আজ বিশ্ব তামাক মুক্ত দিবস

আরও পড়ুন

আজ বিশ্ব তামাক মুক্ত দিবস। মানব শরীরে তামাকের ভয়ংকর প্রভাব সম্পর্কে সচেতন করতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) ১৯৮৭ সাল থেকে মে মাসের ৩১ তারিখকে বিশ্ব তামাক মুক্ত দিবস হিসেবে পালন করে আসছে। ‘ছাইদানিতে তাজা ফুল’ এমন একটি সাধারণ প্রতীক নিয়ে এই দিবস পালনের সূচনা হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সূত্রে খবর, প্রত্যেক বছর প্রায় ৮ মিলিয়ন মানুষ তামাকের ক্ষতিকর প্রভাবের জেরে মৃত্যুবরণ করে। তাই আজ থেকেই তামাককে না বলুন। 

উল্লেখ্য, আমাদের দেশে ২০১৩ সাল বা তার কাছাকাছি সময় থেকে এই দিবসটি পরিচিতি পায়। বিশ্ব জুড়ে ২৪ ঘণ্টা সময় ধরে তামাক সেবনের সমস্ত প্রক্রিয়া থেকে বিরত থাকতে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে এই দিবসের প্রচলন শুরু হয়। বিশ্বের সর্বোচ্চ তামাকজার পণ্য ব্যবহারকারী ১০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। প্রতি বছর বাংলাদেশে ১ লাখ ৬১ হাজারেরও বেশি মানুষ তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার সম্পর্কিত রোগে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। 

তামাক ব্যবহারকারীদের তামাকজনিত রোগ যেমন – হৃদরোগ, স্ট্রোক, ফুসফুসের ক্যান্সার বা সিওপিডি (COPD) হওয়ার ঝুঁকি ৫৭ শতাংশ বেশি। তামাকজনিত অন্যান্য ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি ১০৯ শতাংশ বেশি। শুধু প্রত্যক্ষ তামাক সেবনই নয়, পরোক্ষ ধূমপানও মানবদেহে অনেক ক্ষতি করে থাকে। ধূমপান এবং ধোঁয়াবিহীন তামাক উভয়ই ভয়াবহ এবং প্রাণঘাতী। বাংলাদেশ সরকার এবার ২০৪০ সালের মধ্যে দেশকে তামাকমুক্ত করার ঘোষণা করেছে। 

বিশ্ব তামাক মুক্ত দিবস উপলক্ষ্যে পুরীর সমুদ্রের পাড়ে সুদর্শন পট্টনায়কের করা স্যান্ড আর্ট

টোব্যাকো অ্যাটলাসের তরফ থেকে জানা গিয়েছে, বাংলাদেশে প্রায় ৩১ শতাংশ বন-নিধনের জন্য দায়ী তামাক। এছাড়া তামাক চাষে ব্যবহৃত অতিরিক্ত কীটনাশক এবং সার বৃষ্টির জলে ধুয়ে জলাশয়ে মিশে দেশের মৎস্য উৎপাদনে বিপুল ক্ষতি করছে। 

মূলত তামাক মুক্ত দিবসের এই দিনে তামাক ব্যবহারের ফলে কি কি বিপদ হতে পারে, তামাক প্রস্তুতকারকদের ব্যবসায়িক অনুশীলন এবং তামাক মহামারি মোকাবিলায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পদক্ষেপের প্রতি বিশ্বব্যাপী দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়। স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের জন্য তারা কি করতে পারে সেই সম্পর্কে মানুষকে শিক্ষিত করবার জন্য যথাযথ গুরুত্ব দেওয়া হয়। 

বিশ্বের মোট তামাকজনিত মৃত্যুর ৬ ভাগের ১ ভাগ হয় ভারতেই। বিশ্বের বৃহত্তম তামাক গ্রাহকও হল আমাদের দেশ। বিশ্ব প্রাপ্তবয়স্ক তামাক সেবন সমীক্ষা ১-এর তরফ থেকে জানা যায়, ১৫ বছর এবং তার অধিক বয়সের মানুষদের মধ্যে ২৬.৭ কোটি মানুষ বিভিন্নভাবে তামাক সেবন করে থাকেন।  যদিও এর দ্বিতীয় সমীক্ষায় তামাক সেবন প্রায় ৬ শতাংশ কমে যাওয়ার তথ্য উঠে এসেছে। 

তামাকের ব্যবহার বন্ধ করতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পাশাপাশি ভারতীয় সরকারও কিছু কর্মসূচি গ্রহণ করেছে এবং তা বাস্তবায়িত করেছে। তার মধ্যে- তামাকজাত পণ্যের মোড়কের দুই পাশের ছবিতে তামাক ব্যবহারের ফলে ক্ষতিকারক দিকটি তুলে ধরা হয়েছে। সিনেমাহলে, টেলিভিশনের বিভিন্ন অনুষ্ঠানের বিপণনে তামাক বর্জন করার প্রয়াস চালিয়ে যাওয়া। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং আন্তর্জাতিক টেলি যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে ভারত সরকারের স্বাস্থ্য এবং পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের যৌথ উদ্যোগে ধূমপান বন্ধ করতে টোল ফ্রি পরিষেবা ‘টোব্যাকো কুইটলাইন‘ চালু করা হয়েছে। এই কর্মসূচির লক্ষ্য হল, যে ব্যক্তি ধূমপান বর্জনে আগ্রহী তাকে ক্রমাগত মেসেজ পাঠিয়ে উৎসাহিত করা। 

তামাকের ব্যবহার জনস্বাস্থ্যের জন্য এতটা ক্ষতিকর হওয়া সত্ত্বেও আমরা যখন চারপাশে তাকাই এবং দেখি প্রায় প্রত্যেকের হাতেই সিগারেট রয়েছে, যা খুবই দুঃখজনক। ধূমপানকারী যে শুধু নিজের ক্ষতি করছে তাই নয়, বরং তার আশেপাশের লোকজনও সেকেন্ড হ্যান্ড স্মোকিংয়ের শিকার হচ্ছেন এবং বিভিন্ন মারণরোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। আমাদের শুধু নিজেদের জন্যেই নয়, আমাদের চারপাশের মানুষ এবং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করতে তামাক পরিত্যাগ করতে হবে। তবেই তামাকমুক্ত সমাজ গড়ে উঠবে। 

- Advertisement -

সম্পর্কিত খবর

- Advertisement -

ট্রেন্ডিং

close