিনি বলেছিলেন, তাঁর এই সফরের একটি উদ্দেশ্য হল ইউরোপীয় দেশগুলির সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক মজবুত করা। রাশিয়া ইউক্রেনের যুদ্ধে ভারত রাশিয়ার পক্ষেই থেকেছে। এদিকে ভারতের এই অবস্থানকে আবার পশ্চিমী দেশগুলো মোটেই ভালো চোখে দেখছে না। বলা চলে,  সেই কারণেই যাতে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ভালোভাবে বজায় থাকে সেই কথা মাথায় রেখেই প্রধানমন্ত্রীর এই সফর। প্রধানমন্ত্রী ডেনমার্ক থেকে এরপর যাবেন ফ্রান্সে। সেখানে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইম্যান্যুয়েল ম্যাক্রোঁর সঙ্গে তাঁর বৈঠক আছে বলে জানা গিয়েছে। যা বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে বিশেষজ্ঞরা।

এদিন ডেনমার্কে দুই দেশের রাষ্ট্রপ্রধানের মধ্যে বিভিন্ন দ্বিপাক্ষিক ইস্যু নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে সূত্রের খবর। সেখানে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য বৃদ্ধি এবং পরিবেশ সংক্রান্ত নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। পাশাপাশি, দুই দেশের মধ্যে নয়টি চুক্তিও স্বাক্ষরিত হয়েছে এদিন। জানা গিয়েছে, বেশ কয়েকটি মউ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এদিন ডেনমার্কে ভারতীয় সম্প্রদায়ের সঙ্গে কথা বলার সময় তিনি বলেন ডিজিটাল ইন্ডিয়ার কথা। বলেন, আগে থেকে কেউ আশা করেনি যে ভারত ডিজিটালের দিকে এগিয়ে যেতে সক্ষম হবে। স্টার্ট-আপ বিষয়ে এদিন প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই বিষয় নিয়ে আগে বিশ্বের তালিকায় ভারতকে ধরাই হত না। কিন্তু, বর্তমানে ইউনিকর্নের নিরিখে সারা বিশ্বে ভারত তিন নম্বর স্থানে নিজের জায়গা গড়ে নিয়েছে। 

উল্লেখ্য, এদিন নয়া ভারতে নিয়োগ টানতে নতুন ধরনের বার্তা দিলেন প্রধানমন্ত্রী। সোশ্যাল মিডিয়ার একটি জনপ্রিয় শব্দ হল ‘FOMO’ অর্থাৎ ‘ফিয়ার অফ মিসিং আউট’। এই নিয়ে মোদিজি বলেন, ভারতে এখন যারা বিনিয়োগ করবেন, তারা নিশ্চিত ভাবে বড় সুযোগ মিস আউট করবেন। ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে বলেন, “আমি আগে এই ‘FOMO’ শব্দের অর্থ বিভিন্ন পার্টির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত বলে ভাবতাম। কিন্তু, এখন বুঝতে পারছি যে সেটা আদতে ভারতের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত।”

সূত্রের খবর, প্রধানমন্ত্রী এদিন ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন মারিয়েনবার্গেও গিয়েছিলেন। গিয়েছিলেন ডেনমার্কের রানি দ্বিতীয় মার্গারেটের নৈশভোজের আমন্ত্রণে কোপেনহেগেনের আমানিয়েনবর্গ প্রাসাদে। এদিন ডেনমার্কের ভারতীয়দের কাছে একটি আবদার জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আপনারা প্রত্যেক বছর ৫ জন করে ডেনিশ বন্ধুকে পর্যটক হিসেবে ভারতে যাওয়ার জন্য উৎসাহিত করুন।” তিনি আরও বলেন, “এর আগে শ্বেত বিপ্লব অর্থাৎ দুধ উৎপাদনে ডেনমার্ক আমাদের পাশে ছিল। এবার সবুজ বিপ্লব অর্থাৎ দূষণমুক্ত বিদ্যুৎ উৎপাদনে আমরা অংশীদার হব।” 

ডেনমার্কের রানি দ্বিতীয় মার্গারেটের নৈশভোজের আমন্ত্রণে নরেন্দ্র মোদী